৭ অক্টোবর হামাসের হামলা নিয়ে ইসরায়েলি বক্তব্যের বেশিরভাগই মিথ্যা: আল-জাজিরার অনুসন্ধান

আল জাজিরার আই-ইউনিটের অনুসন্ধানের ওপর ভিডিও প্রতিবেদন '৭ অক্টোবর' প্রকাশ করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের ইসরায়েলে অনুপ্রবেশের পর হামলার ঘটনাগুলোর ফরেনসিক বিশ্লেষণ করেছে আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট (আই-ইউনিট)।

ওইদিন হামাস যোদ্ধারা রকেট হামলা চালায় এবং ইসরায়েলে ঢুকে বেশ কিছু এলাকায় হামলা চালায়। হামলায় বেশ কয়েকজন নিহতের পাশাপাশি ইসরায়েলসহ বেশ কিছু দেশের শতাধিক নাগরিককেকে অপহরণের পর জিম্মিও করে হামাস। 

ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ অসংখ্য অভিযোগ আনা হয় হামাসের বিরুদ্ধে। কিন্তু আই-ইউনিটের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব অভিযোগের অনেকগুলোই মিথ্যা।

সেদিনের সিসিটিভি ফুটেজ, ড্যাশক্যাম, ব্যক্তিগত ফোন এবং নিহত হামাস যোদ্ধাদের হেডক্যামের ফুটেজ পরীক্ষা করে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে আই-ইউনিট।

আই-ইউনিট তাদের অনুসন্ধানের ওপর একটি ভিডিও প্রতিবেদন '৭ অক্টোবর' ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার আল-জাজিরাও প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

সেসময় ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, হামাস সেদিন ইসরায়েলে গণহত্যা চালিয়েছে এবং তারা শিশুদের পর্যন্ত শিরশ্ছেদ করেছে। সেইসঙ্গে ধর্ষণের অভিযোগও আনা হয়েছিল হামাসের বিরুদ্ধে।

শুধু ইসরায়েল নয়, পশ্চিমা বিশ্বের অনেক নেতারাও এমন অভিযোগের পক্ষে সাফাই গেয়ে পরবর্তীতে গাজায় ইসরায়েলি হামলাকে সমর্থন দিয়ে যায়। যার ফলে ৭ অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছিল, ৭ অক্টোবর কিবুতজ বেরির একটি বাড়িতে আট শিশুর দগ্ধ মরদেহ পাওয়া যায়। কিন্তু প্রাপ্ত সব তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের পর আই-ইউনিট মনে করছে ওই দাবি মিথ্যা। 

আই-ইউনিটের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ওই বাড়িতে সেদিন কোনো শিশু ছিল না। বরং ওই বাড়িতে থাকা ১২ জন প্রায় নিশ্চিতভাবেই ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের সময় নিহত হয়।

এ ঘটনার মতো আরও বেশ কিছু ঘটনা সেদিন ঘটেছে, যেখানে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ইসরায়েলি নাগরিকদের হত্যা করেছে বলে অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে। 

আই-ইউনিট এমন ১৯ জন নিহত হওয়ার ঘটনা চিহ্নিত করতে পেরেছে। তবে এভাবে নিহত হওয়া ইসরায়েলিদের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২৭ জিম্মি তাদের বাড়ি ও গাজার সীমানার মধ্যে মারা গেছেন। তাদের মৃত্যু ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

ইসরায়েলি অ্যাপাচি হেলিকপ্টারের বন্দুকের ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, গাজায় ফিরে যাচ্ছে এমন গাড়ি ও মানুষের ওপর অসংখ্য হামলা হয়েছে।

সাবেক ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা এবং মানবাধিকার গবেষক ক্রিস কোব-স্মিথ বলেছেন, 'এই ফুটেজ নিয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, আমরা বলতে পারব না যে তারা হামাস যোদ্ধা নাকি জিম্মি। এবং আমি বিশ্বাস করি না যে হেলিকপ্টার পাইলট বা মেশিনগান অপারেটরদের কেউ তা বলতে পারবে।'

ইসরায়েলি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাকার দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডার ইয়োসি ল্যান্ডউ ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলা নিয়ে গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যেসব দাবি করেছেন, আই-ইউনিট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সেগুলোকে যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ বলে উল্লেখ করছে।

'ব্যাপক ও সিস্টেম্যাটিক' ধর্ষণের যেসব অভিযোগ উঠেছে, আই-ইউনিট সেগুলোও পরীক্ষা করে দেখেছে। এসব অভিযোগের সমর্থনে পর্যাপ্ত প্রমাণ দিতে পারেনি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। তবে বিচ্ছিন্নভাবে ধর্ষণ সংঘটিত হতে পারে বলে উপসংহারে পৌঁছেছে অনুসন্ধানকারীরা।

উইমেন'স ইন্টারন্যাশনাল লীগ ফর পিস অ্যান্ড ফ্রিডমের জেনারেল সেক্রেটারি ম্যাডেলিন রিস বলছেন, 'ব্যাপক ও সিস্টেম্যাটিক' বলতে হলে এখন পর্যন্ত যতটা প্রমাণ পাওয়া গেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রমাণের প্রয়োজন।

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

52m ago