ওজন কমানোর ১০ মানসিক কৌশল

ওজন কমানোর মানসিক কৌশল
ছবি: সংগৃহীত

ওজন একবার বেড়ে গেলে কমানো বেশ কষ্টসাধ্য। বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন ওজন কমানোর বিষয়টি পুরোপুরি শারীরিক। ব্যায়াম এবং কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়ার মাধ্যমেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ওজন কমানো যাত্রাটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নির্ভর করে মানসিক কৌশল ও দৃঢ়তার ওপর।

মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে পারলেই কেবল ওজন কমানো সম্ভব। তা না হলে দুই-তিনদিন ডায়েট পরিকল্পনা অনুসরণ করে আবার ফিরে যাবেন আগের রুটিনে। ওজন আর কমানো হবে না।

এখানে এমন কিছু মানসিক কৌশলের কথা তুলে ধরা হলো, যেগুলো ওজন কমানোর যাত্রায় আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করবে।

অতিরিক্ত কঠিন রুটিন বানাবেন না

ওজন কমানোর যাত্রা শুরুর আগে উৎসাহ থাকে অনেক বেশি। ফলে বাস্তবতা চিন্তা না করে  মেনে চলা খুব কঠিন হবে এমন পরিকল্পনা করে ফেলেন অনেকেই। ফলে কয়েক দিন পরই ক্লান্তি আর বিরক্তি চলে আসে। হাল ছেড়ে দিয়ে ওজন কমানোর চিন্তা বাদ দিয়ে দেন অনেকে তখন। সেজন্য পরিকল্পনা করার সময় হুট করে অতিরিক্ত কঠিন রুটিনে চলে যাওয়া যাবে না। শুরুতেই এক ঘণ্টা ব্যায়াম রুটিনে নিয়ে আসবেন না বা আগে যা খেতেন তার অর্ধেক খাওয়া শুরুর করবেন না। শরীরকে এবং একইসঙ্গে মনকেও পরিবর্তনের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে দিন। আস্তে আস্তে ব্যায়ামের সময় বাড়ান এবং খাবারের পরিমাণ কমান।

খাবার যেন বিস্বাদ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন

ডায়েটে গিয়ে ক্রমাগত বিস্বাদ খাবার খেতে থাকলে অরুচি চলে আসলে মুশকিল। কারণ তখন আমাদের ভোজনবিলাসী মন লোভী হয়ে যায়। হুট করে অস্বাস্থ্যকর এটা-সেটা খেয়ে ফেলা হয়। তাই স্বাস্থ্যকর খাবারটাকে একটু মজাদার করার চেষ্টা করুন। যেমন: ডিম খেলে সেটা সবসময় একভাবে না খেয়ে ভিন্ন ভিন্ন রেসিপি করে খেতে পারেন। কেউ সেদ্ধ ডিম খেলে সেটায় একটু গোলমরিচ বা চিলি ফ্লেক্স যোগ করে নিতে পারেন। কখনো সেদ্ধ ডিমের সঙ্গে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ আর শসা-টমেটো মিশিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন এগ সালাদ। এভাবে সব খাবারের রেসিপিতেই পরিবর্তন আনুন। আবার খুব মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা হলে পানি খেয়ে সেই ইচ্ছা না দমিয়ে আপেল বা খেজুরের মতো একটা মিষ্টি ফল খেয়ে ফেলতে পারেন। পেট ও মন সন্তষ্ট থাকবে।

রুটিনে 'চিট ডে' রাখুন

সপ্তাহে ছয়দিন ডায়েট পরিকল্পনা মেনে চলে একদিন তো নিজেকে একটু পুরস্কার দেওয়াই যেতে পারে। সপ্তাহের যে কোনো একটা দিন নিজের পছন্দের এমন একটি খাবার খেতে পারেন, যেটি আপনার নিয়মিত ডায়েটে নেই। সেটা হতে পারে ছোট একটা কাপকেক কিংবা প্রিয় একটা আইসক্রিম। এগুলো শরীরের জন্য ভালো না সত্যি, কিন্তু মনকে সারা সপ্তাহ শান্ত রাখতে সত্যিই কাজে আসতে পারে। তবে অবশ্যই পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। খেয়াল রাখবেন, 'চিট' যেন নিয়ন্ত্রণ না হারায়। তাহলে কিন্তু হিতে বিপরীত হবে।

