ফেনী: প্লাবিত প্রান্তরজুড়ে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ

স্ক্যাবিস রোগে আক্রান্তরা চুলকানিতে ভোগেন। মূলত দূষিত পানি ব্যবহার করলে এই রোগ হয়। রোগটি ছোঁয়াচে। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

ফেনীর বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। সেইসঙ্গে সুপেয় পানির অভাব ও নোংরা-দুর্গন্ধযুক্ত পানির স্পর্শ বাড়াচ্ছে ডায়রিয়া, চর্মরোগহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রকোপ।

১৪ বছর বয়সী রাশেদের দুই হাতের আঙুলগুলো র‍্যাশে ঢেকে গেছে। তার দাদি হোসনে আরা বেগম নাতিকে নিয়ে এসেছিলেন ছাগলনাইয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি অস্থায়ী স্বাস্থ্য শিবিরে।

হোসনে আরার ভাষ্য, তার নাতি এর আগে কখনো এই ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হয়নি। এই বৃদ্ধার ধারণা, বন্যার নোংরা পানির সংস্পর্শে এসেই রাশেদের এ ধরনের রোগ হয়েছে।

ওই অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পের একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে এই ধারণার সত্যতা পাওয়া গেল। তিনি জানালেন, রাশেদ স্ক্যাবিস রোগে আক্রান্ত। মূলত দূষিত পানি ব্যবহার করলে এই রোগ হয়। এই রোগে আক্রান্তরা চুলকানিতে ভোগেন। এবং রোগটি ছোঁয়াচে।

১২ বছর বয়সী সায়মাকেও একই রোগে ভুগতে দেখা গেল। তার পায়ের আঙুলগুলো র‌্যাশে ভরে গেছে। গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্তও সায়মাদের বাড়ির চারপাশ পানিতে থৈ থৈ করছিল। ফলে কোনো মেডিকেল টিম তখন পর্যন্ত ওই বাড়িতে পৌঁছাতে পারেনি।

এদিন দুপুর ৩টার দিকে সায়মার বাবা মোহাম্মদ মোস্তফা তাদের ঘরের সামনে ভিজে যাওয়া জিনিসপত্র পরিষ্কার করছিলেন। তিনি বলেন, 'বাড়ির জিনিসপত্র বাঁচাতে বাড়ির সবার সঙ্গে সায়মাকেও নোংরা পানির মধ্যে নেমে কাজ করতে হয়েছে। এই চুলকানি তারই ফল।'

এদিকে ফেনীর সিভিল সার্জন শিহাব রানাও দ্য ডেইলি স্টারকে জানালেন, পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ নিয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে আসছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ডায়রিয়ার রোগী।

বুধবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার গোপাল, রাধানগর ও শুভপুর ইউনিয়ন, পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ড এবং সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেও একই চিত্র দেখা যায়।

সিভিল সার্জন বলেন, 'বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সদর হাসপাতালে ১ হাজার ৮০৭ জন রোগীকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের বেশিরভাগই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত।' তিনি এও জানালেন যে, বন্যায় বিরূপ অবস্থার কারণে তারা এখনো রোগের ভিত্তিতে আক্রান্তদের তালিকা তৈরি করতে পারেননি।

এই চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণ, মূলত সুপেয় পানির অভাবই ডায়রিয়ার কারণ।

এদিকে এখনো পানিবন্দী গোপাল ও রাধানগর ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বন্যার ভেতর তারা কোনো ধরনের চিকিৎসাসেবা পাননি।

জেলা সিভিল সার্জনও বলছেন, এখন পর্যন্ত বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় তারা মেডিকেল টিম পাঠাতে পারেননি।

সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ফেনীতে ছয়টি হাসপাতাল এবং ৪১টি কমিউনিটি ক্লিনিকে বন্যাকবলিত মানুষের চিকিৎসা চলছে।

Comments

The Daily Star  | English
FY26 Bangladesh budget subsidy allocation 2025-26

FY26 Budget: Subsidy spending to hold steady

The budget for fiscal 2025-26 is likely to be smaller than the current year’s outlay, but subsidy spending is expected to remain almost unchanged at Tk 1,15,741 crore.

10h ago