ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিটের আগে যে ৮ কাজ করতে ভুলবেন না
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর একটি হচ্ছে ফেসবুক। বিস্তৃত এবং চমৎকার সব ফিচারের কারণে ফেসবুক এত জনপ্রিয়। তবে অনেক সময় এর ব্যবহার আসক্তির পর্যায়ে চলে যায় কিংবা এর বহুল ফাংশন মানুষকে ক্লান্ত করে তুলতে পারে। এ ধরনের নানা কারণে মানুষ তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিটের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
তবে কারণ যাই হোক না কেন, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিটের আগে অবশ্যই এই ৮টি কাজ করা উচিত। চলুন দেখে নেওয়া যাক সে কাজগুলো সম্পর্কে।
সিদ্ধান্তটি আপনার পরিচিতদের জানিয়ে রাখুন
ফেসবুকে আপনার যাত্রা শেষ করার আগে আপনার ঘনিষ্ঠদের এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করা উচিত। যাতে করে আপনার পরিচিতরা আপনার সঙ্গে প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারে এবং আপনাকে নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকে। বিভিন্নভাবে আপনি এটি করতে পারেন। গ্রুপে বা পৃথকভাবে মেসেজের মাধ্যমে কিংবা ফেসবুক স্ট্যাটাস পোস্ট করে বা স্টোরিতে শেয়ারের মাধ্যমে, নানা উপায়ে এটি করা যায়। আপনার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যান্য উপায় সম্পর্কেও আপনি এর মাধ্যমে তাদেরকে জানিয়ে দিতে পারবেন।
প্রয়োজনীয় মিডিয়া ফাইল সংরক্ষণ করুন
নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহারকারীরা তাদের অ্যাকাউন্টে অনেক ছবি ও ভিডিও আপলোড করে থাকেন। সেখানে অবশ্যই বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করা অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত আছে। তাই এই মিডিয়া ফাইলগুলো সংরক্ষণের মাধ্যমে আপনার স্মৃতিগুলোকেও সংরক্ষণ করুন।
ফোন থেকে ছবি সংরক্ষণ করতে, ছবিটি খুলে স্ক্রিনের ওপরের ডানদিকে ৩টি বিন্দুতে ট্যাপ করুন। সেখান থেকে সেভ ফটো সিলেক্ট করুন। ছবিটি আপনার ফোনে সংরক্ষিত হয়ে যাবে। তবে ভিডিও সংরক্ষণের জন্য ফেসবুকের নিজস্ব কোনো ফিচার নেই। তবে অনেক ধরনের ফেসবুক ভিডিও ডাউনলোডার অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট রয়েছে। যেগুলো দিয়ে আপনি আপনার ভিডিওগুলো সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন।
মেসেঞ্জার রাখবেন কি না সিন্ধান্ত নিন
প্রাথমিকভাবে, ফেসবুকের একটি সমন্বিত মেসেজিং এবং চ্যাটিং সিস্টেম ছিল। তবে এখন সেটি আর নেই। বর্তমানে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে মেসেজিং বা কলিং করতে হয়। যা একটি আলাদা অ্যাপ।
মেসেঞ্জারে সাইন-আপ করলে এটি তখন থেকেই স্বাধীনভাবে চলতে থাকে। যার মাধ্যমে আপনি আপনার ফোন কন্টাক্টস এবং ইনস্টাগ্রাম থেকেও যোগাযোগ করতে পারেন। সুতরাং, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিট করলেও আপনার মেসেঞ্জার ডিলিট হবে না। আপনি যদি চান কেউ আপনার সঙ্গে মেসেঞ্জারেও যোগাযোগ না করুক। তাহলে আপনাকে এটি আলাদাভাবে নিষ্ক্রিয় করে নিতে হবে।
মেসেঞ্জার থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হতে, আপনার মেসেঞ্জার অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেট করবেন যেভাবে:
- মেসেঞ্জার খুলুন এবং ওপরের বাম কোণায় আপনার প্রোফাইল ছবিতে ট্যাপ করুন।
- অ্যাকাউন্ট সেটিংসে যান।
- সেখান থেকে ম্যানেজ অ্যাকাউন্ট নির্বাচন করুন।
- তারপর পার্সোনাল ইনফরমেশনে যান।
- সেখান থেকে ডিঅ্যাক্টিভেট সিলেক্ট করুন।
