কৃষি মার্কেটে আগুন: আধপোড়া চালও ১৮০ টাকা বস্তা

কৃষি মার্কেটে আগুন
পুড়ে যাওয়া চাল থেকে কিছু ভালো চাল খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন দুজন। ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে বেশিরভাগ দোকানের মালামাল আগুন ও পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্য থেকেই কেউ কেউ পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে শেষ সম্বল হিসেবে তলানিতে থাকা চাল, আধ পোড়া আলু সংগ্রহ করছেন।

গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় সরেজমিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে আগুন লাগা দোকানে এমন চিত্র দেখা যায়। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে দিনমজুর, ভাঙারি শ্রমিকরা কিছু টাকা আয়ের আশায় এখানে এসেছেন। কৃষি মার্কেটের কাঁচাবাজারের দোকানগুলোতে বেঁচে যাওয়া পণ্য খুঁজে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।

আগুন থেকে বেঁচে যাওয়া চাল, ডাল, আলু, লবণ, আটা, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হচ্ছে। আগুনের কারণে এসব পণ্যে ধোঁয়ার গন্ধ ও পানিতে ভেজা। সাধারণ সময়ের ৮০ টাকার চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ১৫ টাকায়। আর এসব পণ্য কম দামে কেনার আশায় অনেককেই ভিড় করতে দেখা গেছে।

টিলা সমান স্তূপ পুড়ে যাওয়া চাল থেকে কিছু ভালো চাল খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন বিউটি আক্তার। জানতে চাইলে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আগুন লাগার খবর শুনে এসেছি। শুনেছি প্রচুর মালামাল পুড়ে গেছে। এগুলো ফেলে দিবে। এর মধ্যে যদি কিছু পাওয়া যায়।'

পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে শেষ সম্বল হিসেবে তলানিতে থাকা চাল, আধা পোড়া আলু সংগ্রহ করছেন অনেকে। ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

'অনেক চালের বস্তা আগুনে পুড়ে গেছে, পানিতে ভিজে গেছে। এর মধ্যে মোটামুটি ভালো চাল কুড়িয়ে নিচ্ছি। এগুলো বিক্রি করে যদি কিছু টাকা পাই,' বলেন তিনি।

কিছুক্ষণের মধ্যেই পানিতে ভেজা আধপোড়া চালের বস্তা কিনে নিলেন তাজউদ্দিন।

এই আধপোড়া চাল দিয়ে কী করবেন জানতে চাইলে বলেন, 'আমি কবুতর পুষি, বিক্রি করি। আমার মোট ৬০টা কবুতর আছে। এই চালের সঙ্গে গম মিশিয়ে তাদেরকে খাওয়াবো।'

আধপোড়া চালগুলো প্রতি বস্তা ১৮০ টাকা দামে ৬ বস্তা কিনেছেন মোহাম্মদপুর আদাবরের বাসিন্দা তাজউদ্দিন। প্রতি বস্তায় ৩০ কেজির মতো চাল আছে।

তিনি বলেন, 'বাজারে ৪০ টাকা কেজির নিচে কোনো চাল নেই। এমন পরিস্থিতিতে এই চাল যদি কবুতরকে খাওয়াতে পারি তাহলে খারাপ কী? চালগুলো বেছে নিয়ে সাথে কিছু গম মিশিয়ে দেবো। এতে আমার কিছু টাকা সাশ্রয় হবে।'

কিছুটা ভালো, কম পুড়ে যাওয়া চালের ৫০ কেজির একটি বস্তা কিনে নিয়েছেন পারভীন আক্তার। তার বাসা শেখেরটেকে। জানতে চাইলে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'এই চালগুলো তেমন পুড়েনি। তবে ধোয়ার গন্ধ আছে, ভিজে গেছে। মনে হচ্ছে ভালোমতো ধুয়ে নিলে খাওয়া যাবে। আমি ৭০০ টাকা দিয়ে ৫০ কেজি মিনিকেট চাল কিনলাম।'

শুধু চাল নয়, আধপোড়া বিস্কুট, আলুসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যও খুঁজে নিয়ে বিক্রি করছেন অনেকে। ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

'৩ মেয়ে, স্বামী নিয়ে আমার ৫ সদস্যের সংসার। স্বামী মাটি কাটার কাজ করে, দিনমজুর। অভাব অনটন সংসার, তাই ঝুঁকি নিলাম। এই ৫০ কেজির অর্ধেক চালও যদি খাওয়া যায় তাহলেও লাভ। এমনিতে মিনিকেট চাল কিনে খাওয়ার সাধ্য আমাদের নাই,' বলেন তিনি।  

শুধু চাল নয়, আধপোড়া বিস্কুট, আলুসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যও খুঁজে নিয়ে বিক্রি করছেন অনেকে। কৃষি মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, নারী-পুরুষ ও ছোট বড় ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন দোকানের ছাই সরিয়ে মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন। বস্তায় ভরে লোহার অ্যাঙ্গেল, তার, পাইপ নিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ। সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে মুদি দোকানগুলোতে।

উল্লেখ্য, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে গত বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার পর আগুনের সূত্রপাত হয়। ভয়াবহ এ আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট যোগ দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তায় যোগ দেয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর বিশেষ দল। বৃহস্পততিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে

 

Comments

The Daily Star  | English

Admin getting even heavier at the top

After the interim government took over, the number of officials in the upper echelon of the civil administration has become over three times the posts.

8h ago