গাজায় প্রায় ১৩ হাজার শিশুসহ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ হত্যা করেছে ইসরায়েল

রাফাহ অঞ্চলে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহের সামনে শোক প্রকাশ করছেন আত্মীয়-পরিজন। ছবিছ রয়টার্স
রাফাহ অঞ্চলে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহের সামনে শোক প্রকাশ করছেন আত্মীয়-পরিজন। ছবিছ রয়টার্স

হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে গত ৭ অক্টোবরে থেকে গাজায় সর্বাত্মক ও নির্বিচার হামলা চালিয়ে প্রায় ১৩ হাজার শিশুসহ মোট ৩০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।

আজ বৃহস্পতিবার গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, '(গাজায়) শহীদের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে।' বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এই তালিকায় গত ২৪ ঘণ্টায় নিহত অন্তত ৭৯ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মধ্যস্থতাকারীরা আশ্বাস দিয়েছেন, অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে। আগামী সোমবারের মধ্যে তা চূড়ান্ত হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

তবে মানবাধিকার ও ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে এবং খুব শিগগির উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।  

এর আগে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিভিন্ন হাসপাতালে অপুষ্টিজনিত রোগের কারণে ফিলিস্তিনি শিশুরা মারা যাচ্ছে।

মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা জানান, গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালে দুই শিশু 'পানিশূন্যতা ও অপুষ্টিতে' ভুগে মারা গেছে। তিনি এ ধরনের মৃত্যু এড়াতে শিগগির আন্তর্জাতিক মহলকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

সাম্প্রতিক সময়ে অনাহার-অপুষ্টিতে অন্তত ছয় শিশু মারা গেছে, বলেও জানান তিনি।

গাজার বাকি সব অঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে রাফাহ অঞ্চলে এসে আশ্রয় নিয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি
গাজার বাকি সব অঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে রাফাহ অঞ্চলে এসে আশ্রয় নিয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি

ইউএসএআইডি প্রধান সামান্থা পাওয়ার জানান, ইসরায়েলকে গাজায় ত্রাণ প্রবেশের জন্য আরও পথ খুলে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে 'অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার পরিমাণ রাতারাতি বেড়ে যাবে', যোগ করেন তিনি।

পাওয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশিত ভিডিওতে আরও বলেন, 'এটা জীবন-মৃত্যুর বিষয়।'

গতকাল জাতিসংঘের মানবিক উদ্যোগ সমন্বয় কার্যালয়ের সমন্বয় পরিচালক রমেশ রাজাসিংঘাম নিরাপত্তা কাউন্সিলকে জানান, গাজার অন্তত পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার বা মোট জনগোষ্ঠীর এক চতুর্থাংশ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন। এই কর্মকর্তা হুশিয়ারি দেন, জরুরি উদ্যোগ না নেওয়া হলে গাজার সব এলাকায় বড় আকারে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়বে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৫৩ জন মানুষ। জিম্মিদের মধ্যে ১৩০ জন এখনো গাজায় আছেন এবং ৩১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর থেকে প্রায় হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে গাজায় পাঁচ মাস ধরে সর্বাত্মক ও নিরবচ্ছিন্ন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এই হামলায় নিহত ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নিহত শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার ও নারীর সংখ্যা প্রায় আট হাজারের মতো। 

মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থাকারীরা ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাজ করছেন। তাদের আশাবাদ, ১০ বা ১১ মার্চ, অর্থাৎ, রমজান মাস শুরুর আগে থেকেই এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।

যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের শর্ত হিসেবে হামাসের হাতে বন্দি থাকা বাকি জিম্মিদের মুক্তি এবং ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির কথা বলা হয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

8h ago