ফরিদপুর ৩ আসনে সারাদিনের ভোটের চিত্র

ফরিদপুর ৩ আসন
ঈশান ইনস্টিটিউট ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের লাইন। ছবি: আসিফুর রহমান/স্টার

স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া, ভোটারদের যেতে বাধা দেওয়া, মারধর, দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্য দিয়ে ফরিদপুর-৩ আসনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও, ভোটগ্রহণ সাময়িক স্থগিত, প্রকাশ্যে ভোট ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে এ আসনে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির উপদেষ্টা এ কে আজাদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

ভোটের আগে শামীম হকের নেতাকর্মীদের মারমুখী আচরণের সমালোচনা ছিল। ব্যতিক্রম ছিল না ভোটের দিনও।

আজ রোববার ভোটগ্রহণের দিনটি শুরু হয় ঈগল প্রতীকের প্রার্থী এ কে আজাদের এক এজেন্টকে সাজেদা কবিরউদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়ার মধ্য দিয়ে। 

ঈগল প্রতীকের এজেন্ট ছাড়াই ভোটগ্রহণ শুরু করেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা।

খবর পেয়ে এ কে আজাদ আধঘণ্টার মধ্যে ওই কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে এজেন্টকে ভেতরে প্রবেশ করানোর ব্যবস্থা নেন।

এ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম হক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের মধ্যে। ছবি: আসিফুর রহমান/স্টার

সকাল ৮টার পরপর সারদা সুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র ঘুরে ভোটারদের লাইন চোখে পড়ে। এই বিদ্যালয়ে ৩টি কেন্দ্রের একটিতে দুপুর পর্যন্ত ভোটারদের লাইন ছিল। 

সারা দিনে দ্য ডেইলি স্টারের এই দুই প্রতিবেদক অন্তত ১২টি কেন্দ্রে ঘুরে সবগুলোতে দুই পক্ষের এজেন্ট পেয়েছেন। পাশাপাশি একতারা, লাঙ্গল ও ডাব প্রতীকের এজেন্টও দেখা গেছে বিভিন্ন কেন্দ্রে।

আরেকটি কেন্দ্র গোয়ালচামট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটারদের লাইন না থাকলেও, দুপুর ২ টা পর্যন্ত ৪৫ শতাংশ ভোট পড়ে।

সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে রিয়াজউদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জোহরা বেগম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ঘুরে ভোটারদের লাইন দেখা যায়। 

কেন্দ্রের বাইরে উভয় পক্ষের নির্বাচনী ক্যাম্প থেকে ভোটারদের ভোটার নম্বর সরবরাহ করা হচ্ছিল।

সকাল ৯টার দিকে ভাষানচর হামিদনগর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে তুলনামূলক ভোটার উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে। নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন ছিল চোখে পড়ার মতো। 

সে সময়ই খবর পাওয়া যায়, চরমাধবদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঈগলের সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ পাওয়া যায় নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

সাড়ে ৯টা নাগাদ সেখানে গিয়ে সরেজমিনে জানা গেল, নৌকার সমর্থক মাজেদুর রহমান দুই ঈগল সমর্থক তরুণকে মারধর করে ভোটের স্লিপ কেড়ে নিয়েছে।

তবে কেন্দ্রের দায়িত্বরত পুলিশ মো. নান্নু মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, কেন্দ্রের ভেতরে কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ কারণে এ ঘটনায় কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

নৌকার সমর্থক মাজেদুর দাবি করেন, দুই তরুণ তাকে তুই-তোকারি করায় তিনি রেগে যান। তবে কারও গায়ে হাত দেননি তিনি।

সকাল ১০ টা ১০ মিনিটে ঈশান ইনস্টিটিউটের সামনে বেশ জটলা দেখা যায়। দুই পক্ষের লোকজনই ভোট দিয়ে বাইরে জড়ো হয়ে ছিলেন। বিজিবি সদস্যরা মাইকে তাদের বেশ কয়েকবার সরে যেতে বললেও, তারা কেউ তেমন একটা গায়ে মাখলেন বলে মনে হয়নি।

সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রণকাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রায় দেড় ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখে প্রশাসন। এ ঘটনায় দুই পক্ষের অন্তত ১৫ জন কর্মী আহত হন।

পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বেলা ১টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, যারা ভোট দিতে পারেননি, সেসব ভোটারদের পুলিশ ও বিজিবির উপস্থিতিতে তারা দীর্ঘ লাইন দিয়ে ভোট দিচ্ছেন।

সেখানে গিয়ে জানা যায়, ভোটকেন্দ্রের পাশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত মাঝিপাড়ায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। ওই পাড়ার বেশিরভাগ বাসিন্দা ঈগলের সমর্থক হওয়ায় নৌকার সমর্থকরা তাদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়। 

সংঘর্ষ চলাকালে পাড়ার ভেতরে ঢুকে বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।

পাশের রামখণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও নৌকা ও ঈগল প্রতীকের প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নৌকার সমর্থকেরা পাশের একটি রাস্তা আটকে লাঠিসোটাসহ অবস্থান নেন। 

এক নারী ভোটার অভিযোগ করেন, তাদের আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল যে তারা কোন পক্ষের ভোটার। ঈগলের ভোটারকে পরিবহন করা একটি অটোরিকশা ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।

দুপুর দেড়টার দিকে সদরের গেরদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই নম্বর ভোটকক্ষে এক ব্যক্তি ১০-১২ জন লোক নিয়ে প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট দেন বলে অভিযোগ করেন ওই বুথের পোলিং এজেন্ট হালিমা বেগম।

কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

অভিযোগে বলা হয়, ওই কেন্দ্রে নৌকার স্থানীয় এক কর্মী ১০ জনকে একসঙ্গে ভোটকক্ষে নিয়ে যায় এবং ওই ১০ জন ১০ মিনিটের মধ্যে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের টেবিলে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারেন।

পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপে নৌকার ওই কর্মী কেন্দ্র থেকে সরে যান।

এ আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ৪ হাজার ৩০০ জন। বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষে গণনা শুরু হয়। সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত এ আসনের ১৫৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬৫ কেন্দ্রের ফলাফল পাওয়া গেছে।

এ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো রেজাওয়ান-উল-ইসলামের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এসব কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের শামীম হক পেয়েছেন ২৫ হাজার ৭০০ ভোট এবং ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৯৬৫ ভোট।

 

Comments

The Daily Star  | English

Consensus key to take Bangladesh forward: Yunus

"We are now working to bring our beloved Bangladesh back onto the path of equality, human dignity, and justice," he said

1h ago