স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়াবেন যেভাবে
আশপাশে পরিচিতদের মধ্যেই দেখবেন, কেউ না কেউ ওজন নিয়ে চিন্তিত। কেউ বাড়তি ওজন নিয়ে চিন্তিত, আবার কেউ দুশ্চিন্তায় কম ওজন নিয়ে। বাড়তি ওজন যেমন শরীরের জন্য ক্ষতিকর, তেমনই স্বাভাবিকের তুলনায় কম ওজনও শরীরের জন্য চিন্তার বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে ওজন কমে যাওয়া হতে পারে জটিল রোগের লক্ষণও।
স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানোর জন্য কী কী করা যেতে পারে সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ল্যাবএইড আইকনিকের সিনিয়র পুষ্টিবিদ ফাহমিদা হাশেম।
ফাহমিদা হাশেম বলেন, ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে আগেই দেখতে হবে ওজন কেন কমে যাচ্ছে বা ওজন বাড়ছে না কেন। থাইরয়েড সমস্যা, লিভারের কোনো রোগ বা হজমের সমস্যা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে ওজন কম হয়ে যেতে পারে। তাই আগে দেখতে হবে ওজন কীভাবে কমেছে। ধীরে ধীরে কমেছে নাকি হঠাৎ করে কমে গেছে। এক বছরে আগে কেমন ছিল, এখন কেমন আছে এগুলো দেখতে হবে। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
বিএমআই কত আছে জানতে হবে। সাধারণত যাদের ওজন কম তারা বেশি খাবার খেতে পারেন না। তাদের হজমের সমস্যা থাকে। একজন ব্যক্তির সাধারণ বিএমআই হলো ১৮.৫ - ২৪.৫ পর্যন্ত। যাদের বি এম আই ১৪.৫-১৬ এরকম, তাদের ওজন স্বাভাবিক ওজনের থেকে প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ কম।
যাদের কোনো অসুস্থতার জন্য ওজন কমেনি, অন্য কারণে কম- তাদের ওজন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনের থেকে দ্বিগুণ বা ৩ গুণ বেশি ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে। তবে খাবার যেন স্বাস্থ্যকর হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
যাদের ওজন কম তাদেরকে অনেক বেশি খাবার খেতে বললে তারা কিন্তু সেটা খেতে পারবেন না। তাই ওজন বাড়ানোর জন্য সকাল, দুপুর, রাতের খাবারের পাশাপাশি অতিরিক্ত কিছু খাবার গ্রহণ করতে হবে। ক্যালরির পরিমাণ বাড়ানোর জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকার সঙ্গে কিছু অতিরিক্ত খাবার যোগ করতে হবে। এগুলো প্রধান খাবারের মাঝে মাঝে নাশতা হিসেবে খেতে হবে। চিনির শরবত, কোল্ড ড্রিংকস, ফাস্টফুড এগুলো খেয়ে ওজন বাড়াতে হবে বিষয়টা অবশ্যই এমন না। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের মাধ্যমেই ওজন বাড়াতে হবে, যাতে শরীরের কোন ক্ষতি না হয়।
তরল ক্যালরি
- দুধ একটি আদর্শ তরল খাবার। দুধের সঙ্গে পিনাট বাটার, কলা, খেজুর, কাজুবাদাম, অথবা ড্রাইফ্রুট ইত্যাদি মিশিয়ে মিল্কশেক বানিয়ে খেলে হাই ক্যালরি পাওয়া যাবে। প্রতিদিন সকাল অথবা সন্ধ্যার নাস্তায় এক গ্লাস এ ধরনের মিল্কশেক গ্রহণ করতে পারেন।
- যাদের ওজন একদমই কম তাদেরকে দুধের সঙ্গে ক্যালরি প্রোটিন পাউডার মিক্স করে খেতে বলা হয়। এটি পরিমাণ অনুযায়ী ক্যালরির চাহিদা পূরণ করে।
- ভাতের মাড়ে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে। তাই ভাতের মাড় খেতে পারেন।
- ১ কাপ চিড়া ভিজিয়ে রেখে এর সঙ্গে গুড়, কলা, একটু দুধ দিয়ে ব্লেন্ড করে খেতে পারেন।
প্রোটিন
ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
- মাছ, মাংস ১ পিসের পরিবর্তে ২ বা ৩ পিস খেতে হবে।
- ডাল ভাতের সঙ্গে ছাড়াও স্যুপ হিসাবে খাওয়া যেতে পারে। ডালের সঙ্গে সবজি মিশিয়ে স্যুপ করে নাস্তা হিসাবে খেতে পারেন।
- শিমের বিচি, কুমড়ার বিচি, সূর্যমুখীর বিচি অর্থাৎ মিক্সড সিড খেতে পারেন।
- প্রতিদিন ২ টি করে ডিম খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
ফ্যাট
- বাদাম ভালো ফ্যাটের উৎস। কাজুবাদামে বেশি পরিমাণে ফ্যাট থাকে। ওজন বাড়ানোর জন্য কাজুবাদাম উপকারী।
- অলিভ ওয়েল, নারকেল তেল, ঘি ইত্যাদি যোগ করে খাবারের ক্যালরি বাড়ানো যায়। যেমন- ভাত খাওয়া সময় একটু ঘি যোগ করা,সালাদের সঙ্গে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ ওয়েল বা কোকোনাট ওয়েল যোগ করে খেলে ক্যালরি ভ্যালু অনেক বেড়ে যায়।
- ননীযুক্ত পনির খাওয়া যেতে পারে। এটির ক্যালরি ভ্যালু অনেক।
শর্করা
- ভাতের মাড় খাওয়ার পাশাপাশি বসা ভাত খেতে পারলে ওজন বাড়বে।
- পান্তাভাত প্রো-বায়োটিকের খুব ভালো উৎস। সকালের নাস্তায় পান্তাভাত খাওয়া যেতে পারে। এটি হজমেও সহায়তা করে।
- আলু বেশি পরিমাণে খেতে হবে। ভাতের সঙ্গে আলু ভর্তা, আলু ভাজি বা যেকোনো তরকারিতে আলু যোগ করে খেতে পারেন।
ফল ও শাকসবজি
- যাদের ওজন কম তাদের হজমজনিত সমস্যা থাকে। মিনারেল, ভিটামিনের ঘাটতি থাকে। এ কারণে খাবার গ্রহণের পাশাপাশি শাকসবজি ও ফল খেতে হবে।
- ফল কেটে খাওয়ার পাশাপাশি জুস করে খেতে পারেন।
- আপেলের সঙ্গে ১ চামচ পিনাট বাটার যোগ করে খেতে পারেন।
- ভুট্টা সেদ্ধ করে সালাদের সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে। বা সেদ্ধ ভুট্টা একটু চাট মসলা যোগ করে নাশতায় খাওয়া যেতে পারে।
ব্যায়াম
পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি হালকা ব্যায়ামও করতে হবে। দিনে অন্তত ২০-৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়াম খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে এবং ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে ।
যাদের বিএমআই ১৮ এর থেকে একটু কম তারা এরকম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারেন। তবে যাদের ওজন অনেক কম সেক্ষেত্রে অবশ্যই পেশাদার পুষ্টিবিদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে।
Comments