পশ্চিমবঙ্গের ২ খাল খনন: দুশ্চিন্তা বাংলাদেশের তিস্তাপাড়ে

তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টেও তেমন পানি নেই। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের আওতায় আরও ২টি খাল খননের যে উদ্যোগ নিয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার, তা বাস্তবায়িত হলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ আরও বেশি পানির সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিস্তাপাড়ের কৃষকরা।

কৃষকদের ভাষ্য, তিস্তার উজানে আরও ২টি খাল খননের মাধ্যমে ভারত তাদের আবাদি জমির পরিমাণ বাড়াবে। এ অবস্থায় শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা থেকে এখন যতটুকু সেচের পানি পাওয়া যায়, আগামীতে সেটুকুও পাওয়া যাবে না।

গত শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই উদ্যোগের ভেতর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলার আরও কৃষি জমি সেচের আওতায় আনবে। এতে পানি নিয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা বাড়বে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ১ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই উদ্যোগ নিয়ে ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্য, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এমন উদ্যোগ আন্তর্জাতিক নিয়মবিরুদ্ধ ও নৈতিকতাবিরুদ্ধ। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সেচের অভাবে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ব্যহত হবে। এছাড়া তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে ২ দেশের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব চলমান আছে, সেটাও বাড়বে।

তিস্তার মোট দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারীর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অংশের দৈর্ঘ্য ১১৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে তিস্তা সেচ প্রকল্পের ব্যারাজের উজানে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার আর প্রায় ৭০ কিলোমিটার ভাটিতে। এ অংশ কখনো কখনো একেবারেই শুকিয়ে যায়। বাংলাদেশ অংশে মার্চ-এপ্রিল মাসে ভারত থেকে কখনো কখনো নামমাত্র পানি আসে।

লালমনিরহাটে তিস্তাপাড়ের কৃষক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন জানা যায়, বাংলাদেশ অংশে ১১৫ কিলোমিটার তিস্তার ‍বুকে এখন শুধু মাইলের পর মাইল বালুচর। এ কারণে তিস্তাপাড়ের মানুষকে দূর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। লালমনিবরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় উজানে ১৩ কিলোমিটার অংশে সামান্য কিছু পানি থাকলেও ভাটিতে ১০২ কিলোমিটার অংশে পানি নেই বললেই চলে।

এতে বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীর ওপর নির্ভরশীল জেলে ও মাঝিরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। নদীতে পানি না থাকায় নৌকা চলতে পারছে না তারা। এ কারণে তিস্তাপাড়ের মানুষকে পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল বালুচর পাড়ি দিতে হচ্ছে। মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার চর রাজপুর গ্রামের কৃষক নহেন্দ্র নাথ বর্মণ (৬৭) জানান, শুস্ক মৌসুমে তিস্তা নদী থেকে তারা পর্যাপ্ত সেচের পানি পান না। তাই তিস্তার বুকে ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন বসিয়ে সেচের পানি সংগ্রহ করে চাষাবাদ করতে হয় তাদের। তিনি বলেন, 'উজাতে ভারত খাল খনন করলে শুস্ক মৌসুমে আমরা যেটুকু পানি পাই, সেটুকু পানিও আর পাবো না।'

চর কালমাটি এলাকার কৃষক আজগর আলী মন্ডলের (৭০) ভাষ্য, 'ভারত আরও খাল খনন করে যদি তিস্তার পানি আটকে রাখে তাহলে ভাটিতে তিন্তাপাড়ের কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়তে হবে। এখন যে পরিমাণ জমিতে চাষাবাদ করতে পারছি, ভবিষ্যতে তা আরও কমে যাবে। কমে ‍যাবে ফসল উৎপাদন।'

একই আশঙ্কার কথা বলেন 'তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ'র লালমনিরহাট জেলা ইউনিটের সভাপতি শফিকুল ইসলাম।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জানুয়ারি মাস থেকে তিস্তা ব্যারেজে ১২০০-১৫০০ কিউসেক পানি পাওয়া যাচ্ছে। সেচের পানি সরবরাহের জন্য এখানে কমপক্ষে ৩ হাজার ৫০০ কিউসেক পানি সরবরাহ প্রয়োজন। যেটুকু পানি পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে কোনোরকমে সেচের পানি সরবরাহের কাজ চলছে।'

শুষ্ক মৌসুমে গত কয়েকবছর ধরে পানি সরবরাহের একই চিত্র দেখা যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, 'এমনিতেই আমরা চুক্তি অনুসারে পানি পাচ্ছি না। এখন যেটুকু পানি পাচ্ছি, তা প্রাকৃতিকভাবেই পাওয়া যায়। এখন যদি ভারত উজানে আরও ২টি খাল খনন করে, সেটা অবশ্যই বাংলাদেশ পানি প্রবাহের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English
Apparel Buyers Delay Price Increases Post-Wage Hike Promise

Garment exports to US grow 17%

Bangladesh shipped apparels worth $5.74 billion in the July-March period to the USA

6h ago