পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশের ইতিহাস 

বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান

আবরার আহমেদের বল এক্সটা কাভার দিয়ে সীমানা ছাড়া করলেন সাকিব আল হাসান। ড্রেসিংরুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে উল্লাস করে উঠল পুরো দল। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানকে টানা দুই টেস্ট হারিয়ে ইতিহাস গড়ে ফেলল বাংলাদেশ দল। 

মঙ্গলবার রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দুটিই জিতে শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। এবারই প্রথম পাকিস্তানকে টেস্ট সিরিজে হারাল বাংলাদেশ। দেশের বাইরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের পর জিতল তৃতীয় টেস্ট সিরিজ। প্রতিপক্ষ, প্রেক্ষাপট বিচার করলে এই সিরিজ জয় নিশ্চিতভাবেই সবার উপরে রাখা যায়। 

এই টেস্টে আরেকটি অনন্য রেকর্ড গড়েছে টাইগাররা। বাংলাদেশই টেস্ট ইতিহাসের প্রথম দল যারা প্রথম ইনিংসে ৩০ রানের নিচে ৬ উইকেট হারানোর পরও টেস্ট জিতেছে। 

পাকিস্তানের দেওয়া ১৮৫ রানের লক্ষ্য সতর্ক পথে ৪ উইকেট হারিয়ে স্পর্শ করে নেয় লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। নাটকীয়তায় ভরা টেস্টে প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রান করেছিল স্বাগতিকরা। জবাব দিতে নেমে প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে চরম বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ওই অবস্থা থেকে লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের বিশ্ব রেকর্ড গড়া ১৬৫ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায়। লিটনের অনবদ্য ১৩৮ রানে ২৬২ রান তুলে ফেরে লড়াইয়ে। এরপর বোলারদের পালা।  দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানকে ১৭২ রানে আটকে দিতে বাংলাদেশের তিন পেসার মিলে নেন ১০ উইকেট। টেস্টে এই কৃতি বাংলাদেশের প্রথম। এরমধ্যে হাসান মাহমুদ নেন ইনিংসে পাঁচ উইকেট।

লিটন-মিরাজের ব্যাটিং বীরত্বের পর দ্বিতীয় ইনিংসের বোলিং দুর্দান্ত এক জয়ের পরিস্থিতি তৈরি করে দেয়। সেখানে হাসানের পাশাপাশি বড় ভূমিকা তরুণ পেসার নাহিদ রানার।

এই সিরিজের আগে এমন ফলের প্রত্যাশা খুব বেশি কেউ করেননি। তবে দারুণ প্রস্তুতি নিয়ে পরিকল্পিত ক্রিকেট আর নিখুঁত প্রয়োগে এসেছে অবিশ্বাস্য এক ফল।

১৮৫ রান তাড়ায় বড় ভুল না করলে পা হড়কানোর কথা ছিলো না। দুই ওপেনার ৫৮ রানের জুটি গড়ে দলকে ভালো শুরু এনে দেন। পঞ্চম দিন সকালের প্রথম ঘণ্টায় তারা দুজন ফিরলেও একটু একটু করে এগুতে সমস্যা হয়নি সফরকারী দলের।

পঞ্চম দিনে বিনা উইকেটে ৪২ রান নিয়ে নেমে প্রথম পাঁচ ওভার কোন সমস্যা হয়নি বাংলাদেশের। আগের দিন আক্রমণাত্মক মেজাজে রান বাড়ানো জাকির হাসান এগুচ্ছিলেন ফিফটির দিকে। তবে মির হামজার দারুণ বলে ফিরতে হয় তাকে। দিনের ৬ষ্ঠ ওভারে ৪০ রান করা ব্যাটারকে বোল্ড করে প্রথম উইকেট ফেলেন হামজা।

খানিক পর আরেকটি উইকেট পেতে পারত পাকিস্তান। হামজার বলেই ১৭ রানে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন সাদমান ইসলাম। বা দিকে ঝাঁপিয়ে হাতে জমিয়েও তা রাখতে পারেননি আঘা সালমান। জীবন পেয়ে অবশ্য আর ৭ রান যোগ করতে পারেন বাঁহাতি ওপেনার। খুররম শাহজাদের বলে মিড অফে সহজ ক্যাচে বিদায় নেন তিনি।

দলকে জয়ের দিকে নিতে এরপর অধিনায়ক শান্তর সঙ্গে জুটি গড়েন অভিজ্ঞ মুমিনুল হক। সময় নিয়ে ক্রিজে থিতু হন তারা। ধীরেসুস্থে খেলে নিরাপদে শেষ করেন  প্রথম সেশনের বাকিটা সময়। তৃতীয় উইকেটে দুজনের জুটিতে এসে গেছে ৫২ রান।

লাঞ্চ থেকে ফিরে অনেকটা সময় নিয়ে এগুচ্ছিল বাংলাদেশ। শান্ত আগল খুলে বেরুতে যান। থিতু থাকা বাংলাদেশ অধিনায়ক টানা ৮ ইনিংস পর টেস্টে ২০ পেরুনোর পর ফিফটির দিকে এগুচ্ছিলেন কিন্তু আঘা সালমানের অফ স্পিনে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে থামেন ৩৮ রান করে। ১২৭ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

মুশফিকুর রহিম উঠেই ছিলেন নড়বড়ে। তাকে আউট করতে দুবার রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হয় পাকিস্তান। আরেক প্রান্তে থিতু থাকা ব্যাটার মুমিনুল খেলছিলেন সাবলীলভাবে। কিন্তু আবরার আহমেদের বলে তুলে মারতে গিয়ে তিনি ৩৪ রান করে বিদায় নেন।

এরপর বাকি রান দলের সবচেয়ে দুই অভিজ্ঞ মুশফিক ও সাকিব তুলে নিয়ে দলকে পাইয়ে দেন স্মরণীয় জয়। মুশফিক ২২ ও সাকিব ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

People will have to take to the streets for voting rights: Fakhrul

People will have to take to the streets like they did on August 5 to realise their voting rights, said BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir today

1h ago