১৮ ব্যাংককে লভ্যাংশ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা

অলঙ্করণ: স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৮ ব্যাংককে লভ্যাংশ দিতে নিষেধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ব্যাংক পরিচালক ও শীর্ষ নির্বাহীদের বারংবার আবেদন সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্তে অনড় থাকে।

গত ২১ মে ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১'র ২২ ধারা উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৮ ব্যাংককে চিঠি দেয়। তাতে আর্থিক পরিস্থিতি সংকটাপন্ন হওয়ায় ব্যাংকগুলোকে লভ্যাংশ দিতে নিষিদ্ধ করা হয়।

তবে এসব ব্যাংকের বেশিরভাগকেই খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণে বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতি পূরণে ডেফারেল সুবিধা নেওয়া ব্যাংকগুলোকে লভ্যাংশ না দেওয়ার বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'

এর ফলে এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬ ব্যাংকের মধ্যে ১৬টি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিগত বছরের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পেরেছে।

আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক লোকসান করেছে। অন্যদিকে, ওয়ান ব্যাংক মুনাফা করলেও লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছড়া শেষ সময়ে এসে ঢাকা ব্যাংককে লভ্যাংশ ঘোষণা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ডেইলি স্টারের হাতে আসা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক চিঠিতে বলা হয়েছে—প্রভিশন ঘাটতি মেটানোর মতো মুনাফা ব্যাংকগুলোর নেই। ফলে এসব ঘাটতি সমন্বয় না করে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া হিসাব বছরের আর্থিক বিবরণী তৈরি করতে পারবে এসব ব্যাংক।

প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে ব্যাংকগুলোকে এক মাসের মধ্যে নিজ নিজ বোর্ডের অনুমোদনপ্রাপ্ত বাস্তবসম্মত ও সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

চিঠিতে ব্যাংকগুলোকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ তাদের আর্থিক বিবরণী ও পুঁজিবাজারের তথ্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।

প্রভিশন রক্ষণাবেক্ষণ, লাভ-ক্ষতির হিসাব ও মূলধন পর্যাপ্ততা সম্পর্কিত তথ্যে ঘাটতির কথা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলেছে—দাখিলকৃত তথ্য ও নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর মধ্যে অসঙ্গতি থাকলে ব্যাংক কোম্পানি আইনের অধীনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের ব্যাংক লভ্যাংশ দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুঁজিবাজারের তথ্যে প্রকৃত প্রভিশন ঘাটতি দেখানোর নির্দেশ দিলেও তা ব্যাংকের ব্যালান্স শিটে দেখানো হবে না। প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতি কমাতে আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা দেব।'

গত মার্চে লভ্যাংশ দেওয়ার নতুন নিয়ম জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২৪ সাল থেকে যেসব ব্যাংক প্রভিশনিংয়ে ডেফারেরল সুবিধা নিবে তাদের লভ্যাংশ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না।

আগামী বছর থেকে যেসব ব্যাংকের মোট ঋণের ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি সেগুলোর ওপর এমন বিধিনিষেধ আসবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার।

তিনি বলেন, 'আমানতকারী, শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহকদের আস্থা নিয়ে ব্যাংকগুলো চলছে। কিন্তু লভ্যাংশ দিতে না পারলে আস্থা কমবে।'

'নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বোঝানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু তারা তা শোনেনি।'

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ওই ১৮ ব্যাংকসহ বেশির ভাগ ব্যাংকই প্রভিশন ঘাটতিতে পড়ায় ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তাদের আর্থিক বিবরণী চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের অনুমোদন নিয়ে এ সময়সীমা ৩১ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আর্থিক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনাপত্তিপত্র পেয়েছি। তবে এ বছর লভ্যাংশ দেওয়া কঠিন হবে।'

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬ ব্যাংকের মধ্যে সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

Comments

The Daily Star  | English
remittance earning of Bangladesh

Remittance rises 30% in July

Migrants sent home $2.47 billion in the first month of the current fiscal year

5h ago