অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সহায়তার কথা আবারও জানালো আইএমএফ

সংস্থাটির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের ঢাকা সফর শেষে গতকাল সোমবার বিবৃতিতে আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশের আর্থিক খাতের দুর্বলতা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।
আইএমএফ
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন আবারও জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

সংস্থাটির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের ঢাকা সফর শেষে গতকাল সোমবার বিবৃতিতে আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশের আর্থিক খাতের দুর্বলতা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

এতে বলা হয়, 'এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে আর্থিক কৃচ্ছ্রসাধন ও এখন প্রয়োজন নেই এমন খরচকে সমন্বয় করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টাকে আমরা সমর্থন করি।'

দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের জানুয়ারিতে অনুমোদিত চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির পাশাপাশি আইএমএফের কাছে নতুন করে তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে।

সেই চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ইতোমধ্যে দুই দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে।

সংস্থাটি বলেছে, আগামী ২২ অক্টোবর থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় নবায়নযোগ্য সহায়তার বিষয়ে আরও আলোচনা হবে।

ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে আইএমএফ মিশনের প্রতিনিধি দল গত ২৪ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফর করে প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করতে আলোচনা করে।

সফর শেষে আইএমএফ বলেছে, 'সাম্প্রতিক অস্থিরতা ও বন্যার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্যভাবে ধীর হয়ে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কে আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বাংলাদেশের রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে কর-রাজস্ব আদায় কমেছে। খরচ বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ দায় পরিশোধের বকেয়া জমে গেছে।'

আইএমএফ বলছে, 'আর্থিক খাতের দুর্বলতা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।'

এই প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আইএমএফ কর্মীরা এসব সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় নীতি ও সংস্কারের বিষয়ে খোলামেলা ও ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, 'আইএমএফ বাংলাদেশের বিশ্বস্ত অংশীদার। বাংলাদেশ ও এর জনগণকে সহায়তা করতে সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'

'আইএমএফ-সমর্থিত চলমান ঋণ কর্মসূচির কাঠামোর মধ্যে, আমরা বাংলাদেশের সংস্কার প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাব। এর লক্ষ্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা এবং টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত প্রবৃদ্ধি বাড়ানো।'

'আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় সংস্কার বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নতুন প্রতিশ্রুতিকে আমরা স্বাগত জানাই। আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের আসন্ন বার্ষিক সভায় ঋণ কর্মসূচি পর্যালোচনা এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে।'

গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠকে আইএমএফ অন্তর্বর্তী সরকারকে 'ফাস্ট ট্র্যাক' ভিত্তিতে আরও ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।

ক্রিস্টালিনা জর্জিভা বলেন, 'আইএমএফ সরকারকে দ্রুত আর্থিক সহায়তা দেবে।'

তিনি বাংলাদেশে 'দ্রুত' প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছেন।

দলটি শিগগির আইএমএফ ব্যবস্থাপনা বোর্ডের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে।

জর্জিভা আরও বলেন, 'প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইএমএফ বোর্ড বাংলাদেশের জন্য নতুন ঋণ কর্মসূচি শুরু করতে পারে অথবা বিদ্যমান ঋণ কর্মসূচির মেয়াদ বাড়াতে পারে।'

ঢাকা সফরকালে আইএমএফের প্রতিনিধি দল অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে।

তারা বেসরকারি খাত, বিশেষজ্ঞ, দাতা ও উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে সংস্থাটি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে প্রাণহানি ও আহতের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।'

'সময়মতো অন্তর্বর্তী সরকার গঠন রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে সহায়তা করেছে এবং অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে,' বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।

Comments