নাকের পলিপ কী, কেন হয়

নাকের পলিপ
ছবি: সংগৃহীত

নাকের পলিপ নিয়ে সমাজে ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। কোনটি নাকের পলিপ, সে সম্পর্কে না জানার কারণে ভুল চিকিৎসা নিচ্ছেন না তো?

নাকের পলিপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবু হানিফ।

নাকে পলিপ কী ও কেন হয়

অধ্যাপক আবু হানিফ বলেন, নাকের মধ্যে যে টারবিনেট থাকে, অনেকে সেটিকে পলিপ বলে। নাকের ভেতরে হালকা গোলাপি রঙের দুইটি মাংসপিণ্ড দেখা যায়, এটা কিন্তু পলিপ নয়, এটা টারবিনেট। আর টারবিনেট নাকের অতিপ্রয়োজনীয় একটি অংশ। নাকের যে গঠন তাকে টারবিনেট বলে, যা নাসারন্ধ্রের ভেতরে বাতাস চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে এবং একইসঙ্গে বাতাসকে গরম ও আর্দ্র করে তোলে। টারবিনেট পলিপ নয়।

পলিপ হচ্ছে এক ধরনের রোগ। নাকের যে লাইনিং মিউকাস মেমব্রেন আছে, সেটার মধ্যে অনেক সময় ইডেমা হয়। ইডেমা বলতে তরল জমে নাকের ভেতরে ফোলাভাব বোঝায়। ইডেমা হয়ে যখন ঝুলে পড়ে, তখন পলিপের মতো তৈরি হয়। এটি দেখতে অনেকটা আঙুরের মতো, নরম এবং এর ভেতরে তরল জাতীয় কিছু পদার্থ থাকে। এগুলো নাকের ভেতরে উপর থেকে ঝুলতে থাকে।

পলিপ যেকোনো বয়সেই হতে পারে। নাকে পলিপ হয় সাধারণত অ্যালার্জি থেকে। ঠান্ডা, সর্দি, হাঁচি যাদের বেশি থাকে তাদের অ্যালার্জি হয়। যেখানে ধুলোবালি বেশি, ঠান্ডা পরিবেশ, যাদের নাকে সর্দি, হাঁচি বেশি হয় তাদের নাকে পলিপ বেশি হয়।

নাকে পলিপ দুই ধরনের হয়। যেমন: এন্ট্রোকোয়ানাল পলিপ, যেটা শিশুদের বেশি হয়। আর বৃদ্ধদের বেশি হয় ইথময়েডাল পলিপ।

লক্ষণ

পলিপ যখন নাকের ছিদ্রটাকে বন্ধ করে দেয় বা বাধাগ্রস্ত করে, তখন মানুষের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। নাক দিয়ে সর্দির মতো তরল পদার্থ বের হতে থাকে। কারো কারো হাঁচি হয়।

নাক পরীক্ষা করলে দেখা যায় ভেতর দিকে সাদা কিছু ছোট ছোট আঙুরের মতো ঝুলছে, নাকের ভেতরটা অনেকের ভরে যায়, অনেক সময় নাকের পেছনের দিকে চলে যায়, আবার অনেক সময় নাকের ছিদ্র দিয়ে অনেকের বেরও হয়ে যায়।

চিকিৎসা

অধ্যাপক আবু হানিফ বলেন, পলিপ যখন ছোট থাকে, তখন রোগীরা সেটি বুঝতে পারে না। যখন পলিপ বড় হয়ে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তখনই সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে আসেন।

পলিপের চিকিৎসা হিসেবে রোগীদের অ্যান্টিঅ্যালার্জিক-অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। নাকে ব্যবহারের জন্য স্টেরয়েড জাতীয় নেজাল স্প্রে দেওয়া হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ার স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। স্প্রে ব্যবহার ও ওষুধ সেবনে নাকের পলিপ আকারে ছোট হয়ে যায়। নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা কমে আসে এবং স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেওয়া যায়।

নাকে পলিপ বারবার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। যাদের নাকে বারবার পলিপ হয় তাদের এক্স-রে, সিটি স্ক্যানসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পলিপের আকার, সংখ্যা ও তীব্রতা দেখে প্রয়োজনে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পলিপ ফেলে দেওয়া হয়। ওষুধে কাজ না হলে অ্যান্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি করা হয়। সার্জারিতে প্রায় ৯৫ শতাংশ রোগী ভালো হয়ে যায়। তবে ৫ থেকে ১০ শতাংশ রোগীর আবারও পলিপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

পলিপ যাতে না হয়, সেজন্য অ্যান্টিঅ্যালার্জিক জাতীয় ওষুধ এবং নেজাল স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। ঠান্ডা, ধুলোবালি, অ্যালার্জি থেকে দূরে থাকতে হবে।

সতর্কতা

গ্রামে এমনকি শহরে অনেক চিকিৎসক, কবিরাজ আছেন যারা নাকে পলিপ হয়েছে বলে টারবিনেটের চিকিৎসা করেন, যা রোগীর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। পলিপ আর টারবিনেট এক নয়। বিভিন্ন অ্যাসিড জাতীয় জিনিস তুলার ভেতর করে টারবিনেটে দিয়ে দেয়। টারবিনেট নরম টিস্যু, অ্যাসিড দেওয়ার ফলে সেটি গলে যায় এবং রোগীদের বলা হয় পলিপ ছোট হয়ে গেছে, গলে গেছে। টারবিনেট গলিয়ে দেওয়ার ফলে পরবর্তীতে নাকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। অনেকের নাক বসে যায়, নাকের সেপ্টাম যা নাকের ভেতরের অংশকে দুই ভাগে বিভক্ত করে, সেটা ছিদ্র হয়ে যায়, অনেকের মুখের চামড়ায় বার্নের মতো হয়ে যায়, নাকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়।

নাকের যেকোনো সমস্যাকে পলিপ বলে ভুল চিকিৎসা করে মানুষের ক্ষতি হচ্ছে এবং যারা টারবিনেটকে পলিপ বলে ভুল চিকিৎসা করছেন, সেই বিষয়ে সচেতন হতে হবে সবাইকে।

Comments

The Daily Star  | English

Interim govt not taking action following white paper: Economists

The makers of the white paper criticised the government for increasing value-added tax

17m ago