কুড়িগ্রামের সীমান্ত হাট: স্থানীয়রা চান আবার চালু হোক, জামায়াতের আমির চান না

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বন্ধ থাকা এই হাটটি পুনরায় চালুর ব্যাপারে শক্ত অবস্থান ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয়রা। ছবি: স্টার

কুড়িগ্রামের চর রাজীবপুর উপজেলায় জিনজিরাম নদীর পাশে বালিয়ামারী-কালায়ের চর এলাকার ‍সীমান্ত হাটটি আবার চালু না করার দাবি জানিয়েছে জামায়াত।

হাটটি চালু না করার দাবি জানিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেন চর রাজীবপুর উপজেলার জামায়াতের আমির আবুল বাশার মো. আব্দুল লতিফ।

কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বন্ধ থাকা এই হাটটি পুনরায় চালুর ব্যাপারে শক্ত অবস্থান ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয়রা।

চর রাজীবপুর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জিনজিরাম নদীর তীরে বাংলাদেশের চার বিঘা ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কালায়ের চর এলাকার চার বিঘা জমিজুড়ে ২০১১ সালের ২৩ জুলাই সীমান্ত হাটটি চালু হয়। শুরুর দিকে প্রতি বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হাটের কার্ক্রম চলত।

পরে ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সপ্তাহে দুদিন হাটটি চালু রাখতে দুই দেশের প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বৈঠক হয়। ওই বছর ৭ অক্টোবর থেকে সোমবার ও বুধবার হাট চালু করা হয়। হাটে বাংলাদেশের ৬১২ জন ও ভারতের ৩০১ জন ব্যবসায়ী তালিকাভুক্ত আছেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশের ২৫ জন ব্যবসায়ী পণ্য বিক্রি ও ৫৮৭ জন ব্যবসায়ী পণ্য কিনতে পারেন। ভারতের ৫০জন ব্যবসায়ী পণ্য বিক্রি ও ২৫১ জন ব্যবসায়ী পণ্য কিনতে পারেন। হাটে ৪০-৫০টি তালিকাভুক্ত পণ্য কেনাবেচা হয়।

স্থানীয় বালিয়ামারী গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, এই হাটটির পর বাংলাদেশের ৬১২ জন ব্যবসায়ীর বাইরে ১৮০ জন শ্রমিক ও ৪০ জন মাঝি প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল আছেন আরও পাঁচ শতাধিক মানুষ।

তাদের ভাষ্য, সীমান্ত হাটটি চালু হওয়ার আগে বালিয়ামারী গ্রামের লোকজন জিনজিরাম নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিছু মানুষ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। হাটটি বালিয়ামারী গ্রামের মানুষজনকে স্বাবলম্বী করেছে। তাই হাট বন্ধ থাকলে তাদের কর্মহীন থাকতে হবে। এ কারণে হাটটি আবার চালু করার বিষয়টি জরুরি হয়ে পড়েছে।

সীমান্ত হাটের তালিকাভূক্ত ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, প্রতি হাটে একেকজন ব্যবসায়ী ২-৫ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারেন। এই টাকা দিয়ে তারা সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন।

মজিবুর বলেন, 'বর্ডার হাটটি চালুর আগে আমরা দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতাম। এটি এখন আমাদের জীবিকা নির্বাহের উৎস।'

কথা হয় হাটের তালিকাভুক্ত শ্রমিক আব্দুস সালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতি হাটে একেকজন শ্রমিক এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা আয় করেন। হাট বন্ধ থাকায় তাদের এখন ঋণ করে সংসার চালাতে হচ্ছে।

হাটটি আবার চালু না করার দাবি জানিয়ে চিঠি দেওয়া প্রসঙ্গে উপজেলা জামায়াতের আমির আবুল বাশার মো. আব্দুল লতিফের ভাষ্য, 'এটি পুনরায় চালু করা হল তা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হতে পারে এবং অবৈধ মাদকদ্রব্য পাচার হয়ে বাংলাদেশে আসতে পারে।'

তবে হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও রাজীবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরন মো. ইলিয়াস বলছেন, 'বন্ধ থাকা বর্ডার হাট পুনরায় চালু করতে ভারত আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দ্রুত এটি চালু হতে পারে। আমার ইউনিয়নে দারিদ্র বিমোচনে বর্ডার হাটের ভূমিকা অপরিসীম।'

জামায়াতের আমিরের চিঠি হাটটি পুনরায় চালুর ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে না বলেও মন্তব্য করেন এই জনপ্রতিনিধি।

এ ব্যাপারে সীমান্ত হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সচিব ও চর রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জামায়াত নেতার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বর্ডার হাট পুনরায় চালু করতে আলোচনা চলছে। তবে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।'

Comments

The Daily Star  | English

Consensus key to take Bangladesh forward: Yunus

"We are now working to bring our beloved Bangladesh back onto the path of equality, human dignity, and justice," he said

1h ago