গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি ও ডক্টরেট ডিগ্রির নির্মম পরিণতি

একসময় পিএইচডি ডিগ্রি ছিল জ্ঞানসাধনা ও গবেষণার ব্যাপার, কালের বিবর্তনে পরিণত হয়েছে পানিতে মেশানো দুধের মতো। 

বাংলাদেশের দুই বাহিনী—পুলিশ ও আর্মি (সাবেক প্রধান) নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক তোলপাড় হচ্ছে। কারণ এখন অনেকের জানা। অন্যদিকে উভয়ে উচ্চশিক্ষিত! দুজনে পিএইচডি করেছেন আলাদা আলাদা বিষয়ে। অথচ একসময় পিএইচডি ডিগ্রি ছিল জ্ঞানসাধনা ও গবেষণার ব্যাপার, কালের বিবর্তনে পরিণত হয়েছে পানিতে মেশানো দুধের মতো। 

বাংলাদেশে গত ৫০ বছরে যতজন পিএইচডি ডিগ্রি হয়েছে তার মধ্যে কতজন জ্ঞানের দিগন্ত উন্মোচন কিংবা প্রকৃত গবেষণা করেছেন আর কতজন পদপদবি, খ্যাতিতে 'ডক্টর' বসানোর জন্য করেছেন তা নিয়েও একটা গবেষণা হতে পারে। এতে যথার্থ ডক্টরেট করেছেন তারাও মাঝেমধ্যে লজ্জাবোধ করেন। অযোগ্যদের আদিখ্যেতার ভিড়ে যোগ্যরা আত্মসম্মান নিয়ে জড়সড় হতে বাধ্য।

প্রসঙ্গে বাংলায় ডক্টর বললে প্রথম যার নাম আসে— তিনি মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্। ডক্টর শব্দটি তার নামের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়েছিলো। বাংলার মুসলমানদের মধ্যে যারা এই ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন তার মধ্যে  প্রথম কাতারেই থাকবে তার নাম। তার ৮০টি চিঠি দেখেছি, ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কোনো চিঠিতে নিজের নামের আগে ডক্টর/Dr. ব্যবহার করেননি, সবসময় লিখেছেন 'মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্' ; ইংরেজিতে 'Md. Shahidullah'. ডক্টর লিখলে কী এমন ক্ষতি হতো? চিনতে আরও সুবিধা হতো, পড়তে ভালো লাগতো। কিন্তু বিনয় এই জ্ঞানতাপসকে নিজেই নিজের নামের আগে 'ডক্টর' লিখতে শেখায়নি। অথচ প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি যখন চর্যাপদের গানগুলো নিয়ে ফরাসী ভাষায় থিসিস লিখে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন তখন বাংলার মুসলমান সবে কলেজে যেতে শুরু করেছে!

সৈয়দ মুজতবা আলী উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে কাবুল থেকে জার্মানে যাত্রা করলেন ১৯২৯ সালে। জার্মানের বন বিশ্ববিদ্যালয় (University of Bonn) থেকে "The Origins of the Khojahs and their religious life today" বিষয়ে থিসিস লিখে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৩২ সালে। অথচ জীবনে কখনো নিজের নামের আগে 'ডক্টর' উপাধি ব্যবহার করেননি। উল্টো নিজের ডিগ্রি নিয়ে তামাশা করেছেন এভাবে: "এ-গর্দভ‌ও দর্শন বিভাগ থেকে ডক্টরেট পায়—জার্মানির অন্যতম বিখ্যাত বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।" নিজের ডক্টরেট ডিগ্রির কথা বলতে গিয়ে নিজেকে 'গর্দভ' বলার মতো বিনয় ও রসোত্তীর্ণ মন ছিল মুজতবা আলীর।

কাজী মোতাহার হোসেন— সাহিত্যিক, অধ্যাপক ও দাবাড়ু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শিক্ষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যক্ষ ডক্টর জেনকিংসের সুপারিশে মোতাহার হোসেন শিক্ষক হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন। ধারাবাহিকভাবে করে গেছেন অধ্যাপনা, কত শত ছাত্র তৈরি করেছেন। অথচ তার ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন হয়েছে ১৯৫০ সালে!

