খেলাপি ঋণে ভারাক্রান্ত ব্যাংকিং খাতে তদারকি জোরদারে ‍গুরুত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

বাংলাদেশ ব্যাংক, খেলাপি ঋণ, ব্যাংক কোম্পানি আইন,
ছবি: স্টার

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত ইতোমধ্যে উচ্চ খেলাপি ঋণে ভারাক্রান্ত, এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ও ঋণ পুনরুদ্ধারে তদারকি জোরদার রাখতে হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানুয়ারি-মার্চ সময়ের 'বাংলাদেশ ব্যাংক ত্রৈমাসিক' প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চ খেলাপি ঋণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ সংশোধনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২১ কোটি টাকা, যা তিন মাস আগের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। একইসঙ্গে আগের বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি।

বর্তমান খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেশের ব্যাংকিং খাতের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, যা ২০২২ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা হয়েছিল।

চলতি বছরের মার্চে খেলাপি ঋণের অনুপাত দাঁড়ায় ব্যাংকিং ব্যবস্থার মোট ঋণের ৮ দশমিক ৮ শতাংশে। তখন ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা বকেয়া ছিল। যা গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ৮.১৬ শতাংশ ও মার্চে ছিল ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলছেন, 'খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ খুঁজে বের করা কঠিন। বরং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কিছু উদ্যোগের কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এছাড়া ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১'র সর্বশেষ সংশোধনী ব্যাংকিং খাতের আর্থিক অবস্থাকে আরও দুর্বল করবে।'

তিনি জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৫-১৬ সাল থেকে খেলাপি ও ঋণগ্রহীতাদের শিথিলভাবে ঋণ পরিশোধের সুযোগ করে দিয়ে আসছে।

গত ২১ জুন জাতীয় সংসদে প্রথমবারের মতো অভ্যাসগত খেলাপিদের সংজ্ঞায়িত করে নতুন ব্যাংক কোম্পানি আইন পাস হয়।

আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তার নামে বা কোম্পানির নামে নেওয়া ঋণ পরিশোধ না করেন, তাহলে তিনি ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবেন।

এ ছাড়া, কোনো ব্যক্তি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিলে অভ্যাসগত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবেন।

জাহিদ হোসেন বলছেন, অভ্যাসগত খেলাপিদের বিচারের আওতায় আনতে সরকার আইনে কোনো কঠোর বিধান রাখেনি।

নতুন আইন, কোনো গ্রুপ অব কোম্পানিকে ঋণ নিতে অনুমতি দেবে, এমনকি ওই কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপি হলেও। অতীতে এ ধরনের সুবিধা ছিল না বলে জানিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ।

নতুন আইনে পরিচালকদের মেয়াদ ৯ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করা হয়েছে। এই বিধানটি ব্যাংকের সুশাসন দুর্বল করবে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে পরিচালকরা ভিন্ন ব্যাংক থেকে যে ঋণ নেন তা কীভাবে আটকানো যাবে এই আইনে সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।'

কারণ, কিছু পরিচালক আছেন যারা অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। ইতোমধ্যে ব্যাংক বোর্ডের অনেক সদস্য একে অপরের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে এভাবে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছেন, যা ব্যাংকের সুশাসন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'খেলাপি ঋণ প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পিছনে রাজনৈতিক কারণই প্রধান।'

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ব্যাংক আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, তারল্য পরিস্থিতি কঠোর হওয়া এবং টাকার অবমূল্যায়ন ব্যাংকিং খাতের জন্য আরও চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। বর্তমানে অর্থনীতি দুটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। একটি হলো ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও আরেকটি হলো ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন।

২০২২-২৩ সালে ভোক্তা মূল্য সূচক বেড়ে ৯ দশমিক ০২ শতাংশ দাাঁড়িয়েছে, যেখানে সরকারের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এটি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ গড় মূল্যস্ফীতির হার। এছাড়া, দেশের রিজার্ভ কমায় গত এক বছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Economic expectations: Did govt fall short?

When an interim government was sworn into office following the ouster of the Awami League regime just 100 days ago, there was an air of expectation that the Prof Muhammad Yunus-led administration would take steps to salvage a scam-ridden financial sector and rescue an ailing economy.

8h ago