‘মঞ্চে পরিপূর্ণভাবে, টিভি নাটকে ৮০ ভাগ ও সিনেমায় মাত্র ২০ ভাগ ব্যবহৃত হয়েছি’

শহীদুজ্জামান সেলিম। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ

শহীদুজ্জামান সেলিম বাংলাদেশের মেধাবী একজন অভিনয়শিল্পী। মঞ্চ, টেলিভিশন নাটক, চলচ্চিত্র, ওটিটি সব মাধ্যমেই তিনি অভিনয় করছেন। ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত আছেন দীর্ঘ সময় ধরে। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। নাট্যপরিচালক হিসেবেও সফলতার পরিচয় দিয়েছেন।

চলতি বছর তার অভিনীত 'সুড়ঙ্গ' ও 'প্রিয়তমা' চলচ্চিত্র দুটি বেশ আলোচিত হয়েছে। বর্তমানে 'ওমর ও লিপস্টিক' নামের নতুন দুটি সিনেমায় অভিনয় করছেন।

অভিনয় জীবনের নানা দিক নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় করছেন, অভিনয় আপনার কাছে কি?

শহীদুজ্জামান সেলিম: অভিনয় আমার কাছে প্রার্থনা। আমি একজন শিল্পী। অভিনয়ই করি। বছরের পর বছর ধরে শিল্পের সঙ্গে আমার উঠা-বসা, সখ্যতা ও ভালোবাসা। ধ্যান-জ্ঞান অভিনয়। অভিনয়ের মধ্যে নিজেকে খুঁজে ফিরি।

কেউ কেউ বলেন এখন ওটিটির সময়, আপনার মন্তব্য কি?

শহীদুজ্জামান সেলিম: ওটিটি নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। ভবিষ্যতে ওটিটিতে নির্ভর করতে হবে, ওটিটি টিকে থাকবে।

ওটিটিতে বড় বাজেট থাকে। বাংলাদেশের সব সিনেমা তো বড় বাজেটে হয় না। কিন্তু ওটিটি ভালো বাজেট পায়। ফিচার ফিল্মের চেয়েও ভালো বাজেট পায়। ওটিটিতে জনপ্রিয় অভিনেতাদের পাশাপাশি ভালো ভালো অভিনেতাদের নেওয়া হয়।

সম্প্রতি ডেইলি স্টার ওটিটি নিয়ে যে অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে আমি এটাকে সাধুবাদ জানাই।

টেলিভিশন নাটক নিয়ে আপনি শঙ্কিত?

শহীদুজ্জামান সেলিম: শঙ্কিত না। নাটকের দর্শক তো কমে গেছে। ইউটিউবে চলে গেছে দর্শক। ভারতে টেলিভিশন কোম্পানিগুলো চলে। আমাদের এখানে চলে না। এজন্য আমরাই দায়ী। এত বিজ্ঞাপনের ভিড়ে  কোনটা দেখব? গল্প একটা বড় বিষয়। গল্পের শক্ত ভিত না থাকার কারণেও দর্শক হারায় অনেক সময়।

এখান থেকে উওরণের উপায় কী?

শহীদুজ্জামান সেলিম: ভালো কাহিনী ও ভালো শিল্পী নিয়ে কাজ করতে হবে। 'মা বাবা ভাই বোন' নামে একটি নাটক প্রচারিত হয়েছে এনটিভিতে। দর্শকরা দেখেছেন। ভালো কাহিনি ছিল বলেই কিন্তু দেখেছেন। ভালো শিল্পীরা ছিলেন। 'ফ্যামিলি ক্রাইসিস' নামে একটি নাটক প্রচারিত হয়েছে। এটাও প্রচুর দর্শকরা দেখেছেন। কারণ একটাই, ভালো কাহিনী ও ভালো শিল্পীর সমন্বয়। কাহিনিনির্ভর এবং ভালো শিল্পী যদি থাকে তাহলে সেই নাটক দর্শক দেখবে। তাহলে নাটক আগের মতো প্রাণ ফিরে পাবে।

কেউ কেউ বলেন নাটক এখন ইউটিউবনির্ভর?

শহীদুজ্জামান সেলিম: ইউটিউবে অনেক দর্শকরা নাটক দেখছেন এটা তো সত্যি। এর কয়েকটি কারণ আছে। প্রথমত, ইউটিউবে কিছু অশ্লীল ও সস্তা বিনোদন থাকে। অনেক দর্শক সস্তা বিনোদন পছন্দ করে। আবার ভালো নাটক যে প্রচার হয় না ইউটিউবে তা নয় কিন্তু। কিছু ভালো নাটক অবশ্যই প্রচার হচ্ছে।

টিভি নাটক, মঞ্চ ও সিনেমায় অভিনয় করেছেন, আপনার কি মনে হয় যোগ্যতা কিংবা মেধার হিসেবে আপনাকে তিন মাধ্যমে সঠিকভাবে নির্মাতারা ব্যবহার করতে পেরেছেন?

শহীদুজজামান সেলিম: স্টেজে আমি পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার হয়েছি, টেলভিশনে আশি ভাগ আর মাত্র বিশ ভাগ ব্যবহার হয়েছি সিনেমায়। আমি যতটুকু অভিনয় করতে পারি, যতটুকু করতে সক্ষম, তার বিশ ভাগ ব্যহার হয়েছে সিনেমায়।

আপনার অভিনয়ের পুরোপুরি ব্যবহার না করতে পারার ব্যর্থতা কার?

শহীদুজ্জামান সেলিম: ব্যর্থতা আমার নিজের। ব্যর্থতা নির্মাতার। কাজ করতে গেলে যে পরিমাণ জনসংযোগ দরকার তা আমার মধ্যে নেই। পিআর নেই। নিজেকে জাহির করার বিষয়টি নেই। এটা পারি না। নির্মাতারাও সেভাবে আমার কাজ দেখেননি।

চলতি বছরের আলোচিত সিনেমা সুড়ঙ্গতে অভিনয় করে কতটা তৃপ্ত আপনি?

শহীদুজ্জামান সেলিম: সুড়ঙ্গ আমি নিজে দুই বার দেখেছি। যতবারই পর্দায়  এসেছি একটা অন্যরকম সাড়া পড়ে গেছে দর্শকদের মাঝে। কঠোর সমালোচকরাও বলেছেন সিনেমাটাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন আপনি। এটা আমার কথা নয়, সমালোচকদের কথা। তবে, সাধারণ দর্শকদের কাছেও আমার অভিনয় ভালো লেগেছে। সুড়ঙ্গ সিনেমায় অভিনয় এত ভালো হবার কিছু কারণও আছে। যেমন, অন্য চরিত্রগুলোর সঙ্গে সমন্বয়, পরিচালকের যত্ন নিয়ে কাজ করা, স্ক্রিপ্ট ভালো, সহশিল্পীদের সঙ্গে দারুণ একটা সমন্বয়।

দীর্ঘ দিন ধরে আপনি নাটক পরিচালনা থেকে দূরে আছেন, কারণটা কি?

শহীদুজ্জামান সেলিম: এটার জন্য অপরিসীম ধৈর্য দরকার। তা এখন আর  নেই। কিছুটা রাগ বা অভিমান করেও করি না। এখনকার শিল্পীদের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারব না। অভিনয় ও পরিচালনা দুটোর জন্য প্রচুর ধৈর্য দরকার। এ জন্য এখন শুধু অভিনয়ই করি।

 

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

3h ago