‘ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার ফিলিস্তিনিদের ৮ অক্টোবর থেকে অনাহারে রেখেছে’

জাতিসংঘের খাদ্য অধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি মাইকেল ফাখরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রাখার অভিযোগ আনেন। তিনি দেশটির বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন। ফাখরি হুশিয়ার করেন, গাজায় 'ইতোমধ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে'।

আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে ফাখরি আরও বলেন, 'ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার ফিলিস্তিনি জনগণকে ৮ অক্টোবর থেকে অনাহারে রেখেছে'।

গাজায় ১০টি শিশু অনাহারে মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিতের পর জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ফাখরি এই বক্তব্য দেন। 

এই দুর্ভিক্ষের অবসান ঘটাতে বা এর আরও ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর একমাত্র উপায় হল তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি চালু করা। এবং এই যুদ্ধবিরতি আদায় করার একমাত্র উপায় হল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করা', যোগ করেন তিনি।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত ফাখরি মানবাধিকার বিষয়ক নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিল তাকে নিয়োগ দিয়েছে।

এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে সংস্থাটির এক জ্যেষ্ঠ ত্রাণ কর্মকর্তা জানান, গাজার অন্তত পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার বা মোট জনগোষ্ঠীর এক চতুর্থাংশ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন। এই কর্মকর্তা হুশিয়ারি দেন, জরুরি উদ্যোগ না নেওয়া হলে গাজার সব এলাকায় বড় আকারে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়বে।

জাতিসংঘের মানবিক উদ্যোগ সমন্বয় কার্যালয়ের সমন্বয় পরিচালক রমেশ রাজাসিংঘাম আরও বলেন, 'সহিংসতা অব্যাহত থাকলে (এই সমস্যার সমাধানে) তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দক্ষিণ গাজার জনবহুল এলাকাগুলোতে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ কারণে আমরা আবারও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছি।'

তিনি নিরাপত্তা কাউন্সিলকে আরও জানান, গাজার দুই বছরের কমবয়সী প্রতি ছয় শিশুর একজন অপুষ্টিতে ভুগছে এবং মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সার্বিকভাবে, গাজার ২৩ লাখ ফিলিস্তিনিদের সবাই প্রয়োজনের তুলনায় 'খুবই সামান্য' খাবার খেয়ে বেঁচে আছেন, যা তারা ত্রাণ হিসেবে পান।

এর মধ্যে ত্রাণ বিতরণ নিয়ে ঘটেছে এক মর্মান্তিক ঘটনা। ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা গাজাবাসীর ওপর ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১০৪ জন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবারের এ হামলায় অন্তত ৭৬০ জন আহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে।

রাফাহর একটি দাতব্য লঙ্গরখানা থেকে খাবার সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স
রাফাহর একটি দাতব্য লঙ্গরখানা থেকে খাবার সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

গত ৭ অক্টোবরে থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ১৩ হাজার শিশুসহ মোট ৩০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৭০ হাজার মানুষ।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৫৩ জন মানুষ। জিম্মিদের মধ্যে ১৩০ জন এখনো গাজায় আছেন এবং ৩১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর থেকে প্রায় হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে গাজায় পাঁচ মাস ধরে সর্বাত্মক ও নিরবচ্ছিন্ন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এই হামলায় নিহত ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নিহত শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার ও নারীর সংখ্যা প্রায় আট হাজারের মতো।

মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীরা ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাজ করছেন। তাদের আশাবাদ, ১০ বা ১১ মার্চ, অর্থাৎ, রমজান মাস শুরুর আগে থেকেই এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।

সর্বশেষ তথ্য মতে, হামাসের সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে এই চুক্তি। ইসরায়েল চুক্তির শর্তগুলোতে নীতিগত সমর্থন জানিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Govt Logo

All 64 DCs protest suggested change to promotion criteria for deputy secy post

The Bangladesh Administrative Service Association (Basa) has also issued a statement protesting the proposal

1h ago