ছানি কি শুধু বয়স্কদের চোখেই পড়ে, প্রতিরোধে যা করবেন

চোখ, চোখে ছানি
ছবি: সংগৃহীত

ছানি চোখের একটি রোগ; চোখের লেন্স ঘোলাটে বা অস্বচ্ছ হয়ে যাওয়ার সমস্যাকে ক্যাটারাক্ট বা চোখে ছানি পড়া বলে। অনেকে মনে করেন শুধুমাত্র বয়স্কদের চোখেই ছানি পড়ে, এটি ঠিক নয়। জন্মগত ছানিও হতে পারে। গর্ভাবস্থায় মায়ের যদি জীবাণু সংক্রমণ হয়, বংশগত কারণে কিংবা বিকিরণ রশ্মির সংস্পর্শে আসার কারণে সন্তানের জন্ম থেকেই ছানি থাকতে পারে। অল্প বয়সেও ছানি হতে পারে তবে ছানি সাধারণত বার্ধক্যজনিত একটি রোগ।

চোখে ছানি কেন হয়, ছানির চিকিৎসায় ওষুধ নাকি অস্ত্রোপচার কোনটি করবেন, এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটি অপথালমোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শওকত কবীর।

চোখে ছানি কেন হয়

ডা. শওকত কবীর জানান, বিভিন্ন কারণে চোখে ছানি পড়ে। যেমন:

১। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মায়োটনিক ডিসট্রফি, বংশগত এবং স্নায়ুজনিত কিছু রোগ ও সমস্যার কারণে চোখে ছানি পড়তে পারে।

২। আবার চোখের কিছু রোগ আছে ইউভাইটিস, এক ধরনের গ্লুকোমা, উচ্চ মায়োপিয়া যাদের আছে, তাদের হতে পারে।

৩। কিছু স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহারের কারণে চোখে ছানি পড়তে পারে।

৪। আঘাতজনিত কারণে চোখে ছানি হতে পারে। টেনিস বল, ভারী কোনো বস্তুর মাধ্যমে চোখে আঘাত পেলে, মারপিটের সময় চোখে ঘুষি যদি লাগে, বৈদ্যুতিক শক, রেডিয়েশন থেকেও চোখে ছানি হতে পারে। ক্যানসারের রোগীদের রেডিয়েশন দেওয়া হয় সেখান থেকে তাদের ছানি হতে পারে।

৫। বার্ধক্যজনিত কারণে ছানি পড়ে।

লক্ষণ

চোখে ছানি পড়ার সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা ও ঘোলাটে হয়ে আসা। দূরের কোনোকিছু দেখতে অসুবিধা হয়, পড়তে সমস্যা হয়। চোখে প্রদাহ হওয়া, রোদে গেলে একদম ঝাপসা দেখা, উজ্জ্বল আলোতে চোখে সমস্যা হওয়া। শিশুদের চোখে ছানির কারণে চোখের মণি সাদা দেখা যায়।

ছানি কি শুধু বয়স্কদের হয়

ডা. শওকত কবীর বলেন, শিশুদের চোখেও ছানি পড়ে, যেটাকে জন্মগত ছানি বলে। সাধারণত ছানি বয়সজনিত একটি রোগ। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের যেমন মাথার চুল পাকে, চামড়া কুচকে যায়, ঠিক তেমনি চোখেও ছানি পড়ে। যেটাকে বার্ধক্যজনিত ছানি বলে। সাধারণত ৪৫ কিংবা ৫০ বছর পরেই বার্ধক্যজনিত ছানি শনাক্ত হয়।

এ ছাড়া কিছু স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করলে, ডায়াবেটিস, আঘাতজনিত কারণে, চোখের কিছু রোগ—ইউভাইটিস, গ্লুকোমা, মায়োপিয়া থাকলে অল্প বয়সে চোখে ছানি পড়তে পারে।

চিকিৎসা ও সতর্কতা

ডা. শওকত কবীর বলেন, চোখে ছানি পড়ার শুরুতে বা ছানি কম থাকলে রোগীকে চশমা দেওয়া যেতে পারে, চশমা ব্যবহার করে যদি রোগী দেখতে পান তাহলে। ছানি যদি দৃষ্টিশক্তির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে, দৈনন্দিন ও পেশাগত জীবন ব্যাহত হয়, তাহলে অস্ত্রোপচার করতে হবে।

চোখে ছানির চিকিৎসা মেডিকেল চিকিৎসা নয়। কোনো ড্রপ, ওষুধ বা কোনোকিছুর মাধ্যমে ছানি পুরোপুরি ভালো করা সম্ভব নয়। ছানির সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা মূলত অস্ত্রোপচার।

রোগীর চোখের মণি বড় করে ছানির প্রকৃতি পরীক্ষা করে দেখা হয়। যদি চোখের অন্যান্য কোনো রোগ থাকে, ওই রোগের জন্য রেটিনার কোনো সমস্যা আছে কি না, তা যাচাই করা হয়। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং রোগীর সঙ্গে আলোচনা করে চোখের ছানি অস্ত্রোপচার কখন করতে হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রেটিনায় কোনো সমস্যা না থাকলে সাধারণত অস্ত্রোপচারের পর দৃষ্টিশক্তি শতভাগ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

ছানি চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার না করলে দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে আরও খারাপ হবে। অস্ত্রোপচার করতে সময় নিলে ছানিজনিত জটিলতা সৃষ্টি হবে। ছানি ম্যাচিয়ুর বা পরিপক্ব হওয়া কিংবা পরিপক্ব হওয়ার আগেই অস্ত্রোপচার করা হয়; কারণ বর্তমানে যেসব অস্ত্রোপচার করা হয়, সেক্ষেত্রে ছানি বেশি পরিপক্ব হয়ে গেলে অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত জটিলতা বাড়তে পারে। ছানি প্রায় পরিপক্ব হয়ে গেলেই অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে, আর তা রোগীর চাহিদা ও পেশাগত কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে কি না, তার ওপর নির্ভর করে।

ছানি যখন হাইপার ম্যাচিয়ুর হয়ে যায় বা একদম সাদা হয়ে যায়, তখন রোগীর প্রেশার বাড়ে, চোখে এক ধরনের প্রদাহ তৈরি করে। যার ফলে চোখ লাল হয়ে যায়, ব্যথা হয়। ওই সময়ে অস্ত্রোপচার করলেও লক্ষ্য অনুযায়ী দৃষ্টি পুনরুদ্ধার সম্ভব হয় না।

তাই যখনই ছানি প্রায় পরিপক্ব হয়ে আসবে, তখনই অস্ত্রোপচার করতে হবে, বেশি দেরি করলেই জটিলতা সৃষ্টি হবে। সেক্ষেত্রে যেসব জটিলতা আছে, তা সমাধানের পর অস্ত্রোপচার করতে হবে।

প্রতিরোধ

চোখে ছানি একেবারে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে কিছু নিয়ম ও সতর্কতা মেনে চললে ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

১। আঘাতজনিত কারণে যাতে চোখে ছানি না পড়ে, সেজন্য খেয়াল রাখতে হবে চোখ যেন কোনোভাবেই আঘাতপ্রাপ্ত না হয়।

২। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করতে হবে।

৩। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা।

৪। নিয়মিত চোখের যত্ন নিতে হবে।

৫। নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করানো।

৬। পুষ্টিকর ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।

Comments

The Daily Star  | English

65pc of suicide victims among students are teens: survey

Teenagers (aged 13-19) made up 65.7% of 310 students who died by suicide in 2024, according to a survey by Aachol Foundation.

1h ago