অর্থাৎ শিক্ষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের ২৯ বছর পর। কেন এত লম্বা সময়ের ব্যবধান? কারণ, ডিগ্রি অর্জনের প্রতি কোনো লোভ কিংবা উত্তেজনা ছিল না। ছিল শুধু ছাত্রদের ঠিকমতো পড়ানো আর নিজে গবেষণা করা। ২৯ বছর পর‌ও হয়তো থিসিস লিখতেন না, যদি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান সত্যেন্দ্রনাথ বসু তাকে বারংবার বলে আগ্রহী করে না তুলতেন। সত্যেন্দ্রনাথ বসুর আগ্রহ ও পরামর্শে কলকাতায় ডক্টর প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের তত্ত্বাবধানে তিনি সংখ্যাতত্ত্ব (Statistics) বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।

"Design of Experiments" বিষয়ে থিসিস লিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫০ সালে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ততদিনে তাঁর চাকরির মেয়াদ প্রায় ফুরিয়ে গেছে! অথচ তাঁর খ্যাতিতে এই ডিগ্রি থাকা বা না-থাকা কোনো প্রভাব বিস্তার করেনি। ১৯২১ থেকে ৫০— এই ২৯ বছরে অধ্যাপনার প্রতি তাঁর নিষ্ঠা, গবেষণার প্রতি আন্তরিকতার মাঝে ডক্টরেট ডিগ্রির অভাব কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ডিগ্রি অর্জনের আগে যেসব কারণে বিখ্যাত ছিলেন, পরেও ঠিক তাই। কখনো দেখা যায়নি নামের আগে 'ডক্টর' ব্যবহার করতে। অথচ তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা বলা যায়!

গোলাম মকসুদ হিলালী এমন একজন ব্যক্তি যিনি বিনয় দিয়ে পাণ্ডিত্যকে ঢেকে রেখেছিলেন। বাঙালি মুসলমান যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা চিন্তাও শুরু করেনি তখনই তিনি ১৯২৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারসি ভাষায় এম. এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে ২য় স্থান অধিকার করেন। ১৯৩২ সালে আরবি ভাষায় এম. এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। আরবি ও ফারসির অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা করেছেন করটিয়া সা'দত কলেজ, কৃষ্ণনগর, প্রেসিডেন্সী কলেজ এবং চট্টগ্রাম কলেজে। 

সর্বশেষ রাজশাহী কলেজের অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করা এই পণ্ডিত ১৮টি ভাষা জানতেন। অথচ কোনো বাগাড়ম্বরতা ছিল না। খ্যাতি পাবার সমস্ত গুণ থাকা সত্ত্বেও বিনয়ের কোঠরে আবদ্ধ করে রেখেছিলেন সেসব। আশ্চর্যের বিষয়, তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৪৯ সালে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Iran and Islam : Their Reciprocal Influence শিরোনামে থিসিস লিখে তিনি অর্জন করেন এই ডিগ্রি। অথচ, ততদিনে তার অধ্যাপনা জীবনের হায়াত নিভু নিভু! পরবর্তী জীবনেও এই ডিগ্রি নিয়ে তার কোনো বিশেষ মাথাব্যথা ছিল না, বরং উল্টো চিত্র‌ই দেখা যায়।

গোলাম মকসুদ হিলালী তখন সিরাজগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ। কলেজের শিক্ষার্থীদের আয়োজিত এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দাওয়াতনামার কার্ডে তার নামের আগে 'ডক্টর' লিখেছিলেন। দেখে তিনি 'রাগে লাল' হয়ে গেলেন। ছাত্রদের হয়ে সকল শিক্ষক এজন্য ক্ষমা চাইলেন এবং তাকে অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হলো। অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি সমবেত সকলের কাছে ক্ষমা চাইলেন।

এমন নয় যে, তিনি ডক্টরেট করেননি; এ ঘটনার দশ বছর পূর্বেই তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন। তার থিসিস দেখে ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক বলেছিলেন, "এমন পাণ্ডিত্যপূর্ণ অভিসন্দর্ভ সচরাচর দেখা যায় না।" তারপরও তার নামের আগে 'ডক্টর' লেখা রীতিমতো ক্ষমাযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করেছেন তিনি। কতটা বিনয়ী হলে এমনটা সম্ভব!

