ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততায় দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নিচে বাংলাদেশ

মূলধন পর্যাপ্ততা
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

মূলধন পর্যাপ্ততার হিসাবে ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর অবস্থান সবার নিচে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন ২০২২ অনুসারে, দেশের ব্যাংকগুলো গত বছর মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত (সিএআর) ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ ধরে রেখেছে।

পাকিস্তানের ব্যাংকগুলোর এই অনুপাত ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ, ভারতের ১৬ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

মূলধন ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের অনুপাত হিসেবে পরিচিত সিএআর এমন সূচক যা দিয়ে একটি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা তুলে হয়।

সেই হিসাবে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মূলধন কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন।

২০১৭ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো ১০ দশমিক ৮ শতাংশ সিএআর বজায় রেখেছিল। সে সময় শ্রীলঙ্কায় সিএআর ছিল ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ ও ভারতে ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ।

যদিও দেশের ব্যাংকগুলোর মূলধনের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত আছে, তবে এটি এখনো প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যাংকগুলো তুলনায় কম। স্থানীয় ব্যাংকাররা বলছেন, ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের কারণে দেশের ব্যাংকগুলোর মূলধনের ভিত্তি শক্তিশালী হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত মার্চে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এটি আগের বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বেশি। ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ খেলাপি ঋণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ এক ডজন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির কারণে তারা দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নিচে অবস্থান করছে। তবে, দেশের কয়েকটি বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের মূলধন তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় আছে।

মার্চে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের সিএআর ছিল ৫ দশমিক ৯০ শতাংশে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ৩ বিশেষায়িত ব্যাংকের ক্ষেত্রে এটি নেতিবাচক ৩৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

এর বিপরীতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সিএআর ছিল ১৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর ছিল ৩১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

মার্চ শেষে ১১ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দেখা দেয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৯৪ কোটি টাকা ঘাটতি আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঋণের বড় অংশ খেলাপিদের কাছে আটকে আছে। অর্থাৎ, ব্যাংকগুলো ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা ফেরত পাচ্ছে না।'

এ ছাড়াও, কিছু ঋণ পুনঃতফসিল ও মওকুফ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ব্যাংকের মূলধন সাধারণত বেড়ে যায় যখন তারা অর্থ বিনিয়োগ ও পুনর্বিনিয়োগ করতে পারে।

'কোনো ব্যাংকের মূলধন কমে গেলে সেই ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ বেড়ে যায়' উল্লেখ করে সাবেক গভর্নর আরও বলেন, 'ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ বা পুনর্বিনিয়োগ করতে পারছে না। কারণ তাদের অধিকাংশের আয় কমে গেছে।'

তার মতে, ব্যাংকগুলোর মূলধন কমে গেলে বিদেশিরা বিনিয়োগে স্বস্তি পান না।

'ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেশের ব্যাংকগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানলেও কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না,' বলে মন্তব্য করেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

14h ago