দ্য ডেইলি স্টারের অনুসন্ধান: কাউন্সিলরের অবৈধ সিগারেট বাণিজ্য

আবদুস সবুর লিটন। ছবি: সংগৃহীত

দেশের অবৈধ সিগারেট বাজারের একটা বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে দুটি প্রতিষ্ঠান। আর এ দুই প্রতিষ্ঠানের বড় অংশের মালিক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) কাউন্সিলর আবদুস সবুর লিটন ও তার ভাই।

দ্য ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিষ্ঠান দুটি হলো—বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো ও তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানি দুটি সিগারেটের প্যাকেটে নকল 'ব্যান্ড রোল' লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে আসছে বলে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) চলমান একটি তদন্ত সূত্রে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই দুটি কোম্পানি ওরিস ও ইজি লাইটসের মতো বিদেশি ব্র্যান্ডের সিগারেটের 'নকল' সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেট তৈরি করছে যা ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোতে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রভাবশালী অনেকের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান তারা।

গত ২১ মে সিআইসি ও শুল্ক গোয়েন্দারা কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় বিজয় ইন্টারন্যাশনালের কার্যালয়ে অভিযান চালায়। সেখান থেকে জব্দ করা নথি ও শুল্ক কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, অবৈধভাবে আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে সিগারেট তৈরিতে তামাক কোম্পানির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

এর আগে ৯ মে শুল্ক গোয়েন্দারা তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোতে অভিযান চালায়। নথিপত্র থেকে জানা যায় যে, এই প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ শেয়ার কাউন্সিলর লিটনের।

ছবি: সংগৃহীত

রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের (আরজেএসসি) কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে লিটন ও তার ভাই আব্দুল মান্নান খোকন বিজয় ইন্টারন্যাশনালের ২০ হাজার শেয়ারের সবগুলোর মালিক হন, যার প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ১০০ টাকা।

তবে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই দুই ভাইয়ের শেয়ার ছিল ৬০ শতাংশ এবং বাকি ৪০ শতাংশ শেয়ার ছিল অপর একটি কোম্পানির। বেসরকারি বিনিয়োগকারী ওই প্রতিষ্ঠানটি সে বছরের ১০ ডিসেম্বর দুই ভাইয়ের কাছে তার শেয়ারগুলো হস্তান্তর করে। যদিও আরজেএসসিতে এখনো শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়টি নথিভুক্ত হয়নি।

কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ধরনের জালিয়াতি বা নথিপত্র অসম্পূর্ণ না থাকলে শেয়ার হস্তান্তরের তারিখেই তা কার্যকর হয়। কোম্পানি আইন নিয়ে কাজ করেন এমন এক আইনজীবী ডেইলি স্টারকে বলেন, শেয়ার হস্তান্তর অনুমোদনের বিষয়টি আরজেএসসি ওপর নির্ভর করে।

কাউন্সিলর আবদুস সবুর লিটন বন্দরনগরীর আওয়ামী লীগের একটি ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক। নথিপত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের মার্চে ৪০ লাখ টাকার প্রস্তাবিত প্রাথমিক মূলধনী প্রতিষ্ঠান তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর ৭০ শতাংশ শেয়ারের মালিক হন লিটন। তার সঙ্গে বাকি ৩০ শতাংশের অংশীদার হন চট্টগ্রামের ওমর ফারুক সিদ্দিকী।

গত ২১ মে কক্সবাজারের বিজয় তামাকের কারখানায় অভিযান চালায় সিআইসি ও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। ছবি: সংগৃহীত

নকল সিগারেট চক্র

বিজয় ও তারা টোব্যাকো থেকে জব্দ করা আমদানির নথি ও স্থানীয়ভাবে ক্রয়ের নথি বিশ্লেষণ করে সিআইসি সন্দেহ করছে যে, এ দুটি প্রতিষ্ঠান বেনামে কিছু আমদানিকারকের সহায়তায় সিগারেটের কাঁচামাল আমদানির মাধ্যমে কর ফাঁকি দিয়ে আসছে।

জাতীয় তামাক কর নীতি ২০২১-৩০ অনুযায়ী, সিগারেট প্রস্তুতকারক ছাড়া অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য তামাকের কাঁচামাল আমদানি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

তবে, বেশ কয়েকটি ট্রেডিং কোম্পানি সিগারেটের জন্য বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানি করে। সিগারেট তৈরির যে তিন প্রধান উপাদান আমদানি করা হয় তা হলো—সিগারেটের ফিল্টারের জন্য তুলার মতো অ্যাসিটেট টো, পরিশোধিত তামাক এবং সিগারেট মোড়ানোর জন্য কাগজ।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে গত ২ বছরে ১১টি প্রতিষ্ঠান সিগারেট উৎপাদনের মূল উপাদান হিসেবে ৫ হাজার ৯০৬ টন কাঁচামাল আমদানি করে।

