জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ভাগ্য কত দূর 

ছবি: সংগৃহীত

বাংলায় একটি প্রবাদ আছে 'যত দোষ,নন্দ ঘোষ'। সাম্প্রতিক সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ২য় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে দেওয়া ও অস্থায়ী আবাসনসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের আলোচনা সারাদেশে। আন্দোলন হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ আন্দোলন মেনেও নিচ্ছে! তাহলে আবার কেন আন্দোলন? স্বভাবতই এই প্রশ্নটি যে কারো মনে কৌতূহল সৃষ্টি করে। 

বাস্তবতা হচ্ছে- কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে দেখে প্রত্যাশিত দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যাকে বলে প্রহসন। বাধ্য হয়ে তারা আবারও আন্দোলনে নামে, আবারও দাবি মেনে নেয়ার ছলনা-  শিক্ষার্থীরা আবারও ক্লাসে ফিরে যায়, কিন্তু দিনশেষে তারা বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে। এই যে আন্দোলন পরবর্তী কাঁচ কলার নাটক বা  অপরাজনীতি তা অপ্রত্যাশিত। বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে 'যত আন্দোলন, তত কাঁচ কলা' নামেও একটা প্রবাদ চালু করার সময় মনে হয় চলে এসেছে, যার উপযুক্ত প্রয়োগ ঘটানো যাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর, ব্রাহ্ম স্কুল থেকে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সবকিছুতেই পুরান ঢাকার প্রাণকেন্দ্র এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। 

ইতিহাস বলে, ১৮৫৮ সালে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি ব্রাহ্ম ধর্মের মূল মতবাদ সম্পর্কে সাধারণ ছাত্রদের শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় ব্রাহ্ম সমাজের নিজস্ব জায়গায় 'ব্রাহ্ম স্কুল' নামে একটি অবৈতনিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন তৎকালীন ব্রাহ্ম আন্দোলনের নেতা দীননাথ সেন, অনাথবন্ধু মৌলিক, পার্বতী চরণ রায়, ব্রজসুন্দর মিত্র প্রমুখ। প্রতিষ্ঠাতাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকলেও আর্থিক সংকটের কারণে ১৮৭২ সালে এর মালিকানা পরিবর্তন ঘটে। তৎকালীন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী স্কুলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিশোরীলাল রায় চৌধুরী তার বাবা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে এ ব্রাহ্ম স্কুলের নাম পরিবর্তন করে 'জগন্নাথ স্কুল' রাখেন৷ 

পরবর্তীতে ১৮৮৪ সালে জগন্নাথ স্কুলের নাম পরিবর্তন করে 'জগন্নাথ কলেজ' রাখা হয় এবং এ সময়ে এটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজের মর্যাদা লাভ করে। ১৮৮৭ সালে 'কিশোরীলাল জুবিলি স্কুল' নামে এর স্কুল শাখাকে জগন্নাথ কলেজ থেকে পৃথক করা হয় যা বর্তমানে 'কে. এল. জুবিলি স্কুল অ্যান্ড কলেজ' নামে পরিচিত। ১৯০৮ সালে শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্যের ধারাবাহিকতায় জগন্নাথ কলেজ  প্রথম শ্রেণির কলেজের মর্যাদা লাভ করে। ব্রিটিশ সরকার ১৯২০ সালে জগন্নাথ কলেজ আইন পাস করে । কিন্তু ১৯২১ সালে,  এক বছর পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে জগন্নাথ কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে শুধু ইন্টারমিডিয়েট কলেজে রূপান্তর করা হয়। 

তখন এর নামকরণ হয় 'জগন্নাথ ইন্টারমিডিয়েট কলেজ'। জগন্নাথ কলেজের গ্রন্থাগারের ৫০ ভাগ দুর্লভ ও মূল্যবান বই দিয়েই সাজানো হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার। ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় জগন্নাথ কলেজের নিজস্ব সম্পত্তির ওপর নির্মিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল। এভাবেই জগন্নাথ কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বেঞ্চ, টেবিল-চেয়ার নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু হয়৷ 

অনশনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব সম্পত্তি, শিক্ষক, ছাত্র, বই, চেয়ার টেবিল দান করার পর থেকেই যেন শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী এই কলেজের দৈন্যদশা। বন্ধ হয় স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের কার্যক্রম। এরপরে প্রায় ২৮ বছর পর ১৯৪৯ সালে জগন্নাথ কলেজে আবারও স্নাতক কার্যক্রম চালু করা হয়৷ ১৯৬৬ সালে ৬ দফার উপর ভিত্তি করে যে স্বাধিকার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তার অনেকটাই ছিল তৎকালীন জগন্নাথ কলেজকেন্দ্রীক। ১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর মোনায়েম খান জগন্নাথ কলেজকেন্দ্রিক স্বাধিকার আন্দোলনকে রুখতে না পেরে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এক পর্যায়ে জগন্নাথ কলেজকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন। ছয় মাস বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে কলেজ পুনরায় চালু করতে বাধ্য হন। কিন্তু মোনায়েম খান জগন্নাথ কলেজকেন্দ্রিক সরকারবিরোধী আন্দোলনে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নানা কূটকৌশলের মাধ্যমে একে সরকারি কলেজে রূপান্তর করেন এবং কলেজের সমগ্র ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নেন। তখন একে সরকারীকরণ (প্রাদেশিকীকরণ) করে শুধু বিজ্ঞান কলেজে রূপান্তর করা হয়। জগন্নাথ কলেজের বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগকে সরিয়ে মহাখালীতে নতুন 'জিন্নাহ কলেজ' প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা বর্তমানের 'সরকারি তিতুমীর কলেজ'। 

১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পরপরই প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্ম স্কুলটি ইতিহাসের বিভিন্ন পরিক্রমায় সর্বশেষ ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর, জাতীয় সংসদে আইন পাসের মধ্য দিয়ে  বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয় ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে৷ অন্যায়- অবিচারের প্রতি বিদ্রোহ ঘোষণা করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নিজেদের রক্ত দেয়া  থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ নৈপুণ্য দেখিয়েছে দেশ পরিচালনায়ও। ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ রফিক থেকে শুরু করে, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, কিংবা ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট থেকে ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত, ইতিহাসের পরতে পরতে রক্ত দিয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে স্বৈরাচার পতনের পর অনেকের স্বপ্ন আশা- শিক্ষা সংস্কৃতি রাজনীতিতে পরিবর্তন হবে। কিন্তু বাস্তবতায় সে আশার আলোও অধরা। 

বারংবার রক্ত দিয়ে, মেধা দিয়ে, দেশ ও জাতির মুক্তিতে অবদান রাখলেও, নিজেদের অধিকার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে অনবরত। ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হলেও এখনো নেই ছাত্রদের জন্য আবাসিক হল। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী হলও আদায় করতে হয়েছে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে। কাজের দীর্ঘসূত্রিতা ও অনিয়মই যেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্লোগান হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মেডিকেলে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ডাক্তার রয়েছে মাত্র ১/২ জন। মেডিকেল সেন্টারে গেলে সব রোগের ঔষধ পাওয়া যায় প্যারাসিটামল, আর ফ্রিতে ওজন মাপা। একমাত্র ক্যানটিনে ভাতের জন্যও আন্দোলন করতে হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। এমনকি ক্যান্টিনে চেয়ার টেবিলের সুব্যবস্থা করার জন্যও করতে হয়েছে আন্দোলন। মনে আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাশুক নামে এক শিক্ষার্থী ভার্সিটি আসার পথে বাস থেকে পড়ে মারা যায়৷ পরে আন্দোলন করলে প্রশাসন নতুন বাস কিনে। শিক্ষার্থীরা খুশি হয়। কিন্তু পরে দেখা যায়, এই বাস ব্যবহার করছেন শিক্ষকরা!

বিভিন্ন সময় দাবি দাওয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে আলাপ করতে গেলেও 'ফকির, মিসকিন' বলে কটাক্ষ শুনতে হয় শিক্ষার্থীদের৷ কলেজ থাকা অবস্থায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিল অনেকগুলো হল৷ কিন্তু কালের পরিক্রমায় হলগুলো বেদখল হয়ে যায়। হলের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে গড়ে ওঠে আন্দোলন। 

২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি জবির তৎকালীন হাজার-হাজার শিক্ষার্থী আবাসনের দাবিতে পুরান ঢাকাসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ রাজপথ `হল চাই, হল চাই` শ্লোগানে প্রকম্পিত করেছিল। ২০০৯ সালের ঐ দিনে হল উদ্ধারের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। আন্দোলনে পুলিশ ব্যাপক টিয়ার গ্যাস -রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে । পুরান ঢাকাসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ রাজপথ ২৯ দিনব্যাপী পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদ ও `রক্ত নে, হল দে` শ্লোগানে মুখরিত ছিল। কার্যত জবিসহ পুরান ঢাকা অচল হয়ে পড়ে। বন্ধ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ ।

ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করে প্রশাসন। আশ্বাস দিয়ে প্রশাসন খালাস  পায়। ২০০৯ সালের পর থেকে প্রতিবছর ২৭ জানুয়ারি জবির প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো ` হল আন্দোলন দিবস` পালনের ঘোষণা করেছিল৷ এরপর বছরের পর বছর  অতিবাহিত হলেও শিক্ষার্থীদের  প্রাপ্তির  খাতায় ফল ছিল শূন্য । দাবি আদায়ের জন্য তারপর থেমে থেমে হয়েছে হল আন্দোলন ।  তার মধ্যে জবির বড় দুটি হল আন্দোলন হয় ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে । 