- মেসেঞ্জার আপনাকে আপনার অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় বা ডিঅ্যাক্টিভেট করতে, আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় প্রবেশ করতে বলবে৷
আপনার পেজগুলোর অ্যাডমিন পরিবর্তন করে নিন।
আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আপনার ফেসবুক পেজগুলোও সংযুক্ত। তাই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিট করলে, তার প্রভাব আপনার পেজগুলোর ওপরও পড়বে। যেসব পেজের মালিক বা অ্যাডমিন একজন। সেগুলোর ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট ডিলিট করলে পেজটি আনপাবলিশড বা অপ্রকাশিত হয়ে যায়। অর্থাৎ, পেজটি আর জনসাধারণ এবং এর ফলোয়ারদের কাছে দৃশ্যমান থাকে না। এ ছাড়া পেজটির সমস্ত অগ্রগতি, এনগেজমেন্ট এবং লাইক হারিয়ে যায়। তাই আপনি যদি চান আপনার পেজটি তার যাত্রা চালিয়ে যাক। সে ক্ষেত্রে অন্য কোনো পেজ অ্যাডমিন যুক্ত করার কথা বিবেচনা করুন।
গ্রুপ এডিট অথবা ডিলিট করুন
অ্যাকাউন্ট ডিলিট করলে পেজের মতোই গ্রুপের ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়ে। এর মাধ্যমে আপনার একা মালিকানাধীন গ্রুপ কিংবা কমিউনিটিগুলো মুছে যায়। আপনার যদি মনে হয়, গ্রুপ কিংবা কমিউনিটিটির টিকে থাকা জরুরি। সে ক্ষেত্রে, অন্য কাউকে সেগুলোর অ্যাডমিন করে নিন।
ব্যবসা কিংবা পেশাগত কাজগুলো গুছিয়ে নিন
বর্তমানে ফেসবুক চাকরিসহ বিভিন্ন পেশাদার কাজের একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে যদি আপনার ব্যবসা ফেসবুক-কেন্দ্রিক হয়। সেক্ষেত্রে, ফেসবুক ছেড়ে যাওয়ার কাজটি আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনার গ্রাহকদের কী হবে এবং ব্যবসার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
ফেসবুক ডেটা ও ইতিহাস সংরক্ষণ এবং ডাউনলোড
ফেসবুক ত্যাগ করার আগে, ফেসবুক ডেটা এবং ফেসবুত হিস্ট্রি সংরক্ষণ করা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এই ডেটা এবং হিস্ট্রির মধ্যে আপনার মন্তব্য থেকে শুরু করে পোস্ট, বন্ধু, বার্তা, ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য সব ফেসবুক কার্যকলাপের হিস্ট্রি সবই অন্তর্ভুক্ত। ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের সমগ্র ফেসবুক ডেটা ও ইতিহাসের একটি অনুলিপি ডাউনলোড করতে দেয়। যেগুলো আপনার তথ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগতে পারে।
ফেসবুকের মেমরিগুলো সাজিয়ে রাখুন
ফেসবুক ডেটা ডাউনলোড করার পর সেগুলো পর্যালোচনা করে বিভিন্ন ফোল্ডারে সাজান। এ ক্ষেত্রে আপনি চাইলে ঘটনা, সময়, মানুষ কিংবা স্থানের নাম দিয়ে সেগুলো লেবেল করতে পারেন। এমনভাবে ডেটাগুলো সাজান যেন সেগুলো সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। এ ছাড়া অতিরিক্ত ডেটা এবং পুনরাবৃত্তিমূলক বিষয়বস্তুগুলোও ডিলিট করে নিতে পারেন।
মিডিয়াগুলো সাজিয়ে রাখার জন্য গুগল ফটোস একটি চমৎকার মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট টুল। যেখানে অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস উভয় ব্যবহারকারীরাই তাদের ফেসবুকের স্মৃতিগুলো সংরক্ষণ করতে এবং সাজিয়ে রাখতে পারবেন।
ফেসবুক বেশ চমৎকার এবং দরকারি একটি সাইট বা অ্যাপ হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই এটির ব্যবহার ছাড়তে চান। তবে ফেসবুক ছেড়ে যাওয়ার মানে এই নয় যে আপনাকে এর স্মৃতিগুলোও ছাড়তে হবে। তাই, ফেসবুক ডিলিটের আগে আপনার স্মৃতিগুলোকে সংরক্ষণ করুন এবং গুছিয়ে রাখুন। এ ছাড়া আপনার ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপ থাকলে সেগুলোর ভবিষ্যৎও নির্ধারণ করে নিন।
তথ্যসূত্র: এমইউও
গ্রন্থনা: আহমেদ বিন কাদের অনি
Comments