আর হাল-আমলে দেখা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। নামের আগে ডক্টর না লেখার কারণে অনেকে অনুষ্ঠান বর্জন করেন, প্রকাশ করেন ক্ষোভ। নামের আগে এই উপাধিটি নিজ হাতে লেখার মতো কাজ করতেও দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি যে কাজটি করতে দেখা যায় তা হলো, পাইরেসি করে, কয়েকজনের গবেষণাপত্র থেকে কাট-পেস্ট করে মিলিয়ে কিংবা কাউকে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ করে থিসিস লিখিয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি নেওয়া হচ্ছে অহরহ। বাংলাদেশের কতজন ডক্টরের থিসিস প্রকাশিত হয়েছে/হয়? কেন হয় না? অনেক সময় প্রকাশক থেকে আগ্রহ প্রকাশের পর‌ও থিসিস পাওয়া যায় না কেন? গোমর ফাঁস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

২০২২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষক আবুল কালাম লুৎফুল কবীরের পিএইচডি ডিগ্রি বাতিল করা হয়, থিসিসে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শাস্তি হিসেবে সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপকে অবনতি ঘটে তার। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, থিসিসের ৯৮% ছিল নকল! চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাতিল করা হয়েছে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দুই শিক্ষকের ডক্টরেট ডিগ্রি।

ঢাবির সংগীত বিভাগের অধ্যাপক মহসিনা আক্তার খানমের থিসিস ছিল 'নজরুল-সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার' শিরোনামের উপর। জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা অ্যাকাডেমির (নায়েম) সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিসের অভিযোগের মাধ্যমে জানা যায়, তার থিসিসের যে গ্রন্থরূপ সেখানে ২৮০ পৃষ্ঠার মধ্যে ১৬৯ পৃষ্ঠাই তার রচনা নয়; স্ক্যানকৃত স্বরলিপি কিংবা অন্যের উদ্ধৃতিতে পূর্ণ। যদিও মহসিনা আক্তার বলেছেন, এই অভিযোগ 'প্রতিশোধমূলক' ও 'আত্মপ্রচারণামূলক'। 

২০১৩ সালে ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. নূর উদ্দিনের পিএইচডি ডিগ্রি প্রত্যাহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কারণ, তিনি 'মিথ্য ও ভুল তথ্য দিয়ে গবেষণাপত্র' জমা দিয়েছিলেন। এক‌ই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দীনের বিরুদ্ধে এমফিল ও পিএইচডি থিসিসে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ উঠেছিল ২০২০ সালে, চলতি বছর আবারও উঠেছে এক‌ই অভিযোগ। কিন্তু তার বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। হলে হয়তো এক‌ই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি দেখবো! 

ডক্টরেট ডিগ্রির এহেন দুরবস্থা নতুন নয়, বরং খানিকটা পুরনোই। তাই তো বছর পঞ্চাশেক আগেই প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ 'ডক্টরেট প্রশস্তি' নামক এক গল্পে লিখেছেন: "রবি বাবুর নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাকে ডকটোরেট দেওয়ার জন্য পীড়াপাড়ি শুরু করে দিয়েছিল। আমি অমন কিছু পেলে আমাকে নিয়েও দেশী বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তেমনি কাড়াকাড়ি শুরু করে দিবে। কাজেই আমার পক্ষে তখন থিসীস দাখিলের আর কোন কথাই উঠবে না। অবশ্য আমার বেলায় ডক্টরেট তখন এমন সস্তা হয়ে পড়বে যে ও-উপাধি গ্রহণ করে আদৌ আমি কোন বিশ্ববিদ্যালয়কে গৌরবান্বিত করতে রাজী হব কি না, সে আমাকে গভীরভাবে বিবেচনা করে দেখতে হবে।"

