তৈরি পোশাকের বিদেশি ক্রেতা ফিরতে শুরু করেছে

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৫ শতাংশ
স্টার ফাইল ফটো

তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক ক্রেতারা আগামী মৌসুমের কার্যাদেশ নিয়ে বাংলাদেশের বাজারে ফিরতে শুরু করেছে। সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও প্রধান শিল্প অঞ্চলগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পোশাক শিল্পে অচলাবস্থা ছিল।

স্থানীয় পোশাক ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পশ্চিমা ক্রেতারা এখন কারখানা পরিদর্শন ও উৎপাদনের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে।

তারা বলেন, পশ্চিমা ক্রেতারা আগামী শরৎ ও শীত মৌসুমের জন্য কার্যাদেশ বা অর্ডার দিচ্ছেন।

এনভয় লিগ্যাসির চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'আসন্ন মৌসুমের কার্যাদেশ প্রবাহে বড় ধরনের কোনো চ্যালেঞ্জ আমি দেখছি না। তারা এখান থেকে অর্ডার সরায়নি।'

তিনি জানান, তবে উৎপাদনে বিলম্ব হওয়ায় অনেক কারখানাকে এয়ার শিপমেন্টে যেতে হচ্ছে। এতে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'সরবরাহকারী ও খুচরা বিক্রেতা উভয়ের জন্য স্থিতিশীল উত্পাদন পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'

সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের শুরুতে শ্রমিক বিক্ষোভের সময় প্রধান শিল্প অঞ্চলগুলোর পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এতে কিছু গ্রীষ্মকালীন অর্ডার ইতোমধ্যে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে চলে গেছে।

কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, তারল্য সংকট, মার্কিন ডলার সংকট ও গ্রাহকের টাকা পরিশোধের সক্ষমতা কমায় কিছু ব্যাংক ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না। এতে পোশাক ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউরোপের একজন ক্রেতা জানান, 'অস্থিরতার কারণে তাদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে কোনো অর্ডার অন্যদেশে স্থানান্তর করেনি।'

তিনি আরও বলেন, 'উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে, কিন্তু এখনো কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। কারণ শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলো নিয়ে আমাদের সদরদপ্তর উদ্বিগ্ন।'

তিনি জানান, ক্রেতারা অর্ডারের পরিমাণ কমানোর পরিকল্পনা না করলেও সামগ্রিক পরিমাণ হয়তো আগের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে না। কারণ যেকোনো অস্থিরতার কিছু নেতিবাচক পরিণতি থাকে।

ডেকো লিগ্যাসি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কল্পন হোসেন বলেন, 'শিল্পাঞ্চলগুলোতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে এবং কারখানাগুলো উৎপাদন শুরু করেছে। আমরা ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি।'

কল্পন হোসেনের কারখানা সেপ্টেম্বরে ২৩ দিন এবং অক্টোবরে ৫ দিন বন্ধ ছিল। ফলে দৈনিক ৮০ হাজার পিস ট্রাউজার ও জ্যাকেট উৎপাদন কমে যায়, যার বাজারমূল্য ৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

তিনি বলেন, 'ক্রেতারা স্থিতিশীলতা চায়, কারণ তাদের সময়মতো পণ্য চালান ও মুনাফা নিশ্চিত করতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, স্থিতিশীল ব্যবসা ও রাজনৈতিক পরিবেশ অব্যাহত থাকলে আগামী মৌসুম ব্যবসার জন্য ভালো হবে বলে আশা করছি।

অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেন, 'এখন পর্যন্ত আমার কোনো ক্রেতা কার্যাদেশ বাতিল করেনি।'

শরীফ জহির বলেন, তিনি আশাবাদী আগামী মৌসুমগুলো ভালো যাবে। কারণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ক্রেতারা এখন অর্ডার বাড়াচ্ছেন।

শ্রমিক অসন্তোষ মূলত ঢাকার আশেপাশের শিল্পাঞ্চলকে কেন্দ্র করে হয়েছে। ফলে অন্যান্য এলাকায় অবস্থিত পোশাক কারখানাগুলোর উৎপাদন অনেকটাই সচল ছিল।

দেশ গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিদ্যা অমৃত খান বলেন, ঢাকার অন্যান্য শিল্পাঞ্চলের তুলনায় চট্টগ্রামের পরিবেশ তুলনামূলকভাবে শান্ত থাকায় আগামী মৌসুমের জন্য আমার ওয়ার্ক অর্ডার রয়েছে।

তিনি বলেন, ক্রেতাদের আস্থা ধরে রাখতে স্থিতিশীলতা ও স্বাভাবিক ব্যবসায়িক পরিবেশ ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার একটি পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, শিপমেন্ট বিলম্বের কারণে ক্রেতারা ছাড় দাবি করছেন।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও তীব্র প্রতিযোগিতা ছাড়াও পোশাক প্রস্তুতকারক ও টেক্সটাইল মিল মালিকদের সামনে অন্যান্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাভাবিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ।

লিটল গ্রুপের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, গ্যাস সংকট ও লোডশেডিংয়ের কারণে তাদের সুতা উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমে গেছে। আশুলিয়ায় তার মিলে প্রতিদিন ২৪ হাজার পাউন্ড সুতা উৎপাদন হলেও এখন তা ১২ হাজার পাউন্ডে নেমে এসেছে।

তার মতে, গার্মেন্টস অর্ডার বৃদ্ধির সাথে সাথে সুতার চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ একটি বড় বাধা হতে পারে।

ক্লথস আর আসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিয়াও সেইন থাই ডলি বলেন, শ্রমিক অসন্তোষ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

তিনি বলেন, 'তবে এখন আমরা ও ক্রেতারা উভয়ই আশাবাদী হতে চাই।'

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, অস্থিরতার কারণে শরতের পোশাক উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে।

তিনি বলেন, পুনরুদ্ধার হওয়া ব্যবসায়িক পরিবেশ ও সময়সীমা পূরণে অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে আশ্বস্ত করতে বিজিএমইএ আগামী সপ্তাহে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠক করবে।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

13h ago