নতুন অর্থবছর

সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে অর্থনীতি?

মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, অর্থনৈতিক সংকট, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিনিময় হার, ক্রলিং পেগ,
গ্রাফিক্স: রেহনুমা প্রসৃন

বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই অবস্থা থেকে দেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হবে। তবে এজন্য কঠোর নীতি বাস্তবায়নে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এমনকি চরম অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কাসহ অধিকাংশ দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সফল হলেও বাংলাদেশের ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) বেড়েই চলেছে।

গত বছরের মার্চ থেকে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে ঘোরাফেরা করলেও দুটি প্রধান কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক তা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রথমটি হলো কার্যকর ‍উদ্যোগ নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক দেরি করেছে। অন্যটি হলো চলতি বছরের ৮ মে পর্যন্ত বিভিন্ন আকারে বহাল থাকা সুদের হারের ঊর্ধ্বসীমা সরকারের মুদ্রানীতিকে অকার্যকর করে তোলে।

এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে ঋণ, মহামারি পরবর্তী প্রণোদনা প্যাকেজ ও কিছু দুর্বল ইসলামী ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দিয়ে অর্থনীতিতে নতুন অর্থের যোগান দিয়েছে। এগুলো দেশের মূল্যস্ফীতি বাড়িয়েছে।

তবে, দেশের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচকতা বার্তা হলো- আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে শেষ পর্যন্ত ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির জন্য কিছু সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কারমূলক উদ্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- সুদহারের সীমা বাতিল করা ও সুদহার বাজারভিত্তিক করা।

উল্লেখ্য ২০২০ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমবার সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে। যদিও ২০২৪ অর্থবছরের শুরুতে তা প্রত্যাহার করা হয়। এরপর ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের মুভিং গড় হারের ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন সুদহার ব্যবস্থা চালু করে, যা স্মার্ট নামে পরিচিত।

অন্যান্য সংস্কারের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা শক্তিশালী করতে ও আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেপো রেট বা পলিসি রেট কয়েকবার বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ করে।

শুধু তাই নয়, বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২০২৪ অর্থবছর থেকে সরকারকে ঋণ দেওয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এছাড়া বিনিময় হার ব্যবস্থায় আরেকটি বড় সংস্কার এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারা ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করে বিনিময় হার নমনীয় করে।

গত মে মাসে মার্কিন রেটিং এজেন্সি মুডি'স পূর্বাভাস দিয়েছিল, আগামী কয়েক মাসে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল হবে। যদিও দুই বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ কমায় বাংলাদেশ বারবার আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

সুতরাং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কারণে নতুন অর্থবছরে ইতিবাচক ফল বয়ে আনার সুযোগ আছে। কিন্তু এজন্য কঠোর নীতিগত অবস্থানের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও সরকার নির্ধারিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে ২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করার কথা আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।

তার আগে সবার মনে একটি প্রশ্ন, কোন ধরনের নীতিগত অবস্থান গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক? বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ধাক্কায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য কী ধরনের নীতিগত অবস্থান নেওয়া হবে।

২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের মে, এই ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। যা বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।

সরকার নতুন অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশ ৫ শতাংশই রেখেছে।

আইএমএফ জানিয়েছে, নীতিগত পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়ন শুরু করায় বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ডলারের উচ্চ প্রবাহের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নমনীয় বিনিময় হার চালুর পর প্রবাসী আয় বাড়ছে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতির গতিশীলতা নির্ভর করে নীতিগত পদক্ষেপের ওপর।

তার মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার যদি কঠোর নীতিগত পদক্ষেপ ধরে রাখে, তাহলে মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়ক হবে।

নতুন অর্থবছরে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সরকারকে ঋণ দেওয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্তের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোর হতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Polythene ban: A litmus test for will and eco-innovation

Although Bangladesh became the first country in the world to announce a complete ban on the use of polythene bags in 2002, strict enforcement of the much-lauded initiative has only started taking shape recently.

14h ago