শ্রমিক বিক্ষোভে ব্যাহত পোশাক রপ্তানি

তৈরি পোশাক
শ্রমিক অসন্তোষে আশুলিয়ার পোশাক কারাখানায় ছুটি ঘোষণা। ছবি: স্টার

দেশের পোশাক শিল্পে চলমান অস্থিরতা রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অনেক বিদেশি ক্রেতা আগামী মৌসুমের জন্য কার্যাদেশ চূড়ান্ত করতে এ দেশে তাদের সফর বাতিল করেছেন।

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমের দেশগুলোয় উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার পরও বিদেশি ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর জন্য বাংলাদেশ আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক যুদ্ধের মতো ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মুখে তৈরি পোশাক কেনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর প্রথম পছন্দ হয়ে উঠে।

এছাড়াও, স্থানীয় উৎপাদকরা পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক দাম দেওয়ার পাশাপাশি তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন ও রানা প্লাজা কারখানা ধসের মতো শিল্প দুর্ঘটনার পর কর্মক্ষেত্রের সুরক্ষা মানগুলো মেনে চলছে।

পণ্যের বহুমুখীকরণ ও মূল্য সংযোজিত পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়ানোয় তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।

তবে এ শিল্পে চলমান অস্থিরতা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে তা নিশ্চিতভাবেই রপ্তানিতে প্রভাব ফেলবে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউরোপের এক পোশাক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা।

বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রায়ই কারখানাগুলোয় কার্যাদেশ চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ সফর করেন উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'এই শিল্প সংকটের কারণে অনেকেই ভ্রমণ বাতিল করেছেন।'

তার ভাষ্য, 'আমরা আগামী গ্রীষ্মের জন্য ইতোমধ্যে কার্যাদেশ দিয়েছি। এখন আমরা আগামী শীতের জন্য পরিকল্পনা করছি। তাই বাংলাদেশ ভ্রমণ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'

ওই কর্মকর্তা জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান কোনো কার্যাদেশ বাতিল না করলেও মূল্য সংযোজিত পোশাক পণ্যের অনেক কার্যাদেশ অনেক বিদেশি ক্রেতা বাতিল বা স্থগিত করেছেন।

তৈরি পোশাক
গাজীপুরে শ্রমিক অসন্তোষ। ছবি: সংগৃহীত

বিদেশি ক্রেতাদের নিরাপত্তাকে বড় উদ্বেগের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা আরও জানান, যখনই তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভ্রমণ বাতিল হয় তখনই তারা পোশাক কেনার বিষয়ে 'প্ল্যান বি' করেন।

এছাড়া ঝুঁকি নিরূপণের পর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে তাদের ভাবতে হয়।

এই কর্মকর্তার মতে, এমন পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি ঝুঁকিতে পড়লে তা উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠে। বিদেশি ক্রেতারা প্রায়ই কার্যাদেশ দেওয়ার আগে সামাজিক মাধ্যমে নেতিবাচক পোস্টগুলো বিবেচনায় নেন।

বিদেশি ক্রেতারা তাদের কার্যাদেশের একটি অংশ অন্য দেশে দিয়ে দেন বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

অনেক বিদেশি ক্রেতা বলছেন, তাদের প্রায় পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ কার্যাদেশ পোশাক শিল্পে সাম্প্রতিক অস্থিরতার পাশাপাশি অন্যান্য কারণে প্রভাবিত হতে পারে।

তবে সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হবে মূল্য সংযোজিত পোশাক জাহাজীকরণে।

ফকির অ্যাপারেলস লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা বখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের পণ্য বিশেষায়িত হওয়ায় বিদেশি ক্রেতারা এখনো কোনো কার্যাদেশ বাতিল করেননি।'

তার মতে, বিশেষায়িত পণ্যের জন্য দ্রুত কার্যাদেশ অন্য কোথাও দেওয়া সম্ভব না। কারণ এসব পণ্য উৎপাদনে নির্দিষ্ট ডিজাইন ও বিশেষ উপকরণের প্রয়োজন।

এনভয় লিগ্যাসি অ্যান্ড শেলটেক গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই অস্থিরতা পোশাক রপ্তানিতে প্রভাব ফেলেছে। উৎপাদনে দেরি হওয়ায় অনেক উৎপাদককে ছাড় দিতে হবে। ব্যয়বহুল এয়ার শিপমেন্টের পাশাপাশি ওয়ার্ক অর্ডার চলে যাওয়ার চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'বিদেশি ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো যদি সময়মতো পণ্য হাতে না পায় তাহলে তারা সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ছাড় ও বিমানে পণ্য পাঠানোর দাবি করেন।'

বাংলাদেশ অ্যাপারেলস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি মো. তৌহিদুর মনে করেন, 'রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্যে একটি মহল শ্রমিকদের উসকানি দিচ্ছে বলেই এই অসন্তোষ।'

তবে কিছু কারখানার শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আছে। যেমন সময়মতো মজুরি পরিশোধ নিশ্চিত করা ও বেআইনিভাবে কাউকে চাকরিচ্যুত বন্ধ করা।

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিনও তাই মনে করেন। তিনি বলেন, 'বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা এখনো জুলাইয়ের বেতন পাননি। এটা অশান্তির বড় কারণ।'

'পোশাক শিল্পের কিছু সংশ্লিষ্ট বিষয় আছে। যেমন শ্রমিকদের খাবার সরবরাহ, পরিবহন ও কারখানা থেকে পোশাক বর্জ্য বিক্রি করা। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এসব পরিষেবা নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন গোষ্ঠীগুলো প্রতিযোগিতা করছে। প্রায়ই প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে।'

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ৯৬ শতাংশের বেশি কারখানা চালু হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ৪৩ পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল।'

তিনি জানান, গতকাল এক বৈঠকে শ্রমিকদের আস্থা রাখতে কারখানা মালিকদের কারখানায় উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খন্দকার রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, 'গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সময় ১৪ দিন পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। সাম্প্রতিক সহিংসতায় কারখানা বন্ধ ছিল তিন থেকে চার দিন।'

'সময়মতো পণ্য চালান নিশ্চিত করা যাবে কিনা তা নিয়ে বিদেশি ক্রেতারা প্রশ্ন করছেন। কারণ তারাও কারখানায় উৎপাদন নিয়ে চিন্তিত,' যোগ করেনি তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

BNP sticks to demand for polls by December

In a meeting with Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night, the BNP restated its demands that the next general election be held by December and the government immediately announce a roadmap to that end.

2h ago