ঋণ পরিশোধে আবারও ছাড় দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক

‘ফেসবুক পোস্টের’ জেরে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে
ছবি: সংগৃহীত

ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধে আবারও ছাড় দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, দেশে ও বিদেশে চলমান সংকটের মধ্যে ঋণ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন এমন ঋণগ্রহীতাদের সহায়তায় শিথিল ঋণ পরিশোধ সুবিধা পুনরায় চালু হচ্ছে।

তবে ব্যাংকাররা বলছেন, কৃত্রিমভাবে খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত এটি দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকিং খাতের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ করবে।

ব্যাংকারদের যুক্তি, ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে একই ধরনের ছাড় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, খেলাপি ঋণের মাত্রা কমেনি।

গতকালের প্রজ্ঞাপনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক বাজারে কাঁচামাল এবং অন্যান্য উপকরণের দাম ও পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। ফলে, ঋণগ্রহীতারা পুরো কিস্তি পরিশোধ করতে সমস্যায় পড়ছেন।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৩ সালের এপ্রিল-জুন পর্যন্ত মেয়াদি ঋণগ্রহীতারা তাদের কিস্তির ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলে তিনি খেলাপি হবেন না। যেসব ঋণ এক বছরেরও বেশি সময় পরিশোধের সময় সীমা থাকে সেগুলোকে মেয়াদি ঋণ বলা হয়। নতুন নিয়মটি স্বল্পমেয়াদী কৃষি ঋণ ও বিভিন্ন ব্যাংকের বিতরণ করা ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যে পরিমাণ কিস্তি পরিশোধ করা হবে না, তা ঋণ পরিশোধের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩ মাসের মধ্যে দেওয়ার সুযোগ থাকবে।

এই সুবিধার জন্য ব্যাংকগুলো কোনো শাস্তিমূলক সুদ বা অন্য কোনো ফি আরোপ করতে পারবে না জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, পুনঃতফসিলকৃত ঋণও সর্বশেষ সুবিধা ভোগ করবে।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠন সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ঋণ পরিশোধের সুযোগ শিথিল করার দাবি জানানোর পর বাংলাদেশ ব্যাংক এই উদ্যোগ নিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বিভিন্ন আকারে ঋণ সুবিধা নীতি অনুসরণ করেছিল। যেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমে করোনা মহামারি ও পরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারে।

এ বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে কোনো শিথিল সুবিধা ছিল না। কিন্তু, খেলাপি ঋণের উর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকার পরেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

২০২৩ সালের প্রথম ৩ মাসে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। যা ৩ মাস আগের তুলনায় ৯ শতাংশ ও আগের বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি।

সর্বশেষ খেলাপি ঋণের পরিসংখ্যান ব্যাংকিং খাতের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। যা ২০২২ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে প্রকাশিত ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকার পরের অবস্থানে আছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'এই শিথিল সুবিধা ব্যাংকিং খাতে তারল্যের চাপ আরও বাড়াতে পারে। কারণ, এই সময়ের মধ্যে ঋণগ্রহীতারা তাদের অর্থ ফেরত পাবেন না।'

'এ ছাড়া ভালো ঋণগ্রহীতারা তাদের ঋণ পরিশোধে নিরুৎসাহিত হতে পারেন,' বলেন তিনি।

গত রোববার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন মুদ্রানীতির বিবৃতিতেও একই আশঙ্কার কথা বলা হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, 'ব্যাংকগুলোতে আমানতের ধীর গতি ও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি তারল্য পরিস্থিতিকে কঠিন করেছে। তাই স্থিতিশীল আর্থিক ব্যবস্থার জন্য তদারকি ও মনিটরিং গাইডলাইন জোরদারের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমানো ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।'

Comments

The Daily Star  | English
Reforms vs election

Reforms vs election: A distracting debate

Those who place the election above reforms undervalue the vital need for the latter.

20h ago