ফেনীতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৮ লাখ মানুষ, কমছে না দুর্ভোগ

ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির শনিবারের চিত্র। ছবি: স্টার

এবারের বন্যায় ফেনীতে আট লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফেনী শহরসহ পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়াতে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে, সদর উপজেলা, সোনাগাজী ও দাগনভূঞাতে বন্যা পরিস্থিতি এখনো অবনতির দিকেই রয়েছে। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় মানুষের দুর্ভোগও কমছে না।

রোববার সন্ধ্যায় ফেনী জেলা প্রশাসন সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, দেড় লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র বা স্বজনদের দোতলা বা বহুতল ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। ইতোমধ্যে বন্যাকবলিতদের মাঝে ৬০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা হেলিকপ্টার থেকে ৩৮ হাজার প্যাকেট খাবার বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দিয়েছেন। পাশাপাশি বহু বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নানাভাবে বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে শুকনো খাবার-পানি পৌঁছে দিয়েছেন।

ফেনী শহরে তিনদিন পর কয়েকটি সড়ক থেকে পানি নেমেছে রোববার। শহরের উকিল পাড়ার বাসিন্দা ওমর বিন হোসাইন জানান, গত শুক্রবার তার বাসার একতলায় পানিতে ডুবে ছিল। রোববার সকালে পানি সরে গেছে। 
মিজান রোডের বাসিন্দা বদরুল আমীন জানান, তার বাসা থেকে পানি নেমে গেছে। তবে, বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় বিপত্তি রয়ে গেছে।

বিশুদ্ধ পানির খোঁজে শহরের ট্রাঙ্করোডে আসা অ্যাকাডেমি এলাকার বাসিন্দা হারুন রশিদ জানান, গত দুইদিন সেখানে কয়েক ফুট উচ্চতার বেশি বন্যার পানি প্রবাহিত হয়েছে। এখন কমে নিচতলায় হাঁটুজল রয়েছে।

পরশুরামের সত্যনগরের বাসিন্দা আবু ইউসুফ মিন্টু জানান, তার ঘর থেকে পানি নেমে গেলেও দুর্ভোগ কমেনি। বরং বেড়েছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। এলাকায় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে।

দাগনভূঞা শহরতলীর বাসিন্দা ও গণমাধ্যমকর্মী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বৃহস্পতিবার তার ঘরে পানি ঢুকেছে। এরপর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেছেন। পানি শনিবার রাতেও বেড়েছে।

জেলায় বন্যার কারণে হতাহতের বিষয়ে জেলা প্রশাসক জানান, মঙ্গলবার রাত থেকে সবমিলিয়ে ১০ জনের মতো মারা গেছেন বলে নানাভাবে বলা হলেও প্রকৃত তথ্য বন্যার পানি সরে গেলে সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে। নিখোঁজের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যও নেই।

সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের বক্তারমুন্সির বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা জুলফিকার আলি জানান, দুইদিন ধরে তারা পানিবন্দি হয়ে আছেন।

মতিগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা ও গণমাধ্যমকর্মী সাহেদ সাব্বির জানান, সেখানে সব জায়গা শুধু পানি। শুকনো স্থান চোখে পড়ছে না।

বগাদানা ইউনিয়নের মাস্টার আবু তৈয়ব জানান, বৃহস্পতিবার রাতেই তাদের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। রোববার একটু কমেছে। তবে ঘরগুলোতে এখনো পানি। সবাই অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।

বন্যাদুর্গত এলাকায় স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্ধার তৎপরতা উল্লেখযোগ্য হারে দেখা গেছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বন্যার্তদের উদ্ধার ও শুকনো খাবার সহায়তায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার।

তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, র‍্যাব, ফায়ার সার্ভিস এবং ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে উদ্ধারকাজ চলমান। নৌকা ছাড়াও হেলিকপ্টারের মাধ্যমেও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, জেলার অধিকাংশ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক এখনো অচল রয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অনেককেই অন্ধকারে রাত কাটাতে হচ্ছে। মোমবাতিও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না কিংবা পেলেও দাম অনেক বেশি বলে জানান স্থানীয়রা।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

13h ago