জন্ডিস কেন হয়, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায় কী

জন্ডিসের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধের উপায়
ছবি: সংগৃহীত

জন্ডিস খুব সাধারণ রোগ মনে হলেও বিষয়টি কিন্তু সবসময় সাধারণ থাকে না, মারাত্মক ঝুঁকির কারণও হয়ে উঠে।

জন্ডিস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন খানের কাছ থেকে।

জন্ডিস কী ও কেন হয়?

ডা. আবেদ হোসেন বলেন, জন্ডিস আসলে কোনো রোগ নয়, রোগের লক্ষণ মাত্র। জন্ডিস হলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। জন্ডিস বলতে আমরা শরীর, চোখ ও প্রস্রাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়াকেই বুঝি। মূলত বিলিরুবিন নামক রঞ্জকের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রভাবেই এটা ঘটে থাকে।

রক্তে এই বিলিরুবিন বাড়ার অনেক কারণ রয়েছে। যেমন- রক্তের লোহিত রক্তকনিকার দ্রুত ও অত্যাধিক পরিমাণ ভেঙে যাওয়া, লিভারের প্রদাহতে বিলিরুবিনের বিপাক বা মেটাবলিজম বাধাগ্রস্ত হওয়া, পিত্তরসের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ বেশকিছু কারণে জন্ডিসের উপসর্গ দেখা দেয়।

 

ডা. আবেদ হোসেন বলেন, জন্ডিসের কারণগুলোকে কয়েকভাবে ভাগ করা যায়। যেমন-

১. ভাইরাসের সংক্রমণ

২. থ্যালাসেমিয়া

৩. হিমোলাইটিক এনিমিয়া

৪. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

৫. লিভার সিরোসিস

৬. লিভার/ প্যানক্রিয়াস/ পিত্তনালীর ক্যানসার

৭. কিছু বিরল জেনেটিক রোগ (উইলসন ডিজিস) বা অটোইমিউন ডিজিস

জন্ডিসের লক্ষণ

১. জন্ডিস হলে চোখ, প্রস্রাব ও শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করে।

২. ভাইরাল হেপাটাইটিসের ক্ষেত্রে মুখে খাদ্য গ্রহণে অরুচি ও বমি বমি ভাব আসে।

৩. অনেক সময় বমিও হতে পারে।

৪. শরীরে অস্বাভাবিক দুর্বলতা থাকে।

৫. জ্বর বা জ্বর-জ্বর ভাব।

৬. পেট ব্যাথাও দেখা দিতে পারে।

৭. শরীরে চুলকানি ও ফ্যাকাসে বা সাদাটে পায়খানা হতে পারে।

৮. কোনো কোনো ক্ষেত্রে রক্তবমি হতে পারে।

৯. আলকাতরার মতো কালো পায়খানা হতে পারে।

১০. পেট ও পায়ে পানি এসে ফুলে যেতে পারে।

১১. পেটে চাকা বা লাম্প অনুভূত হতে পারে।

জন্ডিসের প্রকোপ কখন বাড়ে

সাধারণত গ্রীষ্মকালেই এই রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি হয়। এ সময় প্রচণ্ড গরমে দূষিত পানি, শরবত গ্রহণের মাধ্যমেই জন্ডিসের ভাইরাস সবচেয়ে বেশি ছড়ায়। এ ছাড়া বন্যা বা বর্ষা মৌসুমে নগর কিংবা গ্রাম সব জায়গায়ই পানি দূষণের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ানোর মারাত্মক ঝুঁকি থাকে।

জন্ডিসের চিকিৎসা

ডা. আবেদ হোসেন বলেন, জন্ডিস দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ করা যাবে না। বিশেষত প্রচলিত কবিরাজি, হারবাল বা বনাজি অথবা ঝাড়ানোর মতো চিকিৎসা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

এক্ষেত্রে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলতে হবে। তারমধ্যে পূর্ণ শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম, পরিমাণমতো পানি, তরল খাবার, ডাবের পানি খাওয়া অন্যতম। সহজপাচ্য খাবার খাওয়া অর্থাৎ অতিরিক্ত মশলা, তেলে ভাজা খাবার পরিহার করতে হবে। হেপাটাইটিস বি ও হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

জন্ডিসের ঝুঁকি

ডা. আবেদ হোসেন বলেন, আমাদের দেশে সব বয়সের মানুষের অ্যাকিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস বা ভাইরাসজনিত লিভারের প্রদাহ হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। ইংরেজি অক্ষর দিয়ে এই ভাইরাসগুলোর নামকরণ করা হয়ে থাকে যেমন এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাস। আমাদের দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেই ভাইরাসের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি, যা সাধারণত কোনো দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ তৈরি করে না।

তবে কখনো কখনো মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তবে এই ভাইরাসগুলোর একটি ভালো দিক হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত ব্যক্তি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে ওঠেন।

'এ' ও 'ই' ভাইরাসজনিত লিভার রোগ, 'বি' ও 'সি' ভাইরাসজনিত লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার, ফ্যাটি লিভার রোগসহ লিভারের অন্যান্য রোগে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ প্রচলিত ভাষায় জন্ডিসে আক্রান্ত। দেড় কোটির বেশি মানুষ লিভারের দীর্ঘস্থায়ী রোগ হেপাটাইটিস 'বি' এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস 'সি' ভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানান এই চিকিৎসক।

জন্ডিস প্রতিরোধের উপায়

বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা যেতে পারে জন্ডিস প্রতিরোধে। যেমন-

১. বিশুদ্ধ পানি পান করা।

২. রাস্তাঘাটের অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা খাবার এবং পানি না খাওয়া।

৩. ড্রেনেজ ব্যবস্থা আর নিরাপদ পানীয় জলের সরবরাহ ব্যবস্থা এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পানিবাহিত হেপাটাইটিস 'ই' ছড়ানোর ঝুঁকিটা খুবই বেশি থাকে।

৪. হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা নেওয়া। বি ভাইরাসের টিকা সরকারি টিকা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

৫. নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন নিশ্চিত করা।

৬. অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকা।

৭. শরীরের অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস ও ফ্যাটিলিভারের চিকিৎসা গ্রহণ করা।

৮. মদ্যপান থেকে বিরত থাকা।

৯. ক্রনিক লিভার ডিজিজের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা।

 

Comments

The Daily Star  | English

Effective tariff for RMG exports to US climbs to 36.5%: BGMEA

The tariff will be a bit less if 20% of the cotton used in garment production is sourced from the USA

40m ago