ডর্ম নাকি অফ-ক্যাম্পাস হাউজিং: আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কোনটি বেশি সুবিধার
নিজের এতদিনের ঘর, অভ্যাস ছেড়ে নতুন এক দেশে যাওয়া এবং সেখানে নতুন করে আবার ঘর বা থাকার জায়গা মনমতো গুছিয়ে নেওয়াটা কিছুটা সময়ের ব্যাপার। আমরা অনেকেই আছি যারা কখনো নিজ পরিবার ছেড়ে থাকিনি কিংবা কিছুটা খুঁতখুঁতে স্বভাবের।
নিজের পরিচিত ঘরদোরের নানান জিনিস ফেলে নতুন শুরু করতে হবে, বিষয়টা ভাবলে কিছুটা মন খারাপ আর অনিশ্চিত বোধ হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও এই নতুন ঘর কিংবা ডর্মটাই আবার পরিচিত হয়ে উঠে।
তবে হাউজিং বা অ্যাকোমডেশন ঠিক করার আগে কয়েকটা বিষয় সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এই প্রস্তুতি শুরু করা উচিত দেশে থাকতেই। সবার প্রথমে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ক্যাম্পাস থেকে আপনার থাকার জায়গাটি কতটা দূরত্বে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আবহাওয়া অনুমান করা বেশ কঠিন। বিশেষ করে বৃষ্টি এবং তুষারপাতের সময়।
তখন সাধারণ পরিবহন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাসের সুযোগ সব সময় নাও থাকতে পারে। তাই ক্যাম্পাস বা নির্দিষ্টভাবে ফ্যাকাল্টির কাছে ডর্ম বা বাসা থাকাটা বেশ সুবিধার। এতে দিনের সময়ও নষ্ট কম হয়। একইসঙ্গে আপনার থাকার জায়গাটি এবং তার আশপাশের এলাকা কতটা নিরাপদ, আপনার মানসিক স্বাস্থ্য, পড়াশোনার জন্যও কতটা উপযোগী সেই সম্পর্কে জেনে নেওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ।
এতকিছুর পর যেই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো আপনার নতুন বাসার রেন্ট আপনার ফান্ডিংয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না। সাধারণত নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যে হাউজিং রেন্ট পূরণ না করলে অ্যাডিশনাল ফি হিসেবে আরও রেন্ট জমা হতে থাকে।
এরপর থাকে আনুষঙ্গিক সার্ভিস চার্জ। একটা বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন, হাউজিং ওয়েবসাইটগুলোতে এসব অ্যাডিশনাল ফি কিংবা সার্ভিস চার্জের বিষয়গুলো দেওয়া থাকে না। এ জন্য হাউজিং এর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা আছেন, তাদের সঙ্গে সরাসরি কিংবা ই-মেইলে যোগাযোগ করে বিষয়গুলো জেনে নেওয়া প্রয়োজন। সম্ভব হলে পরিচিত কেউ ওখানে থাকলে তার মাধ্যমে জেনে নেওয়া।
যেই বিষয়টি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই ঝামেলার, তা হলো এই হাউজিংগুলোর লিজ পলিসি। কোনো কারণে, হতে পারে রুমমেট কিংবা এমনকি নিরাপত্তাজনিত কারণেও আপনি যদি লিজের সময়সীমার আগেই বাসা ছেড়ে দিতে চান, তখন এই ঝামেলার শুরু হয়। লিজ পলিসিতে খুব কঠোরভাবেই শর্ত দেওয়া থাকে, যত যাই হোক, নির্দিষ্ট সময়ের আগে এই হাউজিং ছেড়ে গেলেও আপনাকে পুরো সময়ের ভাড়াটাই দিতে হবে। তাই আমার অনেক সহপাঠীকে দেখেছিলাম পুরো এক বছর নয়, বরং প্রতি মাস হিসেবে লিজের সুযোগ আছে এমন হাউজিংয়ে থাকতে।
আরেকটি বিষয় হলো, অনেকেই ক্যাম্পাসের ডর্মের চেয়ে বিভিন্ন হাউজিংয়ে লিজ নিয়ে থাকেন। এর অন্যতম কারণ হলো, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ডর্মগুলো সাধারণত বেশ ব্যয়বহুল। কারণ ক্যাম্পাসের ডর্ম আসলে নিশ্চিত করে, একজন শিক্ষার্থীর যা প্রয়োজন রয়েছে, তার সবকিছু মিলিয়ে থাকবার একটি পরিবেশ তৈরি করতে। তাই ডর্মে থাকা কিছুটা ব্যয়বহুলই। সে তুলনায় অফ-ক্যাম্পাসে থাকবার খরচ তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু অনেকেরই অভিজ্ঞতা, শুরুর দিকে কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও ক্যাম্পাসের কাছে ডর্মে থাকাটাই তুলনামূলক সুবিধাজনক। এর বেশ কিছু কারণ আছে।
প্রথমত, ভিনদেশের একজন শিক্ষার্থীর জন্য নতুন এক শহরের সবকিছু বুঝে নিতেও কিছুটা সময়য়ের প্রয়োজন। আর শুরু দিকের সময়টায় দরকার মানসিক ও নানান সহযোগিতারও। সাধারণত ডর্মে দেশ-বিদেশের অনেক শিক্ষার্থী হওয়ায় একটা সহমর্মিতা, বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সহজেই। এই পরিবেশটা আপনার পড়াশোনা, গবেষণা, এমনকি নিজের বাছবিচার অনুযায়ী রান্না, খাবার সবকিছুর জন্যই বেশ উপযোগী। আর সবচেয়ে সুবিধার হলো, অফ-ক্যাম্পাসের হাউজিংগুলোর মতো ডর্মগুলোয় লিজ পলিসি এতটা ঝামেলার এবং দীর্ঘমেয়াদী না। শিক্ষার্থীর সুবিধা-অসুবিধা অনুযায়ী ক্যাম্পাস হাউজিং কর্তৃপক্ষ বেশ দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়।
আরেকটি বিষয়, ডর্ম ক্যাম্পাসের কাছে হওয়ায় আপনার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপাতির দোকান, কিচেন বা ক্যান্টিন, বাস স্টপেজ পেয়ে যাবেন পায়ে হাঁটা দূরত্বেই। তাই শুরুর সময়টা ডর্মে কিছুদিন থেকে পরে অনেকেই অফ-ক্যাম্পাসে অ্যাকোমডেশন নিয়ে থাকে।
Comments