স্ট্রোকের পর ফিজিওথেরাপি না নিলে যেসব জটিলতা হতে পারে

ফিজিওথেরাপি
ছবি: সংগৃহীত

স্ট্রোকের পর একজন রোগীর স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন যথাযথভাবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। এক্ষেত্রে যত দ্রুত ফিজিওথেরাপি শুরু করা যাবে, রোগীর স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরে আসার সম্ভাবনাও তত বেশি।

স্ট্রোকের পর ফিজিওথেরাপি কেন-কতটা জরুরি, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি) চট্টগ্রাম শাখার ফিজিওথেরাপি বিভাগের ইনচার্জ ও সিনিয়র ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক মো. আইনুর নিশাদ রাজিব।

স্ট্রোকের পর ফিজিওথেরাপি

ডা. আইনুর নিশাদ বলেন, মস্তিষ্কের নিজস্ব রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলে মস্তিষ্কে কিছু স্নায়ুকোষ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এটাকেই স্ট্রোক বলে। স্ট্রোক সাধারণত দুইটি কারণে হয়। যেমন: মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হলে এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটলে স্ট্রোক হতে পারে।

একজন রোগীর স্ট্রোক-পরবর্তী শারীরিক সমস্যা দূর করে স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রয়োজন। স্ট্রোকের পর যত দ্রুত রোগীর ফিজিওথেরাপি শুরু করা যাবে, রোগীর কার্যক্ষমতা ফিরে আসার সম্ভাবনাও তত বেশি। বর্তমানে গবেষণালব্ধ এবং বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

স্ট্রোক-পরবর্তী সমস্যা

স্ট্রোক আক্রান্ত প্রত্যেকটি রোগীর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা খুবই প্রয়োজন। মস্তিষ্কের কোথায় কতটুকু আক্রান্ত হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে স্ট্রোকের তীব্রতা, লক্ষণ এবং সমস্যাগুলো প্রকাশ পায়। যেমন:

১. শরীরের এক পাশ অথবা অনেক সময় দুই পাশ অবশ হয়ে যেতে পারে।

২. মাংসপেশির টান বা স্থিতিস্থাপকতা প্রাথমিক পর্যায়ে কমে যেতে পারে, পরে আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।

৩. হাত-পায়ের নড়াচড়া আংশিক বা সম্পূর্ণ কমে যেতে পারে।

৪. মাংসপেশি শুকিয়ে যেতে পারে, শক্ত হয়ে যেতে পারে।

৫. হাঁটা-চলা, উঠাবসা, বিছানায় নড়াচড়া কমে যেতে পারে। এমনকি প্রস্রাব-পায়খানা নিয়ন্ত্রণজনিত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

৬. অনেক সময় নড়াচড়া কমে যাওয়ার ফলে শুয়ে থাকার জন্য চাপজনিত ঘা দেখা দিতে পারে।

৭. কাঁধের জয়েন্ট সরে যেতে পারে।

৮. পোশার সিনড্রোম দেখা দিতে পারে।

এসব ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি নেওয়া খুব জরুরি।

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় প্রথমে রোগীর রোগ বর্ণনা, শারীরিক পরীক্ষাসহ, বিভিন্ন রেডিওলজিক্যাল ও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে কী ধরনের স্ট্রোক, কী ধরনের শারীরিক সমস্যা আছে তা নির্ণয় করা হয়। এরপর রোগীর সমস্যা অনুযায়ী স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি এভিডেন্স বেইজড ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার পরিকল্পনা করা হয়। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করা, সঠিক পজিশনিং ও মাংসপেশির স্বাভাবিক দৈর্ঘ্য বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে মাংসপেশির স্বাভাবিক টান ফিরিয়ে আনা, হাত ও পায়ের শক্তি ফিরিয়ে আনা, শরীরের স্বাভাবিক অ্যালাইনমেন্ট ফিরিয়ে আনা, শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির নড়াচড়া করার ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা, ব্যালেন্স ও কো-অর্ডিনেশন উন্নত করা, স্বাভাবিক হাঁটার ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা এবং সর্বোপরি রোগীর কর্মদক্ষতা বাড়ানো হয় ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে।

এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের গবেষণালব্ধ পদ্ধতি বা ধারণা ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে এনডিটি অ্যাপ্রোচ বা নিউরো ডেভেলপমেন্টাল থেরাপি, কারেন্ট শেফার্ড অ্যাপ্রোচ, মোটর লার্নিং স্ট্র্যাটেজি, রুট অ্যাপ্রোচ জনপ্রিয়।

স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপি ও সুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে বয়স গুরুত্বপূর্ণ। যাদের বয়স একটু কম, তাদের উন্নতি অনেক বেশি দেখা যায়। ৫০ বছরের বেশি বয়স যাদের, তাদের সুস্থ-স্বাভাবিক হতে সময় লাগে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, বয়সের কারণে পেশির কোষ কমে যায়, ক্ষয়জনিত বিভিন্ন সমস্যার ও বিভিন্ন রোগের কারণে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সময় লাগে, পুরোপুরি সুস্থতাও সম্ভব হয় না অনেক সময়।

ডা. আইনুর নিশাদ বলেন, যেকোনো বয়সেই স্ট্রোক হোক না কেন, ফিজিওথেরাপি নেওয়া জরুরি। তা না হলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে পরবর্তীতে। যেমন: রোগীর হাত ও পা বেঁকে যেতে পারে, জয়েন্ট স্টিভনেস বা অস্থিসন্ধিগুলোর স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হতে পারে, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে, রোগীর স্বাভাবিক চলাফেরা এবং হাঁটাচলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারেন, কর্মদক্ষতা আংশিক বা সম্পূর্ণ বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে বা হ্রাস পেতে পারে। পরনির্ভরশীল জীবনযাপন করতে হতে পারে।

সতর্ক থাকতে হবে যে, আমাদের দেশে বিভিন্ন স্থানে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা দেওয়া হয়। স্ট্রোকের রোগীদের হিট, ভাইব্রেশন, স্টিমুলেশন দেওয়া যাবে না। অনেক সময় মালিশ করা হয়, সেটিও করা যাবে না। ভুল ফিজিওথেরাপির চিকিৎসা হিতে বিপরীত হতে পারে রোগীর জন্য। তাই অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English
What is Indian media’s gain in branding us as a Hindu-hating country?

What is Indian media’s gain in branding us as a Hindu-hating country?

What has shocked me is their refusal to fact-check what they are writing, broadcasting or televising—a basic duty of any journalist.

6h ago