কিডনি ডায়ালাইসিস কি সারাজীবন করতে হয়

কিডনি ডায়ালাইসিস
ছবি: সংগৃহীত

কিডনি ডায়ালাইসিস হচ্ছে একটি প্রসেস বা প্রক্রিয়া। প্রতি মুহূর্তে বিপাক কার্যক্রমের ফলে মানবদেহে তৈরি হওয়া বর্জ্য শরীর থেকে বের করে দেয় কিডনি। মানুষের শরীরে যখন কিডনি কাজ করে না, তখন অনেক ধরনের বর্জ্য পদার্থ জমে যায়। সেজন্য কিডনির বিকল্প হিসেবে বর্জ্যগুলো পরিশোধিত করার যে প্রক্রিয়া, সেটিকে ডায়ালাইসিস বলা হয়। অর্থাৎ কিডনির বিকল্প হচ্ছে ডায়ালাইসিস।

ডায়ালাইসিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. মিজানুর রহমান।

ডায়ালাইসিসের ধরন

অধ্যাপক মিজানুর রহমান জানান, ডায়ালাইসিস দুই ধরনের হয়, হিমোডায়ালাইসিস ও পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস।

রক্ত পরিশোধিত করার প্রক্রিয়া হচ্ছে হিমোডায়ালাইসিস। রক্তের মাধ্যমে ফ্লুইড শরীরের ভেতর প্রবেশ করানো হয়। পরে ডায়ালাইসিস যন্ত্রের মাধ্যমে রক্ত পরিশোধিত করা হয়। এসময় রক্তে জমে থাকা বর্জ্য, লবণ ও তরল ডায়ালাইসিস যন্ত্রের মাধ্যমে ফিল্টার করা হয়।

হিমোডায়ালাইসিস আবার দুই প্রকার। একটি হচ্ছে মেশিনবেজড ডায়ালাইসিস এবং অপরটি হচ্ছে অ্যাম্বুলেটরি ডায়ালাইসিস, যা বাড়িতে বসে নিজে নিজেই করা যায়।

পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের ক্ষেত্রে পেটের ভেতর একটি ডিভাইস বা ক্যাথেটার বসিয়ে দেওয়া হয়। সেই ডিভাইসের মধ্যে ডায়ালাইসিস ফ্লুইড দেওয়া হয় আর তা পেটের ভেতর গিয়ে রক্ত পরিশোধিত করে আবার বের হয়ে আসে।

ডায়ালাইসিস কখন করতে হয়

কোনো রোগীর কিডনি বিকল হলেই ডায়ালাইসিস করতে হয়, সেটা অ্যাকিউট রেনাল ফেইলিওর এবং ক্রনিক রেনাল ইনজুরি হতে পারে।

ক্রনিক রেনাল ইনজুরি

কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে, ক্রিয়েটিনিন মাত্রা বেশি, যখন দেখা যায় তার ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীন, পটাশিয়াম বেশি হয়ে গেছে, বুকে ও পেটের ভেতর পানি জমে গেছে, তখন তাকে ডায়ালাইসিস করতে বলা হয়।

ক্রনিক ডায়ালাইসিস কিডনি রোগী তাদেরকে বলে, যাদের কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।

অ্যাকিউট রেনাল ফেইলিওর

যাদের সাময়িক কোনো কারণে কিডনি বিকল হয়ে যায়, সেটিকে অ্যাকিউট রেনাল ফেইলিওর বলে। কোনো কারণে মারপিট বা আঘাতের পরে কিডনি সাময়িক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিছু ওষুধ খাওয়ার কারণে, কিছু কবিরাজি ওষুধ সেবন, বিষাক্ত সাপে কামড়, সিভিয়ার ডায়রিরার পর অনেকের কিডনি ফেইলিওর হয়ে যেতে পারে। তখন যে ডায়ালাইসিস করা হয়, তাকে অ্যাকিউট রেনাল ফেইলিওর বলে।

ডায়ালাইসিস কি সারাজীবন করতে হয়

অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, যারা ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্ত অর্থাৎ যাদের কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে, তাদেরকে সারাজীবন ডায়ালাইসিস করতে হবে। সারাজীবন ডায়ালাইসিস ব্যতীত চিকিৎসা হিসেবে তারা কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে পারেন।

আর যাদের অ্যাকিউট রেনাল ফেইলিওর বা সাময়িক কিডনি নষ্ট হয়েছে, তারা কিছুদিন ডায়ালাইসিস করার পরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিডনির ফাংশন ঠিক হয়ে যাওয়ার পর আর ডায়ালাইসিস করতে হয় না।

ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার

ডায়ালাইসিসের আগে রেনাল ফেইলিওর রোগীকে পানি কম খেতে বলা হয়, প্রোটিন ৪০ গ্রামের বেশি খাওয়া যাবে না। কিন্তু যখন রোগীর ডায়ালাইসিস করা হয়, সে সময় খাবারে কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকে না। বরং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ডায়ালাইসিস একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা। সবার জন্য এর ব্যয় বহন করা কঠিন। নীরব ঘাতক হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, ছোট বয়সে কিডনি রোগ, কিডনির রাস্তায় কিছু বাঁধা ও জন্মগত ত্রুটি—এই সমস্যাগুলো যদি কারো থাকে, তাদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এই সমস্যাগুলোর কারণে কিডনিজনিত জটিলতা মারাত্মক হতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে কিডনি বিকল হবে না এবং ডায়ালাইসিস নেওয়ার প্রয়োজন হবে না।

Comments

The Daily Star  | English

Consensus Commission’s first meeting with political parties begins

The meeting of the national consensus-building commission is being chaired by Chief Adviser Prof Muhammad Yunus

1h ago