৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ: ভর্তুকি কমানোর দাবি তুলতে পারে আইএমএফ

আইএমএফ
ছবি: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের চাওয়া অতিরিক্ত তিন বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য ভর্তুকি কমানো ও রাজস্ব আদায় বাড়ানোসহ আরও সংস্কার সুপারিশ দিতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় সংস্থাটির এক শীর্ষ কর্মকর্তা।

আইএমএফের মিশন প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল ঋণ প্রস্তাবের ওপর প্রাথমিক আলোচনার জন্য আগামী ২৪ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসবে।

গত বছরের জানুয়ারিতে সংস্থাটি অতিরিক্ত ভর্তুকি ও রাজস্বসহ বেশকিছু সংস্কারের শর্ত দিয়ে বাংলাদেশের জন্য চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন দেয়। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত দুই দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে।

গতকাল রোববার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দে।

বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, 'আইএমএফের প্রস্তুতি দল বাংলাদেশ সফর করবে। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত নানা সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়নে আর্থিক সহায়তা দেবে।'

তিনি আরও বলেন, 'সংস্থাটির কাছে চলমান চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণের পাশাপাশি আরও ঋণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।'

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর রিজার্ভ বাড়াতে আইএমএফের কাছ থেকে তিন বিলিয়ন ডলারসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগীর কাছে বাজেট সহায়তা চেয়েছিল।

সরকারের কাছে পাঠানো আইএমএফের টকিং পয়েন্ট অনুসারে, সংস্কার কর্মসূচিতে ভর্তুকি ও রাজস্বের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।

সফরকালে আইএমএফের প্রতিনিধি দলটি জ্বালানি ও সারে ভর্তুকি কমানোর বিষয়ে সরকারের কৌশল নিয়ে আলোচনা করবে।

এ ছাড়াও জ্বালানি, সার ও বিদ্যুতে ভর্তুকি এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভর্তুকি এবং ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সরকারের বরাদ্দ নিয়ে কথা হবে।

চলতি বছরের জুনে চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদনের সময় আইএমএফ কৃষিতে ভর্তুকি কমানোর বিকল্প কী হতে পারে সে প্রস্তাব দেয়। এতে সারের দাম বাড়ানো ও দরিদ্র কৃষকদের সহায়তার জন্য নির্দিষ্ট কৃষি উপকরণের জন্য নগদ বা ভাউচার দেওয়ার কথা বলা হয়।

আইএমএফ বলছে, সারের দাম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে ক্ষুদ্র বা দরিদ্র কৃষকদের সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের জন্য নগদ সহায়তা বা ভাউচার দেওয়া যেতে পারে।

সংস্থাটির পরামর্শ—সারের ভর্তুকি কমাতে বেশ কয়েকটি বিকল্প বিবেচনা করা যেতে পারে।

বিদ্যমান সার কারখানাগুলোয় প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ বাড়িয়ে সারের উৎপাদন বাড়ানো গেলে ব্যয়বহুল আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানো সম্ভব হবে। আইএমএফ আরও বলেছে, অন্যান্য খাতে গ্যাস সরবরাহ কমানোর প্রভাব সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

সে সময় আইএমএফ বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিল।

এর জবাবে বিগত সরকার আইএমএফকে বছরে চারবার দাম বাড়িয়ে বিদ্যুতের ভর্তুকি ক্রমান্বয়ে কমানোর আশ্বাস দিয়েছিল।

গত অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ এক লাখ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। চলতি অর্থবছরেও একই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

রাজস্ব বিষয়ে আইএমএফ মিশন ২৫টির বেশি বিষয় তুলে ধরতে পারে। যেমন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের কর আদায় পিছিয়ে পড়া, আইএমএফ ঋণের শর্ত অনুসারে কর-রাজস্ব ব্যবস্থার দূরদর্শী প্রতিশ্রুতি ও ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের পরিকল্পনা।

আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণের উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হবে।

রাজস্ব আদায়ে আয়কর ও শুল্ক আইনের প্রভাব নিয়েও প্রশ্ন তোলা হবে।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে সংবাদ ব্রিফিংয়ে আইএমএফ'র যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক জুলি কোজ্যাক বলেন, 'ঢাকায় আসন্ন মিশনের অংশ হিসেবে প্রতিনিধি দলটি সব ধরনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সম্ভাব্য অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন করবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আইএমএফের পক্ষ থেকে আমরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে ও আইএমএফ ঋণ কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে জনগণকে সমর্থন করতে আমরা সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্কার কাজকে এগিয়ে নিতে সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাব।'

Comments