গাজার যুদ্ধবিরতি কি টেকসই হবে?

গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরুর একদিন আগেও হামলা অব্যাহত ছিল। ছবি: এএফপি
গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরুর একদিন আগেও হামলা অব্যাহত ছিল। ছবি: এএফপি

প্রায় ১৫ মাসের নিরবচ্ছিন্ন হামলায় প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহতের পর (যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু) অবশেষে ইসরায়েলি সরকার হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মতি দিয়েছে এবং আজ রোববার সকাল থেকে এটি কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

এই চুক্তির পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (বাইডেন প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে), মিশর ও কাতার। একদিকে যেমন এ কথা ভেবে স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে যে গাজার ভয়াবহ রক্তপাতের অবসান ঘটতে চলেছে, আবার অপরদিকে, বাস্তবতার বিচারে এই চুক্তি কতটা টেকসই, সেটা নিয়েও বড় আকারে দ্বিধা রয়েছে।

অকল্পনীয় হলেও সত্য, বুধবার রাতে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ঐক্যমত্যের ঘোষণা আসার পরও ৩৩ শিশু সহ ১২২ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে। এই তথ্য থেকে আমরা যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভবিষ্যত নিয়ে কি বার্তা পাচ্ছি? এই চুক্তির মাধ্যমে আসা তথাকথিত 'শান্তি' কি টেকসই হবে?

চুক্তির প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ইসরায়েলি জিম্মিরা মুক্তি পাবেন। এ ক্ষেত্রে শিশু, অসুস্থ ও বয়স্ক মানুষদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। অপরদিকে, ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি থাকা হাজারো ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুও মুক্তি পাবেন। যুদ্ধের বেশিরভাগ সময় জুড়ে ইসরায়েল গাজায় মানবিক ত্রাণ প্রবেশ করতে দেয়নি বললেই চলে। চুক্তির শর্তমতে, গাজায় মানবিক ত্রাণ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কথা রয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে কাতার ও জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গাজায় পুনর্নির্মাণ উদ্যোগ পরিচালিত হবে। একইসঙ্গে, ইসরায়েল 'পুরোপুরি' গাজার উপত্যকা ছেড়ে যাবে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার জোট সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য কট্টর ডানপন্থি দলগুলোর অপর নির্ভরশীল। এ কারণে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেবে ইসরায়েল—এ বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। পাশাপাশি, ফিলিস্তিনিদের ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া উত্তর গাজায় ফিরে যেতে দেওয়াটিকে একটি নিষ্ঠুর পরিহাস ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। তাদের বাড়িঘর পুনর্নির্মাণের আগে আশ্রয়ের জন্য কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?

এই পুরো প্রক্রিয়ায় ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করা হবে কী না, সেটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। বিশেষত, যে কোনো ধরনের দৃশ্যমান বা পরোক্ষ উসকানিতে (গাজায়) ইসরায়েলের অস্বাভাবিক মাত্রার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা ও এসব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর নিরলস সমর্থন দেওয়ার ইতিহাস আমাদের সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে। তা সত্ত্বেও, দেরিতে হলেও এই যুদ্ধবিরতি পুরো বিশ্ব—এবং আলাদা করে, ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য অত্যন্ত জরুরি। 

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখন গাজার পুনর্গঠন ও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়ায় পূর্ণমাত্রার সমর্থন যোগাতে হবে। এই যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণাম—হাজারো বিকলাঙ্গ, আহত ও মানসিক আঘাত পাওয়া শিশু, নারী ও পুরূষদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা, মনস্তাত্ত্বিক ও আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। ফিলিস্তিনিদেরকে স্বাধীনভাবে তাদের শাসক ও নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে এবং ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে ইসরায়েল চুক্তির আওতাধীন অঙ্গীকারগুলো যেন কোনো অজুহাত দেখিয়ে ভঙ্গ না করে।  

Comments

The Daily Star  | English

BNP sticks to demand for polls by December

In a meeting with Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night, the BNP restated its demands that the next general election be held by December and the government immediately announce a roadmap to that end.

1h ago