এই ১১ আমদানিকারকের কেউ প্রস্তুতকারক নয়। কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের মধ্যে অন্তত চার আমদানিকারক বিজয় ও তারা টোব্যাকোকে অবৈধভাবে তাদের আমদানি করা কাঁচামাল সরবরাহ করেছে।

সিআইসি কর্মকর্তারা ডেইলি স্টারকে বলেন, এই আমদানিকারকরা যত কাঁচামাল আমদানি করেছে তা দিয়ে কমপক্ষে ২৯৫ কোটি সিগারেটের শলাকা তৈরি করা সম্ভব। সরকার এখানে অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। কারণ কোম্পানিগুলো কোনো ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক দেয়নি।

এসব কাঁচামালের বেশিরভাগই চীন, মালয়েশিয়া, জার্মানি, ভারত, হংকং ও ইন্দোনেশিয়া থেকে এসেছে বলে নথিপত্রে দেখা গেছে।

কোম্পানিগুলো হলো—এসবি ট্রেডার্স, মেসার্স অনিক এন্টারপ্রাইজ, র‌্যাপিড মার্কেটিং, র‌্যাপিড প্যাক লিমিটেড, মেসার্স ওসমান ট্রেডিং, আরএইচ ট্রেডার্স, সাদ ইন্টারন্যাশনাল, আলম ট্রেডার্স, একে এন্টারপ্রাইজ, স্টার ইম্পেক্স ও সিআর সেভেন ট্রেডিং।

সিআইসির তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এগুলোর বেশিরভাগই 'ফ্যান্টম' কোম্পানি, অর্থাৎ সবার সামনে এদের রেখে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছে কেউ।

গত দুই সপ্তাহে দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক ঢাকা ও চট্টগ্রামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত ঠিকানায় গিয়েও কোম্পানির কোনো খোঁজ পায়নি।

গত ৯ মে থেকে ২১ মে'র মধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জে র‌্যাপিড প্যাক লিমিটেড এবং চট্টগ্রামের একে এন্টারপ্রাইজের গুদামে অভিযান চালিয়ে সিগারেট উৎপাদনে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল জব্দ করা হয়।

এরপর এ দুই কোম্পানির গুদাম সিলগালা করে দেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।

র‌্যাপিড প্যাক এবং একে এন্টারপ্রাইজের আমদানি, ক্রয় ও বিক্রয় রেকর্ড বিশ্লেষণ করে বিজয় ও তারা ইন্টারন্যাশনালে অভিযান চালানো হয়।

নথিতে দেখা গেছে, র‌্যাপিড প্যাক, র‌্যাপিড মার্কেটিং, একে এন্টারপ্রাইজ, আলম ট্রেডার্স তাদের আমদানি করা কাঁচামাল বিজয় ও তারাকে সরবরাহ করে, যা ছিল বেআইনি। কারণ শুধু উৎপাদক প্রতিষ্ঠান এই ধরনের কাঁচামাল আমদানি করতে পারে।

গত ২১ মে বিজয় ইন্টারন্যাশনালে এনবিআরের সিআইসি এবং বন্দরনগরীর শুল্ক গোয়েন্দার একটি যৌথ দল অভিযান চালায়। সেখানেও এসব চারটি ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের ক্রয়-বিক্রয়ের নথিপত্র পাওয়া যায়।

বর্তমানে একে এন্টারপ্রাইজের আমদানি করা বিদেশি ব্র্যান্ড 'ওরিস' লেখা ৭ দশমিক ৫৬ টন সিগারেটের ফয়েল পেপার চট্টগ্রাম কাস্টমসের কাছে জব্দ আছে। শুল্ক কর্মকর্তারা বলছেন, একে এন্টারপ্রাইজ 'কোটেড পেপারের' মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এগুলো আমদানি করেছিল।

জিজ্ঞাসাবাদে একে এন্টারপ্রাইজের মালিক একেএম জিয়াউদ্দিন কাস্টমস কর্মকর্তাদের জানান, কাউন্সিলর লিটনের জন্য তিনি এসব পণ্য আমদানি করেন। এজন্য তিনি অগ্রিম টাকাও পেয়ে থাকেন।

জানতে চাইলে জিয়াউদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মিথ্যা ঘোষণাটি অনিচ্ছাকৃত ছিল। আমি তারা ইন্টারন্যাশনালের জন্য ওরিস ব্র্যান্ডের ফয়েল পেপার চীন থেকে আমদানি করেছি।'

লিটনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনিও চালানের অগ্রিম টাকা দেওয়ার কথা ডেইলি স্টারের কাছে স্বীকার করেছেন।

তিনি অবশ্য অবৈধ পণ্য তৈরির কথা স্বীকার করেননি। কিন্তু একে এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে ওরিস সিগারেটের ফয়েল কেনার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, 'উৎপাদনের জন্য সব ভ্যাট ও শুল্ক পরিশোধ করা হয়েছে।'

জিয়াউদ্দিনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুল্ক কর্মকর্তারা ৯ মে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে তারা ইন্টারন্যাশনালের কারখানায় অভিযান চালিয়ে 'বিপুল পরিমাণে' ওরিস ব্র্যান্ডের নকল সিগারেট জব্দ করে।

সিআইসির এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই ১১টি ট্রেডিং কোম্পানির মধ্যে অন্তত চারটি কোম্পানি অবৈধভাবে বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো এবং তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর জন্য সিগারেটের কাঁচামাল আমদানি করেছে।'

এনবিআর থেকে পাওয়া আমদানি তথ্যের সঙ্গে তার বক্তব্যের মিল আছে। গত দুই বছরে অবৈধভাবে আমদানি করা ৫ হাজার ৯০৬ টন কাঁচামালের মধ্যে প্রায় ৬১ শতাংশ বা ৩ হাজার ৫৮৩ টন আমদানি করেছে এই চারটি কোম্পানি।

বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম গত ১৬ মে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সিআইআইডি) এবং ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগকে অবৈধ আমদানির প্রকৃত সুবিধাভোগীদের খুঁজে বের করতে সিআইসিকে সহযোগিতার নির্দেশ দেন।

পরে ১৯ মে এনবিআর সব নিবন্ধিত ব্যাংককে চিঠি দিয়ে ওই ১১ আমদানিকারক ও তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকিং নথি ও অ্যাকাউন্টের তথ্য সরবরাহ করতে বলে।

এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, গত দুই বছরে ১১টি ট্রেডিং কোম্পানির কোনোটিই ট্যাক্স ও ভ্যাট রিটার্ন জমা দেয়নি, যা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল।

ছবি: সংগৃহীত

অবৈধ বিপণন

গত বছরের ডিসেম্বরে বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এনবিআরকে একাধিক চিঠি পাঠিয়ে জানায়, বিজয় ইন্টারন্যাশনালের 'এক্সপ্রেস' এবং তারা ইন্টান্যশনালের 'পিকক' নামে দুটি ব্র্যান্ড নাম দিয়ে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, কুড়িগ্রাম, ফেনী, কুষ্টিয়া, লালমনিরহাটের গ্রাম এলাকায় নকল সিগারেট সরবরাহ করা হচ্ছে।

চিঠির একটি কপি ডেইলি স্টারের কাছে এসেছে। এতে দেখা গেছে, এক্সপ্রেস ও পিকক সিগারেটের ১০ শলাকার প্যাকেট ১৫-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা সরকার নির্ধারিত ১০ শলাকার প্যাকেটের খুচরা মূল্য ৪৫ টাকার চেয়ে অনেক কম। এসব প্যাকেটের অনেকগুলোতে ব্যান্ড রোল লাগানো নেই, কিছু প্যাকেটে আবার নকল ব্যান্ড রোল।

আবদুস সবুর লিটন অবশ্য স্বীকার করেছেন যে, মাঝে মাঝে তার নিজস্ব ব্র্যান্ডের সিগারেট কম দামে বিক্রি করা হয়।

২০২২ সালে এনবিআরের কাছে পাঠানো একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বিজয়, তারা ও লিটনের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, 'তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর বিরুদ্ধে অতীতে নকল ব্যান্ড রোল ব্যবহারের অভিযোগ আছে।'

নকল সিগারেট তৈরির কারখানা। ছবি: সংগৃহীত

'হুবহু একরকম'

বন্দরনগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার সিগারেটের পাইকারি বাজার। এটি অবৈধ সিগারেটেরও পাইকারি বাজার।

বাজারের অন্তত তিন জন পাইকারি ব্যবসায়ী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তাদের কাছে ওরিস, পেট্রন ও ইজি লাইটসহ বিদেশি ব্র্যান্ডের আসল ও নকল সিগারেট আছে।

তারা আরও জানান, দাম কম হওয়ায় ভোক্তাদের কাছে নকল সিগারেটের চাহিদা বেশি।

এক ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাইলে তিনি নকল প্যাকেট কীভাবে শনাক্ত করতে হয় তাও দেখান। তিনি বলেন, কেউই সাধারণত আসল ও নকলের পার্থক্য করতে পারেন না।

তিনি বলেন, 'দুইটাই দেখতে হুবহু এক। কিন্তু মান আলাদা। নকল প্যাকেট খুললে একটা বাজে গন্ধ পাওয়া যায়, আসল প্যাকেট থেকে সেটা পাওয়া যায় না।'

লিটনের মালিকানাধীন দুটি কারখানাসহ সন্দেহজনক আরও কিছু কারখানায় অভিযানের পর গত দুই সপ্তাহে রিয়াজউদ্দিন বাজারে কিছু বিদেশি ব্র্যান্ডের 'নকল' সিগারেট সরবরাহ ব্যাপকভাবে কমে গেছে।

আমদানি প্রতিষ্ঠান থেকে সিগারেটের কাঁচামাল কেনার বিষয়ে লিটন বলেন, 'এগুলো কীভাবে আসে সে সম্পর্কে আমার জানা নেই। আমি ওয়ার্ক অর্ডার দেই, তারা কাঁচামাল সরবরাহ করে।'

'কাস্টমস কর্মকর্তারা ওরিস ব্র্যান্ডের যে সিগারেটগুলো জব্দ করেছেন সেগুলো রেগুলার আকারের, আসল বিদেশি ব্র্যান্ডের মতো চিকন নয়। ওরিস ব্র্যান্ডের সিগারেট জনপ্রিয়। কিন্তু আসল ওরিস কোম্পানি যদি কোনো আপত্তি তোলে তাহলে আমি এর উৎপাদন বন্ধ করে দেব। ইজি লাইট, ওরিস ও অন্যান্য চিকন সিগারেট তৈরির অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমার কাছে সেগুলো উৎপাদনের যন্ত্রপাতিও নেই,' বলেন লিটন।

সিআইসির কর্মকর্তারা বলছেন, বাজারে যেসব অবৈধ সিগারেট পাওয়া গেছে তা বন্দরে আটক হওয়া এবং লিটনের কারখানায় পাওয়া ওরিস সিগারেট পেপারের সাথে মিল রয়েছে।

নকল সিগারেট তৈরির কারখানা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে অবৈধ সিগারেটের ব্যবসা

নকল ও অবৈধ সিগারেট ব্যবসার বাজার বাংলাদেশ খুব একটা বড় নয়। কিন্তু দিন দিন এর আকার বাড়ছে।

বিশ্বব্যাপী সিগারেটের মোট বাজারের প্রায় ১০ শতাংশ অবৈধ বলে ধারণা করা হয়।

বাংলাদেশের অবৈধ সিগারেটের সর্বশেষ তথ্য পাওয়া না গেলেও, বিশ্বব্যাংকের ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ সালে বাংলাদেশের অবৈধ সিগারেটের ব্যবসা ছিল বাজারে বিক্রি হওয়া মোট সিগারেটের প্রায় দুই শতাংশ বা প্রায় দেড় বিলিয়ন শলাকা।

ওই বছর লাটভিয়ায় অবৈধ সিগারেটের বাজার ছিল মোট বাজারের ৫০ শতাংশ, পাকিস্তানে ৩৮ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ৩৬ শতাংশ এবং ভারতে ১৭ শতাংশ ছিল।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২০১৬-১৭ সালে সিগারেটের বাজারের ২ শতাংশ অবৈধ হলেও, বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী তা ছিল দুই বছর আগের তুলনায় তিন গুণ বেশি। ২০১৪-১৫ সালে দেশের সিগারেটের বাজারের মাত্র শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ ছিল অবৈধ।

এই অবৈধ সিগারেটের প্রায় ৯২ শতাংশ কর ফাঁকি দেওয়া। বাকি ৮ শতাংশ চোরাকারবারি করে আনা ও নকল। অবৈধ সিগারেটের ব্যবসার কারণে সরকার প্রতিবছর প্রায় ১০০ মিলিয়ন রাজস্ব হারায়, যা মোট তামাক ও তামাকজাত পণ্য থেকে সরকারে আয়ের প্রায় ৪ শতাংশ বলে সমীক্ষায় দেখা গেছে।

তবে এনবিআর কর্মকর্তারা ডেইলি স্টারকে জানান, বর্তমানে বাজারে আসা সিগারেটের ৮-১০ শতাংশই অবৈধ এবং বিজয়, তারা এবং তদন্তাধীন ১১ প্রতিষ্ঠানের এই চক্র দেশের অবৈধ সিগারেটের বাজারের একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।

Comments

The Daily Star  | English

Cyber protection ordinance: Draft fails to shake off ghosts of the past

The newly approved draft Cyber Protection Ordinance retains many of the clauses of its predecessors that drew flak from across the world for stifling freedom of expression.

6h ago