তরমুজে ক্যালরি কম শক্তি বেশি, যেভাবে খাবেন বীজ
তরমুজ অত্যন্ত পুষ্টিকর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল। এর কোনো অংশই না ফেলে খাওয়া যায়। এমনকি তরমুজের বীজও তরমুজের মতোই পুষ্টিগুণে ভরপুর।
তরমুজ ও এর বীজের পুষ্টি ও উপকারিতা বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলামের কাছ থেকে।
১২ মাসই পাওয়া যাচ্ছে তরমুজ
পুষ্টিবিদ অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম বলেন, এক সময় শুধু মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসে তরমুজ পাওয়া যেত। সারাবছর অপেক্ষায় থাকতে হতো মৌসুমি ফল তরমুজের জন্য। কৃষি প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার কারণে উন্নত বীজ ও গবেষণার ফলস্বরূপ বর্তমানে ১২ মাসই কমবেশি তরমুজ পাওয়া যায়। সারাবছর যে তরমুজ পাওয়া যায় সেগুলো আকারে একটু ছোট হলেও স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ কিন্তু একই থাকে।
তরমুজের পুষ্টিগুণ
তরমুজকে সুপারফুড বলা হয়, কারণ এর পুষ্টিগুণ অত্যন্ত বেশি।
ড. খালেদা ইসলাম বলেন, তরমুজ শরীরে পানির সমতা রক্ষা করে। একটি তরমুজে প্রায় ৯১ শতাংশই পানি। ৭.৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট এবং চিনি ১০০ গ্রামের মধ্যে প্রায় ৬ গ্রাম থাকে। তরমুজে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে। ১০০ গ্রামের মধ্যে মাত্র ৩০ কিলো ক্যালরি থাকে শক্তি। এ ছাড়া ভিটামিন সি, ভিটামিন এ যেটা বিটা ক্যারোটিন হিসেবে থাকে, ভিটামিন বি৬ এর মত উপকারি ভিটামিন পাওয়া যায় তরমুজে। আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বা খাদ্য আঁশ থাকে। তরমুজের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি, যা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে নানাভাবে সাহায্য করে। তরমুজে চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তরমুজ খাওয়া মোটামুটি নিরাপদ। তবে তা পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার কথা বলেন এই পুষ্টিবিদ।
তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা
১. তরমুজে থাকা আয়রন রক্তস্বল্পতা দূর করতে সহায়ক।
২. প্রচুর ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় তরমুজে, যা হাড় ঠিক রাখে ও মজবুত করে।
৩. তরমুজে যে পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে তা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এ ছাড়া, ফাইবার বা খাদ্য আঁশের পরিমাণও অনেক বেশি। এটি হৃদযন্ত্রের অসুখ এবং শারীরিক নানা সমস্যা সমাধানে কাজ করে।
৪. তরমুজে লাইকোপ্যান থাকে, লাইকোপ্যানের কারণে এখানে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে তা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৫. তরমুজে ক্যারোটিনয়েড চোখের নানা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে, রাতকানা প্রতিরোধে কার্যকরী।
৬. তরমুজ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সহায়ক।
৭. বয়সজনিত কারণে হাড়ের যে ক্ষয় হয় তা রোধে সাহায্য করে তরমুজ। নার্ভাস সিস্টেম ভালো রাখে। শরীরে শক্তি বাড়ায়।
৮. শরীরের পরিপাকক্রিয়া সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে তরমুজ।
৯. ছেলেদের প্রোস্টেট ক্যানসার অনেকাংশে কমাতে সাহায্য করে তরমুজে থাকা লাইকোপ্যান। লাইকোপ্যানের কারণে তরমুজ লাল হয়। এটি অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর।
১০. তরমুজে যে ফ্যাট থাকে সেটি উপকারি ফ্যাট। এতে মনো ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড থাকে, যা হৃদযন্ত্রসহ নানা অঙ্গ-পত্যঙ্গের সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
১১. এ ছাড়া তরমুজে থাকা জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম শরীরের নানা কাজে সহায়তা করে।
তরমুজ বীজের উপকারিতা
ড. খালেদা ইসলাম বলেন, তরমুজের বীজ সুপার নিউট্রেশনের উৎস। এতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে, কিন্তু অনেক বেশি শক্তি এবং বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এটি। তরমুজের বীজ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হাড়ের জন্য উপকারী, চুলের জন্য, দাঁতের জন্য উপকারী। ভালো ফ্যাটের উৎস তরমুজের বীজ। তরমুজে যে পুষ্টিগুণ থাকে তার প্রায়ই সব পাওয়া যায় তরমুজের বীজেও।
আপেলের দানায় যেমন অল্প পরিমাণ সায়ানাইট থাকে যেটা বিষক্রিয়া করতে পারে, তরমুজের বীজে এমন কোন ধরনের ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানান ড. খালেদা ইসলাম।
তরমুজের বীজ কিভাবে খাবেন
তরমুজ খাওয়ার সময়েও বীজ বা বিচি খাওয়া হয়ে যায় অনেক সময়। তবে বীজগুলো অঙ্কুরিত করে খেলে সবচেয়ে ভালো উপকার পাওয়া যায় বলে জানান পুষ্টিবিদ খালেদা ইসলাম। এ ছাড়া ভেজে অথবা সূর্যের আলোতে শুকিয়ে খেতে পারেন। কাঁচা খাওয়ার তুলনায় এভাবে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
তরমুজ খাওয়ার সতর্কতা
তরমুজ অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে অনেকের পেটে অস্বস্তি হয়, গ্যাস হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডায়রিয়া হতে পারে, হঠাৎ ব্লাড সুগার অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে।
তরমুজের মধ্যে যে চিনি থাকে যেটার নাম সরবিটল এবং তরমুজের যে রং লাইকোপ্যান নামক পদার্থ থেকে আসে এই দুইটার কারণে এসব সমস্যা হয়। তাই একবারে অনেক বেশি পরিমাণে না খেয়ে পরিমিত পরিমাণে তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদ খালেদা ইসলাম।
তরমুজের রংভেদে পুষ্টিগুণ কেমন
ভিন্ন ভিন্ন রঙের তরমুজে পুষ্টিগুণে খুব বেশি পার্থক্য নেই জানান পুষ্টিবিদ খালেদা ইসলা। হলুদ তরমুজে বিটা ক্যারোটিন বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়, যা ক্যানসার থেকে রক্ষা করে ও চোখ ভালো রাখে। অন্যদিকে লাল রঙের তরমুজে লাইকোপ্যানের পরিমাণ বেশি থাকে, এটিও ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
কৃত্রিম রং
অনেক সময় তরমুজ আকর্ষণীয় করে তুলতে নাইট্রেড, মিথানল, কার্বাইডসহ বিভিন্ন ধরণের কৃত্রিম রঙের ব্যবহার করে অসাধু ব্যবসায়ীরা, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। খাওয়ার পর পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, ফুড পয়জনিং হতে পারে এর ফলে। এ ছাড়া লিভার, কিডনির সমস্যা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কৃত্রিম রং ব্রেন সেল ড্যামেজ করে দিতে পারে, ক্যানসারের ঝুঁকিসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্ধত্বের কারণ মাত্রাতিরিক্ত ক্যামিকেল। তাই তরমুজ কেনা ও খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দেন অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম।
Comments