রমজানে শত কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির আশা
বৃহত্তর নোয়াখালীর শস্যভাণ্ডারখ্যাত সুবর্ণচর উপজেলার তরমুজের খ্যাতি সারাদেশে। চলতি বছর এ উপজেলায় ১১৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকার তরমুজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
এ বছর উপজেলার মোট ৪ হাজার ২৯২ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। গত বছর দেরিতে তরমুজ চাষ করে লোকসান হওয়ায় এ বছর আগাম তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক।
গরমের পাশাপাশি আসন্ন রমজানে তরমুজের ব্যাপক চাহিদা থাকবে এই আশায় আছেন তারা।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সুবর্ণচরের তরমুজ বৃহত্তর নোয়াখালীর চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের ৭০ শতাংশ চাহিদা মেটাতে পারবে বলে প্রত্যাশা করছে কৃষি অধিদপ্তর।
সাধারণত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে তরমুজের চাষ শুরু হয়। কিন্তু রমজানকে সামনে রেখে ডিসেম্বর থেকেই তরমুজের চাষ শুরু করেছেন কৃষক। বীজ বপনের ৯০ দিনের মধ্যে ফলন আসে। ডিসেম্বরে চাষ শুরু করায় মার্চের শুরুতেই তরমুজ বিক্রির উপযুক্ত হয়ে উঠেছে।
সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হারুন অর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপজেলায় ৪ হাজার ২৯২ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৩৫ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। সেই হিসাবে ১ লাখ ৫০ হাজার ২২০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'প্রতি হেক্টর জমির তরমুজের পাইকারি মূল্য আবাদ খরচ বাদে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। প্রতি হেক্টর তরমুজ উৎপাদনের খরচ ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। সেই হিসাবে প্রতি হেক্টরে কৃষকের লাভ হবে ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এতে করে কৃষকের মোট লাভ হতে পারে ১১৮ কোটি ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা।'
সুবর্ণচর উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের চর মোখলেছ গ্রামের তরমুজ চাষি মো. নুরুল আমিন (৬৮) বলেন, '২০১০ সাল থেকে আমি তরমুজ চাষ করি। এ বছর আমি ১০ কানি জমিতে (১ হাজার ৬০০ শতক) আগাম তরমুজ চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতি কানি জমির তরমুজ ৩ থেকে ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারব।'
প্রথম রমজান থেকে তরমুজ তোলা ও বিক্রি শুরু করবেন বলেও জানান তিনি।
এই গ্রামের কৃষক ওমর ফারুক (৩৫) বলেন, 'প্রতি কানি জমি ৪ মাসের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে লিজ নিয়ে ৭ কানি জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। প্রতি কানিতে আমার খরচ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আশা করছি প্রতি কানিতে ২ লাখ টাকা করে লাভ থাকবে।'
কৃষক জিয়াউল হক বলেন, 'বর্ষার মৌসুমে সুবর্ণচরের সব ইউনিয়ন মেঘনার জোয়ারে ডুবে থাকে এবং ফসলি জমিতে পলিমাটি পড়ে উর্বরতা অনেক বেড়ে যায়। ফলে, তরমুজ খেতে বেশি সার লাগে না এবং অন্যান্য খরচও কমে যায়।'
কৃষক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, 'সুবর্ণচরের তরমুজ আকারে বড়, লাল, মিষ্টি ও সুস্বাদু। রমজানের শুরুতেই চট্টগ্রাম, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাক ও টাকা নিয়ে পাইকাররা খেতে ছুটে আসবেন। তখন পুরো উপজেলায় উৎসবের আমেজ থাকবে। তরমুজ তুলতে কাজ করেন স্থানীয় শত শত শ্রমিক। তাদেরও ভালো আয় হয় এই সময়ে।'
সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হারুন অর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলতি মৌসুমে সুবর্ণচরে তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। মার্চ মাসের বাকি ২ সপ্তাহ এবং এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে, তাহলে এবার রেকর্ড পরিমাণ তরমুজ উৎপাদন হবে। আবাদের খরচ বাদ দিয়ে ১০০ কোটি টাকারও বেশি তরমুজ বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।'
Comments