নিয়মিত আয়না দেখুন

শুনতে অদ্ভুত শোনালেও এই কৌশল বেশ কার্যকরী। ওজন বেড়ে গেলে আমরা প্রাণপণে আয়না এড়িয়ে চলি। কিন্তু ঠিক বিপরীত কাজটি আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে। আয়নায় নিজেকে যতবার দেখবেন, ততবারই বাড়তি ওজনের বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তি হবে। মনে দৃঢ়তা আসবে যে, এবার ওজন ঝেড়েই ফেলতে হবে।

আকারে ছোট প্লেট ও বাটি ব্যবহার করুন

পরিমাণটা আসলে যেমনই হোক না কেন, বড়সড় একটা প্লেটের কোণায় পড়ে থাকা ভাত কিংবা বড় একটা বাটির তলানিতে পড়ে থাকা সবজি দেখলে মনে হয়, কত কম খাচ্ছি। পেট ভরল না। একই খাবার যদি ছোট প্লেট বা বাটিতে রাখেন তাহলে প্লেট বা বাটিটি পূর্ণ দেখাবে। আপনার মনেও এ ধারণাটা আসবে যে, এক প্লেট বা এক বাটি খাবার খেলাম। সেজন্য এগুলোর আকারে মনোযোগ দিন।

নীল প্লেট ও বাটি ব্যবহার করুন

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নীল রং মানুষের খাওয়ার আগ্রহ কমাতে বেশ ভূমিকা রাখে। তাই বাসনকোসনের বেলায় হলুদ, লাল, কমলার মতো রঙের বদলে বেছে নিতে পারেন নীল রংকে।

টিভি দেখার সময় বা সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকাকালে খাবেন না

টিভি দেখতে দেখেতে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিল দেখতে দেখেতে খেলে হিসেবের বাইরে অনেকটা খাওয়া হয়ে যায়। খাওয়ার সময় তাই খাওয়ার প্রতিই মনোযোগ দিন। এ দুটি জিনিস এড়িয়ে চলুন।

ওজন কমানোর সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে যুক্ত হোন

আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওজন কমানোর অনেক গ্রুপ দেখা যায়। এগুলোর কোনো একটিতে যুক্ত হয়ে নিন। গ্রুপগুলোতে অনেকে তাদের ওজন কমানোর যাত্রা শেয়ার করেন। পরিবর্তনের ছবি শেয়ার করেন, ডায়েট পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। এগুলো আপনাকে মানসিকভাবে আগ্রহী রাখবে ওজন কমানোতে।

ধীরে খান

খাওয়ার সময় আস্তে ধীরে চিবিয়ে, সময় নিয়ে খান। অনেক্ষণ ধরে খাওয়ার ফলে অল্প খাবারও বেশি মনে হবে এবং মানসিক সন্তুষ্টি আসবে।

একবার নিয়ম ভেঙে কিছু খেয়ে ফেললে হাল ছেড়ে দেবেন না

অনেক সময় কোনো কোনো খাবার দেখে খাওয়ার ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। ডায়েট পরিকল্পনা ভেঙে সেই খাবারটি খেয়ে ফেলা হয়। তারপর মনে হয়, খেয়েই যখন ফেলেছি আবার খাই। অথবা এটা যখন খেয়েছি, ওটাও খাই। কারণ পরিকল্পনা তো ভেঙেই গেছে। এ কাজটি করা যাবে না। একবার-দুবার যদি ভুল করে খেয়েও ফেলেন, শুধরে নেবেন নিজেকে। আবার ওজন কমানোর রুটিনেই ফিরে যাবেন।

মনে রাখবেন, মনোবলই আপনাকে কাঙ্ক্ষিত ওজনে নিয়ে যেতে পারে। এটি হারানো চলবে না।

 

   

Comments

The Daily Star  | English

Police grapple with surge in crime

Data from the Police Headquarters presents a grim picture of violent crimes, including murder, mugging, robbery, extortion, and mob violence, in the first six months of 2025.

17h ago