ব্যাংকে নয়, হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বাড়ছে

বাংলাদেশ ব্যাংক, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক, তারল্য ঘাটতি,
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া কিছু ব্যাংকের ভগ্ন দশা ব্যাংক খাতে মানুষের আস্থা কমিয়েছে। ফলে ব্যাংকিং খাতের বাইরে মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসের সঙ্গে তুলনা করা হলে জুলাই-আগস্টে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ প্রায় ১ শতাংশ বা ২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ২ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, জুলাইয়ে ব্যাংকগুলোর বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকা। আগস্টে এই ধারা অব্যাহত ছিল এবং টানা নয় মাস ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন থেকে ব্যাংকিং খাতের বাইরে নগদ টাকা কমতে শুরু করে, নভেম্বর শেষে তা দাঁড়ায় ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকায়। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের এক মাস আগে অর্থাৎ গত বছরের ডিসেম্বরে এই প্রবণতা উল্টে যায়। সেখান থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত আছে।

২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকের বাইরে টাকার পরিমাণ বেড়েছে ১৭ শতাংশ বা ৪৪ হাজার কোটি টাকা।

এজন্য ব্যাংকাররা ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির চাপ ও কিছু ব্যাংকের প্রতি আমানতকারীদের আস্থার ঘাটতিকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

খাত সংশ্লিষ্টদের অনেকে মনে করছেন, এ ছাড়া ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের সংকটও একটি অন্যতম কারণ হতে পারে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির মূল কারণ ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থার অভাব

তিনি বলেন, দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে, যার ফলে তারা তাদের জমানো টাকা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। এছাড়া দেশের অর্থনীতিতে কালো টাকার উপস্থিতি পুরো বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

'পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষকে প্রতিদিনের ব্যয় মেটাতে আগের চেয়ে বেশি খরচ করতে হচ্ছে,' বলেন তিনি।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান মন্তব্য করেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে টাকা চলে যাওয়ার এই প্রবণতা উদ্বেগজনক। এ কারণে আমাদের লক্ষ্য ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে যাওয়া।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষের পরিসংখ্যানের সঙ্গে তুলনা করলে জুলাই-আগস্টে ব্যাংকে মোট আমানত প্রায় ১ শতাংশ বা ১০ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা কমে ১ লাখ ৭৩ হাজার ১০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার বেশি দিলেও এখনো অনেক গ্রাহক ব্যাংকে টাকা রাখতে আগ্রহী নন।

তারা উল্লেখ করেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ বাড়ার এই প্রবণতা মুদ্রা সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলে। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে এখানে নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক পরিবেশের ওপর নির্ভর করে ব্যাংকের বাইরে টাকার পরিমাণ ওঠানামা করে।

তিনি আরও বলেন, 'করোনা মহামারির সময় আমরা একই প্রবণতা দেখেছি। তখন মানুষ ব্যাংকে টাকা না রেখে নিজের কাছে রেখেছিল।'

'রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে তাদের অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হতে পারে কিনা তা নিয়েও অনেকের মধ্যে আশঙ্কা আছে,' বলেন আনিস এ খান।

তার ভাষ্য, 'মূলত যারা অবৈধভাবে আয় করছেন বা করেছেন তারা ভয়ে ব্যাংকের পরিবর্তে ঘরে টাকা রাখতে চান। আরেকটি বড় কারণ হলো, কিছু ব্যাংক আমানতকারীদের জমানো টাকা ফেরত দিতে পারছে না তাই মানুষ ব্যাংকের ওপর আস্থা হারাচ্ছে।'

এমটিবি ব্যাংকের মাহবুবুর রহমান সতর্ক করে দিয়ে বলেন, মানুষ এভাবে নিজেদের কাছে নগদ টাকা রেখে দিলে দুর্বল ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট আরও বাড়বে। এতে আমানত ও ঋণ সুদহার আরও বাড়তে পারে।

এই সমস্যা সমাধানে ব্যাংকের প্রতি মানুষে আস্থা ফিরিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Government notification banning Awami League

Govt issues gazette notification banning AL activities

A Public Security Division joint secretary confirmed the matter

1h ago