জ্বর-সর্দি প্রতিরোধে ফ্লু ভ্যাকসিন, যা জানা জরুরি
ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু থেকে সুরক্ষা পেতে ভ্যাকসিন অত্যন্ত কার্যকরী। তবে কারা নিতে পারবেন ফ্লু ভ্যাকসিন, তাও জেনে রাখা জরুরি।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত।
ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু কী?
ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, 'ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মাধ্যমে শ্বাসতন্ত্রে যে সংক্রমণ হয় তাকে বলা হয় ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা। বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতেই সিজনাল ফ্লু হয়। তবে শীতের সময় ফ্লু'র প্রকোপ বাড়ে।'
বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ ফ্লু'র কারণে মারা যায় বলে জানিয়েছেন তিনি।
মাইল্ড, মডারেট ও সিভিয়ার ফ্লু'তে সংক্রমিত হয় অসংখ্য মানুষ। সাধারণ ফ্লু ক্ষতির কারণ না হলেও, সিভিয়ার ফ্লু মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় অনেক সময়।
ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু এর লক্ষণ
অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ ফ্লু'র কয়েকটি উপসর্গের উল্লেখ করেছেন।
সেগুলো হলো-জ্বর, সর্দি ও নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, সারা শরীরে ব্যথা, ক্লান্তি ও দুর্বলতা এবং ক্ষুধামন্দা।
তবে শিশু ও বয়স্ক এবং যাদের কো-মরবিডিটি (পুরোনো রোগ) রয়েছে তাদের কারও ক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েঞ্জার সঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে নিউমোনিয়া হওয়ার জটিলতা তৈরি হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তখন রোগীর কাশির ধরন পরিবর্তন হয়ে যায়। কফ হলুদ হয়ে যেতে পারে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু ঝুঁকিতে কারা?
ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ ঝুঁকিতে সবাই থাকতে পারে। তবে অনেকের জন্য ফ্লু মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হতে পারে। যেমন-৫ বছরের কম বয়সী শিশু, বয়স ৬৫ বছরের বেশি এবং যাদের সিরিয়াস কো-মরবিডিটিস আছে। যেমন, হার্ট ফেইলিউর, কিডনি ফেইলিউর, লিভার ডিজিজ, সিভিয়ার ডায়াবেটিস, ক্যান্সার কিংবা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে।
তাদের ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে, মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়। তাদের সুরক্ষার জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধের কথা বলেছেন ডা. সোহেল মাহমুদ।
তিনি জানান, ইনফ্লুয়েঞ্জা ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ড্রপলেট বাতাসে ছড়ায়। ফলে আশেপাশে যারা থাকেন তারা সংক্রমিত হতে পারেন। রোগ প্রতিরোধ করার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে, যাদের ফ্লু থাকবে তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
এগুলো ব্যক্তিগত প্রতিরোধ ব্যবস্থা। আর অপর প্রতিরোধ ব্যবস্থা হচ্ছে ফ্লু ভ্যাকসিন নেওয়া।
ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু ভ্যাকসিন কারা নেবেন
ফ্লু ভ্যাকসিন বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন হলো ফ্লু ভাইরাস থেকে রক্ষার অন্যতম উপায়। ভ্যাকসিনেশনের প্রচলন সারা পৃথিবীতেই আছে। আমাদের দেশে সীমিত আকারে ব্যক্তিগতভাবে হলেও ভ্যাকসিনেশন হচ্ছে।
ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, 'যাদের ফ্লু থেকে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে, তারা ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। আমাদের দেশে ফ্লু ভ্যাকসিনের কোনো গাইডলাইন এখনো হয়নি।'
তিনি জানান, উন্নত বিশ্বে গাইডলাইন মেনে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। যেমন-৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে। যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি, অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং যাদের গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা আছে, তাদের ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনা উচিত।
এছাড়া, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে যারা থাকেন, যেমন, চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসা সহকারী, হেলথকেয়ার ওয়ার্কারদের ভ্যাকসিন দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু ভ্যাকসিন কারা নিতে পারবেন না
১. ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের এই ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে না।
২. যাদের কোনো ভ্যাকসিনে অ্যালার্জি আছে, আবার ফ্লু ভ্যাকসিন একবার নেওয়ার পর অ্যালার্জি হয়েছে, তাদেরও দেওয়া যাবে না।
ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু ভ্যাকসিন কেন নেবেন
অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, ফ্লু ভ্যাকসিন একবার দিলেই হয় না। প্রতিবছর নির্দিষ্ট মেয়াদে এক বছর পর পর ভ্যাকসিন নিতে হয়।
সিঙ্গেল ডোজের এই ফ্লু ভ্যাকসিন এক বছরের জন্য কিছুটা সুরক্ষা দেবে।
ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও অনেকে ফ্লু তে সংক্রমিত হতে পারেন। তবে, সে ক্ষেত্রে তীব্রতা ও জটিলতা কম হতে পারে।
ফ্লু ভ্যাকসিন শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে এবং একইসঙ্গে কারও ফ্লু যদি হয়ে থাকে, তার সিভিয়ারিটি কমাবে, ফ্লু মাইল্ড ফরম্যাটে চলে যাবে এটাই হচ্ছে সুবিধা।
ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু ভ্যাকসিন কোথায় পাবেন ও খরচ কত
ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, ফ্লু ভ্যাকসিন বিদেশ থেকেও আমদানি করা হয়। আবার আমাদের দেশে কিছু কিছু ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি ফ্লু ভ্যাকসিন তৈরি করছে। বড় ফার্মেসি, হাসপাতাল, ভ্যাকসিন সেন্টারে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের তৈরি ভ্যাকসিনের দাম প্রায় ১ হাজার টাকা। আর বিদেশ থেকে আনা ভ্যাকসিনের দাম একটু বেশি।
তবে, কোন সময় ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে, দিলে কোনো ক্ষতি হবে কি না, কাদের জন্য অত্যাবশ্যক, ফ্লু ভ্যাকসিন দেয়ার আগে এসব কিছু অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে বলেছেন অধ্যাপক সোহেল।
আমাদের দেশে ফ্লু ভ্যাকসিন নেওয়ার গাইডলাইন তৈরি হলে, তখন সবাই সেই অনুযায়ী ভ্যাকসিন নিতে পারবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
Comments