জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়: গ্রামে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ

উচ্চ মূল্যস্ফীতি
প্রতীকী ছবি। রাজীব রায়হান/স্টার ফাইল ফটো

একসময় আর্থিক সংকট কাটাতে মানুষ গ্রাম থেকে শহরে আসতেন। সময়ের পরিক্রমায় পাল্টে যাচ্ছে সেই চিরচেনা দৃশ্যপট। সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় ২০২২ সালে শহর থেকে গ্রামে ফিরে আসা মানুষের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অনুসারে, ২০২২ সালে প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে ১০ দশমিক নয় জন গ্রামে ফিরেছেন। এটি এর আগের বছরের তুলনায় ৮৪ দশমিক সাত শতাংশ বেশি।

এর বিপরীতে, গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা ৪৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়ে ২৬ দশমিক চার শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিবিএসের স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের প্রকল্প পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন মনে করেন, জীবন ও জীবিকায় করোনা মহামারির প্রভাবের কারণে মানুষ শহর থেকে গ্রামে ফিরছেন।

'উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবও তাদের ওপর পড়েছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'মানুষ আর্থিক সংকট কাটাতে নানান কৌশল নেন। অভিবাসন এর অন্যতম।'

সাধারণত অর্থনৈতিক কারণে একটি পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি কাজের জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যান। বিয়ের মতো সামাজিক কারণেও মানুষকে নতুন জায়গায় চলে যেতে হয়।

বিবিএসের তথ্য অনুসারে, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে শহর থেকে গ্রামে আসা মানুষের সংখ্যা ছিল প্রতি এক হাজারে যথাক্রমে শূন্য দশমিক সাত ও তিন দশমিক নয়। করোনার বিস্তার ঠেকাতে সরকার দেশব্যাপী লকডাউন দেওয়ার পর ২০২০ সালে তা বেড়ে আট দশমিক চার জনে দাঁড়ায়।

অন্যদিকে, গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা ২০১৯ সালে এক হাজারে ১৫ জন থেকে পরের বছর ১২ দশমিক সাত জনে নেমে আসে।

মো. আলমগীর হোসেন বলেন, 'মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে অনেকেই গ্রামে ফিরে গেছেন।'

'তারা গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। তাদের জন্য কিছু নীতিগত সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে তারা তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেন।'

মহামারি পরিস্থিতির উন্নতির পর বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা ২০২১ সালে প্রতি হাজারে পাঁচ দশমিক নয়-এ নেমে আসে।

প্রায় ১৮ দশমিক চার জন শহর থেকে গ্রামে ফিরেছেন। এটি আগের বছরের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি।

মহামারির আগের বছরগুলোয় মানুষ কাজের খোঁজে বা ব্যবসা করতে গ্রাম থেকে শহরে আসতেন।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শহরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অভাব ও জীবনযাত্রার বাড়তি খরচ সামলাতে ব্যর্থ হয়ে অনেকে গ্রামে চলে যাচ্ছেন।'

গ্রামে ফেরার পর খরচ মেটাতে যাদের সঞ্চয় আছে তাদের তা ভাঙতে হচ্ছে। মহামারির পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আবার চালু হওয়ায় অনেকে আবার শহরে ফিরে এসেছেন।

ইমরান মতিন আরও বলেন, 'উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক সংকট দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় অনেকে আবার গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।'

বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণে ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি সাত শতাংশের ওপরে আছে। এটি দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে।

এই গবেষক মনে করেন, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রণোদনা প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এ খাতে জড়িত ব্যক্তিরা আবার শহর থেকে গ্রামে ফিরে গেছেন।

বিআইজিডি নির্বাহী পরিচালকের মতে, এই উল্টো স্রোত অন্য সময়ের তুলনায় আলাদা ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তিনি বলেন, 'যেহেতু শহরে খরচ বেশি, তাই গ্রামে ফেরা মানুষগুলো সেখানে ঘর করা ও চাকরির চেষ্টা করবে।'

এই উল্টো অভিবাসনের কিছু ইতিবাচক দিকও দেখছেন ইমরান মতিন। তিনি বলেন, 'তারা গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। তাদের জন্য কিছু নীতিগত সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে তারা তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেন।'

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান গ্রামে ফেরার পেছনে জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করে বলেন, 'জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ের কারণে শহরে বসবাস কঠিন হয়ে পড়েছে।'

তার মতে, গ্রামে কর্মসংস্থান বাড়ানোর পাশাপাশি শহরে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago