সাফল্য নিয়ে ৫ ভ্রান্ত ধারণা

ছবি: সংগৃহীত

জীবনে সবার সুখ বা দুঃখের সংজ্ঞা এক নয়, তেমনি সাফল্যও গৎবাঁধা একই রূপে ধরা দেয় না সবার কাছে। তবে সাফল্য নিয়ে আকাশে-বাতাসে, আর নয়তো আমাদের আশপাশে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ধারণা নিজেদের আত্মবিশ্বাসে প্রায়ই প্রভাব ফেলে। সমবয়সীদের বিভিন্ন 'সফল' ক্যারিয়ার বেছে নেওয়া হোক, বা 'ঠিক' বয়সে বিয়ে করে 'সেটেলড' হয়ে যাওয়া– সাফল্যকে অনেকেই অনেকভাবে দেখে এবং নিজেকে এর সঙ্গে তুলনা করে ব্যর্থতার তকমা নিয়ে নেয়।

জগতে সাফল্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত অথচ চাইলেই এড়িয়ে সন্তুষ্টিতে থাকা যায়, এমন মিথ বা ভ্রান্ত ধারণার কমতি নেই। এ লেখায় থাকছে এমন ৫টি ভ্রান্ত ধারণা, যা না থাকলে জীবন আরেকটু সহজ হতে পারত–

সাফল্যের একটাই সংজ্ঞা

বিত্ত-বৈভব, সুখ নাকি খ্যাতি? সাফল্য একেক জনের কাছে একেক রকম। লেখার শুরুতেই সেকথা বলা হয়েছে। এবারে আসা যাক এর বিশদে। কারো কাছে তার ক্যারিয়ারই যখন সবকিছুর জায়গা নিয়ে নিয়েছে, তখন অন্য কেউ হয়তো রান্নাঘরে, নিজের পছন্দের বারান্দায় সময় কাটিয়েই শান্তি পাচ্ছে। কেউ যদি জনপ্রিয় হওয়াকে সাফল্যের মাপকাঠি ধরে নেয়, তাহলে তারই পরিচিত অন্য কেউ একা সময় কাটানোতে স্বস্তি খুঁজে নেয়।

সফল হতে হলে তাই এই মিথটি অতিক্রম করে গিয়ে সাফল্যকে এক ছাঁচে ফেলার প্রবণতা বাদ দিতে হবে। কারণ সকলের জীবনই আলাদা গল্পের বুননে তৈরি, সকলের সাফল্যও আলাদা হওয়াটাই স্বাভাবিক। অন্য কারো মানদণ্ডে জীবনকে সফল বা ব্যর্থ না করে দিয়ে নিজের মধ্যে একটু ভেবে দেখা দরকার। তবেই হয়তো সাফল্যের প্রকৃত অর্থ ধরা দেবে, আজীবন ছুটতে হবে না কোনো সোনার হরিণের পিছু।

 

হাল ছাড়া যাবে না

কবীর সুমনও আশাবাদে তার গানে বলে এসেছেন, 'হাল ছেড়ো না বন্ধু!' এই হাল না ছাড়ার বুলি আমরাও প্রতিদিন একে অপরকে শোনাই। কারণ আমাদের সমাজে হাল ছেড়ে দেওয়া লোককে সহজাতভাবেই ব্যর্থদের দলে ফেলে দেওয়া হয়। আর ব্যর্থ হতে কেই বা চায়! তাই যতই কষ্ট হোক না কেন–আমরা শক্ত করে হাল ধরে রাখি।

আর সেইসঙ্গে এই ভ্রান্ত ধারণাকে সঙ্গে করে নিজের মানসিক, শারীরিক ও অন্য শক্তি খুইয়ে বসি। কোনো একটি কাজে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই দরকারি এটিও বুঝতে পারা যে কখন থামা দরকার। জীবন একটা 'ট্রায়াল অ্যান্ড এরর' প্রক্রিয়া বৈ কিছু তো নয়, তাই ভুল কাজে নিজের সব শক্তি না দিয়ে ঠিক কাজের জন্য অপেক্ষা করা দরকার। তাই যখন প্রয়োজন মনে হয়, যখন সহ্যসীমা পেরিয়ে যায়– তখন নিশ্চয়ই হাল ছাড়া যাবে। হাল না ছাড়ার আরোপিত ভার কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর কোনো মানে নেই।