বাংলাদেশের প্রশাসনিক দুর্নীতি-পরায়ণ কর্মকর্তাদের অধিকাংশ‌ই ডক্টর! বর্তমানে সমালোচিত, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ‌ও কিন্তু ডক্টরেট ডিগ্রিধারী। কিন্তু তাদের ডক্টরেট ডিগ্রি না নতুন কোনো জ্ঞান, প্রশ্ন উৎপাদন করতে পেরেছে আর না পেরেছে নৈতিক সততার যোগান দিতে।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সালাহ্উদ্দীন আহ্‌মদ, রেহমান সোবহান, র‌ওনক জাহান, কামাল হোসেনের মতো পণ্ডিতরা ছিলেন তার শিষ্য। জ্ঞানচর্চার জন্য ডক্টরেট ডিগ্রির অভাব তাঁর কাছে ছিল তুচ্ছ বিষয়, যে কারণে থিসিসটি প্রকাশের তেমন আগ্রহ তার ছিল না।

সত্যিকার অর্থে যারা গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তাদেরকে কতটুকু মূল্যায়ন করা হয় ওই ভুয়া ডিগ্রিধারীদের তুলনায়? যদি একাডেমিক জায়গা থেকে যথার্থ মূল্যায়ন করা হতো তাহলে বোধহয় টাকায় কেনা কিংবা চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে থিসিস করে পিএইচডি ডিগ্রি হাসিলের মিছিল আমাদের দেখতে হতো না। প্রসঙ্গে আসে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের কথা। ১৯৪৫ সালে লন্ডন স্কুল অ্যান্ড পলিটিকাল সায়েন্সে পিএইচডির জন্য ভর্তি হন তিনি। তার সুপারভাইজার ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  বিশ্ববিখ্যাত পণ্ডিত অধ্যাপক হ্যারল্ড জে লাস্কি। বিষয় ছিল: Political Parties in India. (২০২২ সালে প্রকাশিত হয়েছে, UPL থেকে।) 

আব্দুর রাজ্জাক পূর্ণাঙ্গ থিসিস জমাদানের পূর্বেই ইন্তেকাল করেন অধ্যাপক লাস্কি। পরবর্তীতে তিনি থিসিস জমা দিয়েছিলেন এবং পরীক্ষকরা কিছু সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সংশোধন না করে দেশে ফিরে আসেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি সেই থিসিস নিয়ে আর কোনো কাজ করেননি। থিসিস করেও আজীবন রয়ে গেলেন 'অ-ডক্টরেট'; কিন্তু আজ‌ও জ্ঞানতাপস বললে প্রথমেই উচ্চারিত হয় তার নাম। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সালাহ্উদ্দীন আহ্‌মদ, রেহমান সোবহান, র‌ওনক জাহান, কামাল হোসেনের মতো পণ্ডিতরা ছিলেন তার শিষ্য। জ্ঞানচর্চার জন্য ডক্টরেট ডিগ্রির অভাব তাঁর কাছে ছিল তুচ্ছ বিষয়, যে কারণে থিসিসটি প্রকাশের তেমন আগ্রহ তার ছিল না।

অথচ, গত বছর তার থিসিস প্রকাশের পর দেশের পড়ুয়া মহলে ঝড় বয়ে গেছে। কারণ ডক্টরেটের জন্য মনোনীত না হলেও তাতে আছে এমন সব তত্ত্ব, তথ্য আর ব্যাখ্যার সমারোহ যা দিয়ে আরও কিছু থিসিস তৈরি হয়ে যেতে পারে। তিনি দেখিয়েছেন, জ্ঞানচর্চার জন্য, গবেষণার জন্য ডক্টরেট কোনো জরুরী বিষয় নয়, বরং জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে অদম্য স্পৃহা আর গবেষণার প্রতি আন্তরিকতা থাকলে জ্ঞানের আলোয় নিজে আলোকিত হয়ে সমাজকেও আলোকিত করা সম্ভব। ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রির এই স্রোতেও মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, কাজী মোতাহার হোসেন, গোলাম মকসুদ হিলালী এবং আব্দুর রাজ্জাকরা হয়ে উঠেন আশার আলো।

Comments