টাকা উত্তোলন, ট্রান্সফার, এলসি খুলতে পারবে না এস আলম

চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ, এর সহযোগী কোম্পানি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্ট থেকে যেন কোনো অর্থ উত্তোলন করতে না দেওয়া হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধীন ছয়টি ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং পরিদর্শন বিভাগ-৭-এর দেওয়া এই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের অ্যাকাউন্টে সব ধরনের আমানত গ্রহণ করা যাবে।

ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ইতোমধ্যে তাদের শাখা এবং উপ-শাখাগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্দেশনা পৌঁছে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবসায়িক গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন শুরু করায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ব্যাংকগুলোর বোর্ড পুনর্গঠন হয়ে গেলে এসব অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি শিথিল করা হবে।

দেশের তিনটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছ থেকে দ্য ডেইলি স্টার জানতে পেরেছে, এস আলম গ্রুপ, এর সহযোগী কোম্পানি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তহবিল স্থানান্তর ও উত্তোলন বন্ধ রাখতে অন্যান্য ব্যাংকগুলোকেও মৌখিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকগুলোকে কোনো ঋণ নবায়ন না করতে এবং নতুন করে ঋণ প্রদান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো এস আলম ও এর সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও ব্যক্তিদের নামে পূর্বে অনুমোদিত ঋণও নতুন করে বিতরণ করবে না এবং এসব অর্থ উত্তোলন করতে দেবে না।

এস আলম গ্রুপ ও এর সহযোগীদের কোম্পানির পক্ষে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) না খুলতেও ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তবে ব্যাংকগুলো কোম্পানির অনুকূলে শতভাগ মার্জিনে এলসি খুলতে পারবে।

ব্যাংকগুলোকে তাদের ক্রেডিট কার্ড লেনদেন এবং দেশের বাইরে তহবিল স্থানান্তর বন্ধ রাখতেও বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাবেক রাজনীতিবিদ আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এবং সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আত্মীয় মোহাম্মদ সাইফুল আলম ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এস আলম গ্রুপ, যেটি বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

দেশে ভোজ্যতেল আমদানি ও প্রক্রিয়াজাতকারী চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম এই গ্রুপটি।

ন্যাশনাল ব্যুরো অব রেভিনিউয়ের আমদানি তথ্য অনুযায়ী, এই চারটি প্রতিষ্ঠান—এস আলম গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, সিটি গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপ—বাংলাদেশের মোট ভোজ্যতেলের বাজারের ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে।

এস আলম গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ ২০২৩ সালে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম চিনি আমদানিকারক। তাদের আমদানিকৃত চিনির পরিমাণ দেশের চাহিদার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ।

তথ্য অনুযায়ী, এস আলম গ্রুপ ও এর সহযোগী কোম্পানিগুলো ২০১৭ থেকে চলতি বছরের জুনের মধ্যে ছয়টি ব্যাংক থেকে অন্তত ৯৫ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার ৭৯ শতাংশই নেওয়া হয়েছে ইসলামী ব্যাংক থেকে।

রোববার এক পৃথক চিঠিতে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এস আলম, তার পরিবারের ১২ সদস্য ও তাদের কোম্পানির সার্বিক ব্যাংকিং কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে

পরিবারের ১২ সদস্যের মধ্যে রয়েছেন তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, দুই ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলম, ভাই ওসমান গনি, আবদুস সামাদ, রাশেদুল আলম, শহিদুল আলম, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাসান এবং মোরশেদুল আলম।

একইসঙ্গে এস আলমের ভাই ওসমান গণির স্ত্রী ফারজানা বেগম ও আবদুস সামাদের স্ত্রী শাহানা ফেরদৌসের অ্যাকাউন্টের বিবরণও চাওয়া হয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Crowd control: Police seek to stop use of lethal weapon

The police may stop using lethal weapons and lead pellets for crowd control as their widespread use during the July mass uprising led to massive casualties and global criticism.

8h ago