ডিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘কোটি টাকার বিটকয়েন হাতিয়ে নেওয়া’র সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি

সিএমপির লোগো

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় এক ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকে তিন কোটি টাকার ক্রিপ্টোকারেন্সি হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পুলিশ সদস্যদের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে।

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আসিফ মহিউদ্দিন এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এতে বলা হয়েছে, সেই ডিবি টিমের হেফাজতে থাকার সময় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে অভিযোগের ঘটনায় ডিবি সদস্যদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো।'

'এটি সিএমপির চিত্রকে কলঙ্কিত করেছে। আমরা কাউকে রেহাই দেবো না', বলেন তিনি।

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা হলেন—ডিবির পরিদর্শক রুহুল আমিন, উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর হোসেন, এএসআই বাবুল মিয়া, শাহ পরান জান্নাত ও মো. মাইনুল হোসেন এবং কনস্টেবল মো. জাহেদ ও আব্দুর রহমান। তাদের সবাইকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত রাখা হয়েছে।

তাদের মধ্যে রুহুল আমিন পুরো ঘটনার নেপথ্যে কাজ করেছেন এবং এএসআই বাবুল মিয়া দুই সোর্সের মাধ্যমে বিটকয়েন সরিয়ে নিয়েছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। তবে ঠিক কতজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, তা নিশ্চিত করেনি পুলিশ।

তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির প্রধান আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, 'এটি যেহেতু তদন্ত কমিটির অভ্যন্তরীণ বিষয়, তাই আমি মন্তব্য করতে চাই না।'

ভুক্তভোগী আবু বক্কর সিদ্দিক সরকারি নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সার। বন্দরনগরীর অক্সিজেন এলাকায় তার বাসা। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে গুলবাগ আবাসিক এলাকা থেকে তাকে ও বন্ধু ফয়জুল আমিনকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি উত্তর দক্ষিণের পরিদর্শক মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে একটি দল।

সেখান থেকে তাদের নগরীর গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে অনলাইনে জুয়া খেলার অভিযোগে আবু বক্কর ও ফয়জুলকে নন-এফআইআর প্রসিকিউশনের মাধ্যমে আদালতে হাজির করা হয়।

জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ২৯ ফেব্রুয়ারি আবু বক্কর অভিযোগ করেন, তার মোবাইল ফোনে তার হাতের ছাপ নিয়ে অনলাইন অ্যাপসের মাধ্যমে ডিবি পুলিশের সদস্যরা কোটি টাকার বিট কয়েন সরিয়ে নিয়েছে অন্য কোনো অ্যাকাউন্টে।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তড়িঘড়ি করে ঘটনার পাঁচ দিন পর ২ মার্চ আবু বক্কর ও গোয়েন্দা পুলিশের দুই সোর্সসহ তিনজনকে আসামি করে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের অভিযোগে মামলা করে ডিবি।

বায়েজিদ থানায় ডিবির এসআই মো. আলমগীর হোসেনের করা ওই মামলায় আবু বক্কর ছাড়াও পুলিশের সোর্স মো. কাউসার আহম্মদ (৩৫) ও শাহাদাত হোসেনকে (৩৫) আসামি করা হয়। ফ্রিল্যান্সার আবু বক্করকে পলাতক দেখিয়ে এবং সোর্স কাউসারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে চালান করে ডিবি।

এদিকে আবু বক্করকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগে গত ৫ মার্চ আট পুলিশ সদস্যসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন আবু বক্করের স্ত্রী হুসনুম মামুরাত লুবাবা।

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তভার দিয়েছেন।

এই ঘটনার পর বর্তমানে সিএমপির দুই জোনের (বন্দর-পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণ) ডিবির কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সিএমপির একাধিক কর্মকর্তা।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

10h ago