স্ট্রেস বাড়ছে, সমাধান কী?

ছবি: সংগৃহীত

স্ট্রেস হওয়ার মূল কারণ স্নায়ু বা নার্ভ উত্তেজিত হওয়া। সব স্নায়ু উত্তেজিত হলে নিউরোট্রান্সমিটার 'এড্রেনালিন' ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে বেড়ে যায় রক্তচাপ, ঘুমে সমস্যা, কমে যায় ক্ষুধা এবং বুক ধড়ফড় করা অনুভূত হয়।

প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা যায়, কেউ স্ট্রেসের মধ্যে থাকলে তার আইকিউ লেভেল কমে যায়। কোনো পরীক্ষার আগে স্ট্রেসে থাকার কারণে পরীক্ষার্থীর মনে রাখার দক্ষতা কমে যায়।

প্রাকৃতিকভাবেই আমাদের শরীর এবং মনের জন্য স্ট্রেস একটি এলার্মিং সিস্টেম হিসেবে কাজ করে। স্ট্রেস অনুভব করলে আমাদের শরীর ফাইট অ্যান্ড ফ্লাইট রেসপন্সে (অ্যাকিউট স্ট্রেস রেসপন্স নামেও পরিচিত, একটি শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়াকে বোঝায় যখন আমরা এমন কিছুর উপস্থিতিতে থাকি যা মানসিক বা শারীরিকভাবে আতঙ্কের) চলে যায় এবং তারপর শরীর একটি স্বয়ংক্রিয় শিথিল পর্যায়ে আসে। কিন্তু বর্তমানে টিভি, সোশ্যাল মিডিয়া, সংবাদ কিংবা আমাদের সাধারণ জীবনযাপন নিয়মিত স্ট্রেস নিয়ে আসতে পারে। যার কারণে এই স্ট্রেস নামক এলার্মটা বন্ধ হওয়ার সুযোগ পায়না।

এক কথায় বলা যায়, স্ট্রেস হচ্ছে কারণ। আর ডিপ্রেশন ও দুশ্চিন্তা হলো তার প্রভাব। ডিপ্রেশন মনের সঙ্গে শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

স্ট্রেসের জন্য হতে পারে

দুশ্চিন্তা অর্থাৎ আশঙ্কা, ভীতি, ভয়, চিন্তা, দুর্ভাবনা।

ডিপ্রেশনের জন্য হতে পারে

কোনো কাজে উৎসাহ না থাকা বা ল্যাক অফ এনার্জি, অবসাদ বা ক্লান্তি। আবার ঘুম না আসা বা ইনসমনিয়া হতে পারে দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন- দুটোর জন্যই।

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট করতে জানা অনেক প্রয়োজন। স্ট্রেসকে এমন একটা পর্যায়ে চলে যেতে দেওয়া যাবে না যাতে করে মেডিকেল সহায়তা নিতে হয় কিংবা জীবনকে অপ্রীতিকর অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট হলো স্ট্রেসের সঙ্গে মোকাবিলা করা। এর জন্য বাড়াতে হবে নিজের কোপিং স্কিলস। কোপিং স্কিলগুলোকে বাড়ানোর প্রধান উপায় হচ্ছে নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে ইতিবাচক করা।

স্ট্রেসের কবলে পড়লে কয়েকটি ধাপ মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে।

প্রথমত, স্ট্রেসকে চিহ্নিত করতে হবে। তাহলেই স্ট্রেস থেকে মুক্তির প্রথম ধাপ অতিক্রম করা যাবে। মনস্তাত্ত্বিক যেকোনো সমস্যার ক্ষেত্রে যারা বুঝতে পারে সমস্যা হচ্ছে এবং সমাধান প্রয়োজন, তারা মনের জোরেই অনেকটা আরোগ্য লাভ করে।

দ্বিতীয়ত, স্ট্রেস মনিটর করা। অর্থাৎ কেন, কোথা থেকে, কী কারণে নিজের উপর স্ট্রেস বেশি আসছে সেটা খুঁজে বের করা।

তৃতীয়ত, এক্ষেত্রে কেউ তার বাস্তবতাকে পরিবর্তন করতে পারছে কিনা অর্থাৎ ভেবে নেওয়া আমি কি আমার বাস্তবতাকে পরিবর্তন করতে পারবো নাকি পারবো না। যে নিজের স্ট্রেসকে মোকাবিলা করার জন্য নিজের চিন্তা ধারাকে একটি আশাবাদী রূপ দিয়ে বদলাতে চেষ্টা করে সেই সফল। আর যে নিজের দুঃখবোধ-ডিপ্রেশনকে বদলাতে চায় না সে হয়ে যায় দুর্বল এবং ব্যর্থ।

হঠাৎ জ্বর হলে কিংবা কাশি হলে আমরা যেমন কিছু সাধারণ প্রতিষেধকের আশ্রয় নেই তেমনি স্ট্রেসকে প্রাথমিকভাবে সারানোর জন্য কিছু ইতিবাচক চিন্তাভাবনা, ধারণা, সুন্দর এবং সামগ্রিক বিশ্বাস রাখা প্রয়োজন।

এই ইতিবাচক চিন্তা স্ট্রেস চলাকালীন সময়ের চেয়ে রিলাক্স এবং আনন্দের অনুভূতিতে থাকাকালীন সময়ে বেশি কার্যকরী। কারণ তখন আমাদের বুঝতে সহজ হয় যে, জীবনের সুখ এবং দুঃখ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আমরা পৃথিবীতে আছি  জীবনের উত্থান এবং পতনের মধ্য দিয়ে। নিরবিচ্ছিন্ন সুখ কিংবা দুঃখবোধ কোনোটাই স্থায়ী হয় না। সুখের পরে দুঃখের অনুভূতিতে আসলে তখন কী করা উচিত এটা আগে ভেবে রাখাও স্ট্রেস মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অর্থাৎ একটি নেতিবাচক চিন্তার সঙ্গে একটি ইতিবাচক চিন্তার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। এভাবে একসময় ভালো এবং ইতিবাচক চিন্তা খারাপ চিন্তাগুলোকে সরিয়ে দিতে সাহায্য করে। একসময় খারাপ চিন্তার প্রভাব জীবনে কমে যাবে।

এছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে পাওয়া স্ট্রেসগুলোকে বুদ্ধি এবং ধৈর্য্য সহকারে মোকাবিলা করতে হবে। তাহলে জীবনে যখন কোনো বড় ধাক্কা আসবে তখন মন, মনন এবং চিন্তাকে আগে থেকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া থাকবে। সে অনুযায়ী প্রস্তুত ও থাকবে।

ডিপ্রেশন আমাদের শরীরকে সরাসরি প্রভাবিত করে। শরীর ভালো না থাকলে মন ভালো থাকে না। আত্মার যে পরিশুদ্ধি আর তৃপ্তি তা পাওয়া যায় না। স্ট্রেসের দীর্ঘ ফল একসময় আনন্দদায়ক অনুভূতিগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। সবশেষে একটা কথা মনে খুব ভরসা দিতে পারে, 'নাথিং লাস্টস ফরএভার'। খুব আনন্দের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন? এটা মনে রেখে উপভোগ করুন, এটি চিরস্থায়ী নয়। খুব কষ্টের মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন? একই কথা, এটাও চিরস্থায়ী নয়। সময় সবসময় একই থাকবে না।  

Comments

The Daily Star  | English

Mob actions will be handled with an iron hand from now on: Mahfuj

Says 'From now on, we will firmly confront so-called movements and mob demonstrations'

43m ago