২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে হল উদ্ধার আন্দোলনে নামলে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের  আন্দোলনে পুলিশ হামলা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমেদ ত্রিশের অধিক ছররা গুলিতে আহত হয়েছিলেন। গুরুতর আহত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা ফুঁসে উঠলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদখল হওয়া হলগুলো উদ্ধারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠন করা হয়েছিল হল উদ্ধার কমিটি। বেদখল হওয়া হল বা হলের জমিসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সে সভায় উপস্থাপন করা হয়েছিল। এ ছাড়া হলের জমি নিয়ে আইনগত জটিলতা সমাধানের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সেবার। প্রস্তাবিত কোন কাজই না হওয়ায় ২০১৬ সালের আগস্টে আবারও হল আন্দোলন সংগঠিত হয়৷ 

২০১৬ সালের আগস্টের হল আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নে ২০০ একর জমির উপর নতুন করে ক্যাম্পাস নির্মাণের ঘোষণা দেন। তৎকালীন প্রশাসন ঘোষণা দেয় যে নদীর ওপার কেরানীগঞ্জে ছাত্রদের জন্য হাজার আসন বিশিষ্ট হল নির্মাণ কাজের শুরু হবে নতুন বছরের শুরর দিন থেকেই। তবে তা করতে ব্যর্থ হয়েছে জবি প্রশাসন। কেরানীগঞ্জে জায়গা পেলেও দীর্ঘ ৮ বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ আটকে আছে জমি অধিগ্রহণের মধ্যেই। এখন পর্যন্ত নির্মাণ করা হয় নাই সীমানাপ্রচীর, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে যে লেক খনন করা হয়েছিল, নিম্নমানের কাজে ভেঙ্গে পড়েছে এর পাড়গুলো।

এতবড় অবকাঠামো নির্মাণে শ্রমিক কাজ করে হাতে গোণা কয়েকজন। চুরি হয়ে যায় হল নির্মাণে ব্যবহৃত রডও। সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হলো, তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান হলের জন্য বরাদ্দ পাওয়া ২ হাজার কোটি টাকার চেক প্রিন্ট করে ক্যান্টিনে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। সেই ঝুলে থাকা চেকের মতোই ঝুলে আছে নতুন ক্যাম্পাসের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ! কপালপোড়া বিশ্ববিদ্যালয় যাকে বলে! 

জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে নেমে পড়ে। এবারে শিক্ষার্থীদের প্রথম ও প্রধান দাবী হলো সেনাবাহিনীর কাছে অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া। আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত বছরের ১১ নভেম্বরে (২০২৪) শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। এ আন্দোলনের শ্লোগান 'সব শালারা বাটপার, আর্মি হবে ঠিকাদার' সারাদেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। 

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের আশ্বাস পেয়ে অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে আগামী বুধবার অনুষ্ঠেয় মন্ত্রণালয়ের সভায় এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম 'শাটডাউনের' আওতায় থাকবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

এ নিয়ে ১২ নভেম্বর সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন,'জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট সহজে সমাধান যোগ্য। তাই আন্দোলন করার প্রয়োজন ছিল না। এটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। কেরানীগঞ্জে পূণার্ঙ্গ ক্যাম্পাস করার প্রকল্প পাস হয়েছে। মেগা প্রজেক্ট হবে এটি।' জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেই আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এ ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা৷ 

কিন্তু 'যত আন্দোলন, তত কাঁচ কলা' তত্বে ঝুলে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের ভাগ্য। অতঃপর ২ মাস শেষে আবারও আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা। আমরণ অনশনে ১২জনেরও বেশি শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে হাতে স্যালাইন নিয়েই সচিবালয়ের সামনে পুলিশি বাঁধা উপেক্ষা করে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে করা হয়েছে নতুন কমিটি। এবারও কি কাঁচ কলায় আটকে যাবে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের ভাগ্য নাকি খুলবে এ জট! 

উল্লেখ্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের আশ্বাস পেয়ে অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে আগামী বুধবার অনুষ্ঠেয় মন্ত্রণালয়ের সভায় এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম 'শাটডাউনের' আওতায় থাকবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

সাবেক শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও সংগঠক, কোটা সংস্কার আন্দোলন

Comments

The Daily Star  | English

Reform commission reports: Proposals seek to bring youths into JS

Reform commissions on the constitution and election process have both recommended measures that increase opportunities for the youth to run for parliament and become more involved in politics, sparking both hope and criticism.

10h ago