নেতাকর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে: আজাদ, তিনি মাইরাও জিততে চান কাইন্দাও জিততে চান: শামীম

এ কে আজাদ ও শামীম হক। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ (ঈগল) অভিযোগ করে বলেছেন, নির্বাচনের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে তার নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তারা যাতে বাসায় না থাকেন এই ভয়ও দেখানো হচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করেন, 'প্রতিপক্ষ নৌকার প্রার্থী শামীম হকের বাহিনী ও পুলিশ এই হুমকি দিচ্ছে।'

আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের ঝিলটুলী মহল্লা এলাকায় নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলন এ অভিযোগ করেন এ কে আজাদ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ গঠন করতে বড় লক্ষ্য নিয়েই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফদিরপুর-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি।'

এ কে আজাদ বলেন, 'খুব দুঃখের সঙ্গে জানাতে হয় ঈগলের পক্ষে জনসমর্থন দেখে, তা নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শামীম হক ও তার সমর্থকরা। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে বার বার নানা কায়দায় বাধার সৃষ্টি করছে।'

তিনি বলেন, 'গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ঈগল সমর্থক-নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, ভয়ভীতি অব্যাহত রয়েছে। ক্যাম্প পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটাচ্ছে। এসব ঘটনায় ৫টি মামলা এবং ১৪টি জিডি করার পরও দু-একটি ছাড়া তেমন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।'

এ কে আজাদ অভিযোগ করেন, 'গতরাতেও আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে নৌকা সমর্থকরা।'

'প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ নেন, যাতে মানুষ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে', বলেন তিনি

তিনি বলেন, 'নির্বাচনের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে আমার নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তারা যাতে বাসায় না থাকেন এই ভয়ও দেখানো হয়। শামীম হকের বাহিনী ও পুলিশ এই হুমকি দিচ্ছে। একইসঙ্গে ঈগল সমর্থক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারও অব্যাহত রয়েছে। গতরাতেও পুলিশ ঈগল সমর্থক একাধিক নেতাকর্মীর বাসায় হানা দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। এতে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।'

এ কে আজাদ বলেন, 'আমি যখন আপনাদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করছি, ঠিক এই সময়টাতেই অনেক নেতাকর্মীকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে আমার কাছে খবর আসছে। নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এরমধ্যেই কোথাও কোথাও নিজেরা নিজেদের ক্যাম্পে আগুন দিয়ে আমার নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি অব্যাহত রেখেছে। যাতে করে নির্বাচন ঘিরে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। যেখানে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াটা আমার লক্ষ্য, সেখানে আমার প্রতিপক্ষ শামীম হক শেষ মুহূর্তে এসে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা সৃষ্টি করছে।'

লিখিত বক্তব্যে পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এ কে আজাদ।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ডিসি কমিটমেন্ট করেছিলেন যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো অভিযোগ আমলে নেওয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম হকের অভিযোগগুলোতে মামলা হচ্ছে আমাদের অভিযোগগুলো পড়ে রয়েছে।'

এ কে আজাদ বলেন, 'বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে শামীম হকের এক কর্মী নৌকার একটি কেন্দ্র পেট্রল দিয়ে পোড়াতে গেলে পেট্রলের বোতলসহ জনতা তাকে আটক করে। কিন্তু ওই মামলায় আমাদের নেতাকর্মীদের জড়ানো হয়েছে।'

এসময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বিপুল ঘোষ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফারুক হোসেন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভী মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উনি (এ কে আজাদ) যেসব অভিযোগ করছেন, এসবের কোনো ভিত্তি নেই। বরং আজাদের কর্মীরাই আমার নির্বাচনী ক্যাম্প পুড়িয়ে, আমার কর্মীদের ওপর হামলা করছেন।'

শামীম হক বলেন, 'আজাদ সাহেব মিডিয়ার মালিক, এজন্য উনি ইচ্ছা হলেই সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন, অনেক কথা বলতে পারেন। আসনে উনি (আজাদ) মাইরাও জিততে চান, কাইন্দাও জিততে চান।'

অভিযোগ নিয়ে ফরিদপুর জেলা পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলমকে একাধিকবার ফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, 'পুলিশ সুপার জেলায় একেবারে নতুন। তবে তিনি পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি তাকে অভিযোগগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।'

তিনি বলেন, 'একপাক্ষিক অভিযোগগুলো আমলে নেওয়া হচ্ছে এ অভিযোগ ঠিক নয়, কেননা স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ যেকোনো মূল্যে নিশ্চিত করব। কোনো ভয় ভীতিকর পরিবেশ কাউকে সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। ভোট কেন্দ্রে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।'

রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল আহসান তালুকদার আরও বলেন, 'আমাদের কাজ অবাধ, সুষ্ঠু ও মুক্ত পরিবেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। কাউকে জেতানো কিংবা হারানো আমাদের দায়িত্ব নয়। সে দায়িত্ব ভোটারদের।'

Comments

The Daily Star  | English
consensus commission bicameral parliament proposal

Consensus commission: Talks stall over women’s seats, upper house

The National Consensus Commission proposed establishing an upper house comprising elected representatives from each district and city corporation, and suggested abolishing the current system of reserved seats for women in parliament.

5h ago