৪৮ দিন পর গাজায় যুদ্ধবিরতি, সন্ধ্যায় হামাস ১৩ জিম্মি ও ইসরায়েল ৩৯ বন্দিকে মুক্তি দিতে পারে

আজ বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টা থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ গাজায় এই বিরতি প্রযোজ্য থাকবে। চুক্তি আওতায় হামাস জিম্মি ও ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে। 
হামাস-ইসরায়েল চার দিনের যুদ্ধবিরতি শুরুর পর দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে পথে নেমে সাইকেল চালাচ্ছে শিশুরা । ছবি: রয়টার্স
হামাস-ইসরায়েল চার দিনের যুদ্ধবিরতি শুরুর পর দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে পথে নেমে সাইকেল চালাচ্ছে শিশুরা । ছবি: রয়টার্স

আজ থেকে শুরু হয়েছে ইসরায়েল ও হামাসের চার দিনব্যাপী যুদ্ধবিরতি। আজ সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বোমাবর্ষণ, কামানের গোলা বা রকেট হামলার সংবাদ পাওয়া যায়নি।

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

আজ বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টা থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ গাজায় এই বিরতি প্রযোজ্য থাকবে। চুক্তি আওতায় হামাস জিম্মি ও ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে। 

উত্তর গাজা থেকে রয়টার্সের এক সংবাদদাতা জানিয়েছেন যুদ্ধবিরতি শুরুর পর, ইসরায়েলের কোনো বিমানকে আকাশে উড়তে দেখা যায়নি। ইসরায়েলের উদ্দেশ্যেও হামাস রকেট হামলা পরিচালনা করেনি।

লেবাননের আল-মায়াদিন টিভি জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর গাজার কোনো এলাকায় বোমাবর্ষণের শব্দ শোনা যায়নি।

যুদ্ধবিরতির পর আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে গাজার বাসিন্দারা। ছবি: এএফপি
যুদ্ধবিরতির পর আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে গাজার বাসিন্দারা। ছবি: এএফপি

যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় আজ বিকেলের পর হামাস ১৩ ইসরায়েলি নারী ও শিশুকে মুক্তি দেবে। প্রায় সাত সপ্তাহ ধরে চলমান যুদ্ধে এটাই প্রথম আনুষ্ঠানিক বিরতি।

আল জাজিরা আজ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৩৯ ফিলিস্তিনি নাগরিকের একটি তালিকা পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই ৩৯ ব্যক্তি আজ মুক্তি পেতে পারেন।

আল জাজিরার সাংবাদিক জেইন বাসরাভি অধিকৃত পশ্চিম তীরের নাবলুস থেকে বলেন, 'তবে এটাও শোনা যাচ্ছে যে এই তালিকা চূড়ান্ত নাও হতে পারে।'

'আমি যতটুকু শুনেছি, এখনো কোনো ফিলিস্তিনি পরিবারকে জানানো হয়নি যে তাদের পরিবারের কোনো সদস্যকে আজ মুক্তি দেওয়া হচ্ছে', যোগ করেন তিনি। 

৭ অক্টোবর গাজায় হামাস হামলা চালিয়ে প্রায় ২৪০ জন ইসরায়েলি ও বিদেশী নাগরিককে জিম্মি করে। গত বুধবার হামাসের হাতে জিম্মিদের মধ্যে ৫০ জনের বিনিময়ে সেখানে চার দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় ইসরায়েল ও হামাস।

এই চুক্তির মধ্যস্থতাকারী কাতার জানিয়েছে, আজ কয়েকজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি কিছু ফিলিস্তিনিকেও আজ মুক্তি দেওয়া হবে।

যুদ্ধবিরতির সময়সীমা এগিয়ে আসার আগ পর্যন্ত যুদ্ধ অব্যাহত ছিল। গাজা শহরের ইন্দোনেশীয় হাসপাতালে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ।

উভয় পক্ষ জানিয়েছে, এটি একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি এবং এর মেয়াদ শেষ হলে আবারও যুদ্ধ শুরু হবে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইন্দোনেশীয় হাসপাতালে বিদ্যুৎ নেই। যার ফলে কোনো বাতি জ্বলছে না। তা সত্ত্বেও থেমে ছিল না ইসরায়েলের নিরবচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণ।

এরকম অবস্থার মাঝেও চলেছে চিকিৎসা কার্যক্রম। হাসপাতালে অসংখ্য অসুস্থ বৃদ্ধ রোগী ও শিশু আছেন, যাদেরকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মুনির এল বার্শ আল জাজিরাকে বলেন, হাসপাতালে এক আহত নারী বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন। আরও তিন জন আহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

৪ দিনে ৫০ জন জিম্মি মুক্তি পাবেন বলে জানিয়েছেন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি। 

আজ থেকে গাজায় বাড়তি ত্রাণ সামগ্রীও প্রবেশ করতে শুরু করবে।

যুদ্ধবিরতির পর আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন এক ফিলিস্তিনি নারী। সঙ্গে তার পোষা বিড়াল। ছবি: এএফপি
যুদ্ধবিরতির পর আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন এক ফিলিস্তিনি নারী। সঙ্গে তার পোষা বিড়াল। ছবি: এএফপি

মিশর জানিয়েছে যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে প্রতিদিন এক লাখ ৩০ হাজার লিটার ডিজেল, চার ট্রাক ভর্তি গ্যাস ও ২০০ ট্রাক ভর্তি ত্রাণসামগ্রী প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করবে।

কাতারি মুখপাত্র জানান, ইসরায়েলি জেল থেকে ফিলিস্তিনিরা মুক্তি পাবে বলে তিনি আশাবাদী।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা সবাই আশা করব এই যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে স্থায়ী বিরতির পথে আমরা সবাই কাজ শুরু করতে পারব।'

হামাস তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে নিশ্চিত করেছে, এই চার দিন তাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের হামলা বন্ধ থাকবে।

হামাসের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র আবু উবায়দা পরবর্তীতে এক ভিডিও বার্তায় জানান, 'এটি একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি'।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, একটি 'যুদ্ধবিরতি লাইনের' পেছনে তারা অবস্থান করবে। তবে এই অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি তিনি।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, 'সামনের দিনগুলোতে অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং কিছুই নিশ্চিত নয়।'

'উত্তর গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় হবে এই দীর্ঘ যুদ্ধের প্রথম ধাপ। আমরা এর পরবর্তী ধাপগুলোর জন্যেও প্রস্তুতি নিচ্ছি', যোগ করেন তিনি।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, তাদের হাতে মুক্তি পেতে যাওয়া জিম্মিদের প্রাথমিক তালিকা রয়েছে এবং সে অনুযায়ী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করার অঙ্গীকার নিয়ে টানা সাত সপ্তাহ ধরে গাজায় নিরবচ্ছিন্ন ও প্রতিশোধমূলক স্থল-বিমান হামলা চালাচ্ছে। এই হামলায় এখন পর্যন্ত ১৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের ৪০ শতাংশই শিশু।

 

Comments