কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ডিবির ৬ সদস্য সাময়িক বরখাস্ত
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজতে থাকা এক ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকে তিন কোটি টাকা মূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি ও বাংলাদেশি ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ডিবির ছয় সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার রাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তদন্ত কমিটির ফলাফলের ভিত্তিতে তাদের বরখাস্তের আদেশে সই করেছেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) স্পিনা রানী প্রামাণিক দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, 'অপরাধে জড়িত থাকায় ডিবির ছয় সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট ডিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে।'
ডিবির ওই ছয় সদস্য হলেন—উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর হোসেন, এএসআই বাবুল মিয়া, শাহ পরান জান্নাত ও মইনুল হোসেন এবং কনস্টেবল জাহিদুর রহমান ও আবদুর রহমান।
আর অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনার সময় ডিবি দলের নেতৃত্বে থাকা ইন্সপেক্টর রুহুল আমিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
তদন্ত শেষে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আসিফ মহিউদ্দিন এ প্রতিবেদন দেন। এতে বলা হয়েছে, সেই ডিবি টিমের হেফাজতে থাকার সময় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী আবু বক্কর সিদ্দিক সরকারি নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সার। বন্দরনগরীর অক্সিজেন এলাকায় তার বাসা। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে গুলবাগ আবাসিক এলাকা থেকে তাকে ও বন্ধু ফয়জুল আমিনকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি উত্তর দক্ষিণের পরিদর্শক মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে একটি দল।
সেখান থেকে তাদের নগরীর গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে অনলাইনে জুয়া খেলার অভিযোগে আবু বক্কর ও ফয়জুলকে নন-এফআইআর প্রসিকিউশনের মাধ্যমে আদালতে হাজির করা হয়।
জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ২৯ ফেব্রুয়ারি আবু বক্কর অভিযোগ করেন, তার মোবাইল ফোনে তার হাতের ছাপ নিয়ে অনলাইন অ্যাপসের মাধ্যমে ডিবি পুলিশের সদস্যরা কোটি টাকার বিট কয়েন সরিয়ে নিয়েছে অন্য কোনো অ্যাকাউন্টে।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তড়িঘড়ি করে ঘটনার পাঁচ দিন পর ২ মার্চ আবু বক্কর ও গোয়েন্দা পুলিশের দুই সোর্সসহ তিনজনকে আসামি করে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের অভিযোগে মামলা করে ডিবি।
বায়েজিদ থানায় ডিবির এসআই মো. আলমগীর হোসেনের করা ওই মামলায় আবু বক্কর ছাড়াও পুলিশের সোর্স মো. কাউসার আহম্মদ (৩৫) ও শাহাদাত হোসেনকে (৩৫) আসামি করা হয়। ফ্রিল্যান্সার আবু বক্করকে পলাতক দেখিয়ে এবং সোর্স কাউসারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে চালান করে ডিবি।
এদিকে আবু বক্করকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগে গত ৫ মার্চ আট পুলিশ সদস্যসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন আবু বক্করের স্ত্রী হুসনুম মামুরাত লুবাবা।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তভার দিয়েছেন।
এই ঘটনার পর বর্তমানে সিএমপির দুই জোনের (বন্দর-পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণ) ডিবির কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সিএমপির একাধিক কর্মকর্তা।
Comments