ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক

২ কিলোমিটারে ১৮৭ গর্ত

ঢাকা খুলনা মহাসড়ক
ফরিদপুর সদরে কোমরপুর এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গর্ত ছোট যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। ছবি: সুজিত কুমার দাস/স্টার

ফরিদপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ২ কিলোমিটার অংশে ছোট-বড় ১৮৭টি গর্ত তৈরি হয়েছে। এসব স্থানে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক, ঘটছে প্রাণহানিও।

ফরিদপুর সদরের উত্তরে কোমরপুর বাহিরদিয়া সেতু থেকে শুরু করে দক্ষিণে সশস্ত্রবাহিনীর কার্যালয় পর্যন্ত মহাসড়কের এই ২ কিলোমিটারে এসব গর্ত বাস-ট্রাকের জন্য তেমন ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও ছোট যানবাহনের জন্য যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ।

গতকাল শনিবার সরেজমিনে মহাসড়কের ওই অংশ গিয়ে দেখা যায়, সড়কের মাঝখানে ও ২ পাশে এসব গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এক লেনে ১২৫টি ও অপর লেনে ৬২টি ছোট-বড় গর্ত দেখা গেছে।

কোনো কোনো গর্তের ব্যাস ১ মিটার, কোনো কোনোটির গভীরতা ৫-৭ ইঞ্চি।

একই স্থানে পাশাপাশি যেমন গর্ত দেখা গেছে, তেমনি দূরে দূরেও সৃষ্টি হয়েছে বিপজ্জনক এসব গর্ত।

কোনো স্থানে দেখা গেছে সড়কের পিচ গলে এবড়ো-থেবড়ো উঁচু হয়ে আছে, যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

সড়কের এই অংশে আছে কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউট, ফরিদপুর মুসলিম মিশন দাখিল মাদ্রাসা, মুসলিম মিশন কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউট ও মুসলিম মিশন দাখিল মাদ্রাসার সামনে গর্তগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

ঢাকা খুলনা মহাসড়ক
ফরিদপুর সদরে কোমরপুর এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গর্ত। ছবি: সুজিত কুমার দাস/স্টার

ইজিবাইকে ওই পথ দিয়ে নিয়মিত চলাচল করেন ফরিদপুর সদরের ভাষাণচর এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন (৩৬)। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই ২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হিমশিম খেতে হয়। গর্তগুলি চিহ্নিত না করায় ঝুঁকি বেড়ে যায়। মাঝেমধ্যে গর্তে চাকা পড়ে গাড়ি উল্টে যায়।'

ফরিদপুর শহরে নানান কাজে মোটরসাইকেলে আসা-যাওয়া করেন রাজবাড়ী শহরের বাসিন্দা এজাজ আহমেদ। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সামনে বা পেছন থেকে বাস বা ট্রাক এলে সেটি পাশ কাটাতে কিংবা সাইড দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সড়কে এই গর্তগুলো দীর্ঘদিন ধরে আছে। খুবই ঝুঁকি নিয়ে সড়কের এই অংশে চলাচল করতে হয়।'

সড়ক সংলগ্ন ফরিদপুর মুসলিম মিশনের সাধারণ সম্পাদক এম এ সামাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সড়কের ওই গর্তগুলো মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠেছে। মানুষ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন।'

মুসলিম মিশনের কলেজের এক শিক্ষার্থী ও মুসলিম মিশন এতিমখানার এক শিক্ষার্থীর নানি ওই সড়কে নিহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

ফরিদপুরের করিমপুর হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, সড়কের ওই অংশে ছোট ছোট দুর্ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। গত ৩ মাসে সেখানে মোটরসাইকেল আরোহী ২ বন্ধু, এক পথচারী নারীসহ অন্তত ৪ জন নিহত হয়েছেন।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর গাড়ির চাপ কমায় বাহিরদিয়া থেকে রাজবাড়ী রাস্তার মোড় পর্যন্ত সড়কের এই অংশে দুর্ঘটনা আগের তুলনায় কমে এসেছে বলে দাবি হাইওয়ে পুলিশের।

করিমপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, '৩-৪ দিন আগে মহাসড়কের ওই অংশে গিয়ে আমি রীতিমত বোকা হয়ে গেছি। সড়কের মধ্যে যেসব গর্ত তৈরি হয়েছে, তা বাস-ট্রাকের মতো বড় গাড়ির জন্য সমস্যা না হলেও, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও ৩ চাকার যানবাহনের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি সড়ক বিভাগকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি।'

ফরিদপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমরান ফারহান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কোমরপুর বাহিরদিয়া সেতু থেকে শুরু করে দক্ষিণে সশস্ত্রবাহিনীর কার্যালয় পর্যন্ত ২ কিলোমিটার অংশে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের বিষয়টি আমার জানা আছে। ইতোমধ্যে ওই স্থানগুলো সংস্কারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই গর্তগুলো ঠিক হয়ে যাবে।'

Comments