সময় গেলে সাধন হবে না

প্রতিটি কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় থাকে, সেই সময় চলে গেলে আর সেই কাজের পরিবেশ বা ফলাফল থাকে না– এমন বিশ্বাস নিয়েই আমরা বেড়ে উঠি। 'ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি' সিনেমার সূত্র ধরে বলা যায়, '২২ তাক পাড়হাই, ২৫ পে নোকরি, ২৬ পে ছোকরি, ৩০ পে বাচ্চে, ৬০ পে রিটায়ারমেন্ট' – এমন সময়মাফিক ফর্মুলা মেনেই সাধারণত জীবন চলা হয়।

কিন্তু সবাই তো আর ঘড়ির কাঁটায় চলতে পছন্দ করে না, কারো ৪০ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার ইচ্ছে ও সামর্থ্য দুইই চলে আসতে পারে। ঠিক তেমনি ৬০ বছর বয়সে গিয়ে নতুন করে পড়াশোনা করার ইচ্ছেও খুব স্বাভাবিক। বরং 'স্বাভাবিক' শব্দটিকে কোনো মাপকাঠিতে বেঁধে না ফেলে নিজের সময়মতো নিজের নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণই হওয়া উচিত জীবনের প্রকৃত সাফল্য।

রাতারাতি সফল হওয়া যায়

ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ হতে পারে না, তাই পত্রিকার শীর্ষ শিরোনামে অনেক রাতারাতি সফল হওয়ার খবর দেখা গেলেও জীবনের বাস্তব চিত্রটা এমন নয়। যেকোনো বিষয়ে সাফল্যের জন্যই দরকার হয় কিছু সহজাত প্রতিভা, দক্ষতা ও নিয়মিত চর্চা। ভাগ্যের ওপর ভরসা করে সব তরী ভাসিয়ে না দিয়ে ছোট-বড় যেকোনো লক্ষ্য পূরণেই দরকার কিছু সমন্বয়।

কাজ আর কাজ

'ওয়ার্কাহোলিক' বলে ইংরেজিতে একটা শব্দ আছে। এর মাধ্যমে এমন ব্যক্তিদের বোঝানো হয়, যাদের কাছে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাদের কাজ। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই এমন মানুষ থেকে থাকেন, যারা এই বিষয়টিকে 'আদর্শ' বানিয়ে ফেলতে চান। এতে করে অন্য কর্মীরা, যারা ওয়ার্কাহোলিক নন তাদের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি হয়। ব্যক্তিগত ইচ্ছে-অনিচ্ছে, পারিবারিক জীবন, বন্ধু-বান্ধব, শখ-আহ্লাদ বাদ দিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করাই সফল হবার একমাত্র উপায়, এই ধারণাটি চাপিয়ে দেওয়াটা বড় সমস্যা।

কেউ যদি নিজের ইচ্ছেতে ওয়ার্কাহোলিক হতে চায়, জীবনের অন্যান্য সমস্যা থেকে দূরে থাকতে কাজকে সমাধান হিসেবে বেছে নিয়ে ভালো থাকে, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু যারা সেটা চায় না, তাদেরকে সাফল্যের মন্ত্র হিসেবে এটি চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।

সাফল্যের কোনো একটি সংজ্ঞা নেই, সাফল্যে পৌঁছানোর রাস্তা এমনকি গন্তব্যও ভিন্ন ভিন্ন। তাই সে অনুযায়ী, নিজের মানদণ্ড অনুযায়ী সাফল্যের সংজ্ঞা গড়ে তুলে সেইমতো এগিয়ে যাওয়াই হবে বিচক্ষণের কাজ। এমনকি সফল হতেই হবে, এমনটাও ভাবার কোনো মানে নেই। জীবনে ভারসাম্য ধরে রাখাটা বেশি দরকার। অর্থ খুঁজতে পারলে, তথাকথিত সাফল্যের বাইরেও জীবনের অর্থ আছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

9h ago