নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকবেন যেভাবে

নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকবেন যেভাবে
প্রতীকী ছবি।

আমাদের সঙ্গে যা ঘটে অনেক সময় তা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। কিন্তু আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবো, তা পুরোটাই আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। শুধুমাত্র প্রতিক্রিয়ায় ইতিবাচকতা আনার কারণে অনেক নেতিবাচক ঘটনার প্রভাবও কমে আসে।

নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা থেকে ধীরে ধীরে অতিমাত্রায় দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা, মানসিক চাপ ইত্যাদির জন্ম হয়। আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়ারও অন্যতম কারণ দিনের পর দিন ধরে নেতিবাচক ভাবনায় মশগুল হওয়া। নেতিবাচক ভাবনা থেকে রেহাই পাবার অন্যতম উপায় হচ্ছে এর গভীরে গিয়ে অনুসন্ধান করা এবং বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে এর প্রভাবগুলো কমিয়ে আনা।

১. মনোযোগের চর্চা

বিভিন্ন অস্থির সময়ে নিজেকে সবকিছু থেকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও দূরে সরিয়ে, একটি শান্ত পরিবেশে মনোযোগের চর্চা করা যায়। অন্য সব বিক্ষিপ্ততা থেকে মুক্ত হবার চেষ্টায় কোনো একটি ইতিবাচক স্থান, বিষয় বা দৃশ্য কল্পনা এবং সেটিতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পারেন। সবসময় যে মেডিটেশন বা ধ্যানই হতে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই। নিজের মতো করে ইতিবাচকতার অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।

২. ভাবনার গতি বন্ধ না করা

কোনো বিষয় থেকে দূরে পালানোর অর্থ এই নয় যে বিষয়টির অস্তিত্ব শেষ। এতে বরং বিষয়টিকে আরও বেশি পাত্তা দেওয়া হয়। আমাদের জীবনে চলমান সমস্যা, মন খারাপ, রাগ, নেতিবাচক সব অনুভূতির ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। যখন কোনোরকম নেতিবাচক চিন্তা মাথায় আসবে, তখন তা জোর করে দূরে না সরিয়ে– ভাবনার গতি বন্ধ না করে সেটিকে আসতে দিন। খুঁটিনাটি উল্টেপাল্টে দেখুন, নেতিবাচক চিন্তা আসলেও ধোপে টেকার মতো কি না।

৩. ভাবনার প্রতিস্থাপন

একটি ভাবনাকে অন্য ভাবনা দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যায়। যখনই কোনো নেতিবাচক বিষয় কপালে দুশ্চিন্তার রেখা আনবে, তখনই দিনের বা চলমান সময়ের ভালো কোনো দিক নিয়ে ভাবা যায়। অথবা একই ঘটনার মন্দ দিক যখন বেশি চোখে পড়বে, তখন সেটির ভালো কোনো দিক আছে কি না– তা নিয়ে ভাবা শুরু করা দরকার। ইংরেজিতে যাকে বলে 'সিলভার লাইনিং' খুঁজে বের করা। হতাশার অমানিশায় খুঁজে বের করা হোক, নিজের রূপালী আশার রেখা।

৪. গঠনমূলক সমালোচনা

অহেতুক নিন্দা বা প্রশংসা দুটোই মানুষকে যথাযথ সত্য থেকে দূরে রাখে। সেজন্য প্রয়োজন গঠনমূলক সমালোচনার। অন্য কারো নিন্দায় যেন নিজেকে কম যোগ্য না মনে হয় বা প্রশংসায় নিজের যোগ্যতা নিয়ে মনের মধ্যে অহংকার না আসে– এ কারণে নিজেই নিজেকে এবং অপর ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী তাকেও ঠিক সমালোচনা করার মাধ্যমে বাস্তবের কাছাকাছি রাখা সম্ভব। এতে করে নেতিবাচক চিন্তা থেকেও দূরে থাকা যায়।

৫. যুক্তি দিয়ে ভাবা

একজন বোধশক্তি সম্পন্ন মানুষের চিন্তা-ভাবনায় যুক্তি ও আবেগ, দুটোরই আধিপত্য থাকবে। তবে আবেগ প্রায় সময়ই আমাদের এতটা কাবু করে ফেলে যে মানসিকভাবে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি। নিজেকে শক্তির যোগান নিজেই দিতে হয়, আর এ শক্তির অন্যতম উপায় হচ্ছে যুক্তি। কথায় আছে না, যুক্তিতেই মুক্তি? সম্পূর্ণ মুক্তি না মিললেও যুক্তি অন্তত ব্যক্তিকে তার নিজের বানানো নেতিবাচক চিন্তার কারাগার থেকে মুক্ত করার পথে সাহায্য করতে পারে। নিজেকে বা অন্যকে নিয়ে কোনো নেতিবাচক কথা মাথায় এলে সেটি পক্ষপাতের দৃষ্টিতে না দেখে একজন তৃতীয় পক্ষপাতহীন ব্যক্তির নজরে দেখতে হবে। কেন এমন হলো, কীভাবে এ থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে এবং কোন ধরনের আচরণে বিষয়টি পুরোটাই বিগড়ে যাবে, এসব খতিয়ে দেখতে হবে।

নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবং মনোবিজ্ঞানী র‍্যাচেল গোল্ডম্যান বলেন, 'আমাদের চিন্তা-ভাবনা, আবেগ ও আচরণ সবই নিজেদের মধ্যে সংযুক্ত। তাই আমরা কেমন বোধ করি এবং কোন ধরনের আচরণ করি– তার উপরও আমাদের চিন্তা প্রভাব রাখে। তাই সময়ে সময়ে বাজে ভাবনা আমাদের মাথায় চলে এলেও চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় যেন তা প্রভাব ফেলতে না পারে।'

চর্চার মাধ্যমে যেকোনো অভ্যাস গড়ে তোলাও যায়, আবার বদভ্যাস বাদও দেওয়া যায়। প্রতিদিন ধোঁয়াশার মতো মস্তিষ্কে জমাট বাঁধতে থাকা নেতিবাচক চিন্তাগুলোকেও নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে বাদ দেওয়া যায়, কাটানো যায় একটি মানসিকভাবে সুস্থ ও সুন্দর জীবন।  

Comments

The Daily Star  | English

Jatiyo Party's office set on fire in Khulna

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna's Dakbangla area last evening

1h ago