বিভিন্ন দেশের বাহারি ইফতার

বিভিন্ন দেশের বাহারি ইফতার
ছবি: রয়টার্স

শুরু হয়ে গেছে রমজান মাস। রোজা রাখার পর একটি বিশেষ আনন্দের মুহূর্ত হচ্ছে ইফতার। তবে ইফতার গ্রহণের ক্ষেত্রে অঞ্চল ও সংস্কৃতিভেদে রয়েছে বেশ কিছু বৈচিত্র্য।

বিভিন্ন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের বাহারি ইফতার নিয়েই এই লেখা।

আরব

সৌদি আরবে প্রতিদিন লাখো মুসলিম একসঙ্গে বসে ইফতার করেন। ইফতারের তালিকায় থাকে বহু মুখরোচক খাবার। নানা ধরনের হালুয়া আরবের ইফতারে অন্যতম প্রধান বিষয়। এছাড়াও থাকে ২ ধরনের রুটি। বড় রুটিটিকে বলা হয় 'তমিজ', অপেক্ষাকৃত ছোট ও ভারি রুটির নাম 'খবুজ'। থাকে 'সাম্বুচা' নামের একটি খাবারও। যার সঙ্গে নাম ও ধরনের মিল রয়েছে আমাদের অতি পরিচিত সমুচার। এই সমুচায় মরিচ ছাড়াই মাংসের কিমা ভর্তি থাকে। ঝাল-মিষ্টির সঙ্গে স্বাস্থ্যের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সালাতা নামের সালাদটিও আরব দেশের ইফতারে অন্য মাত্রা যোগ করে। তাছাড়া পানীয় হিসেবে সরবা বা শরবত আর দুগ্ধজাত লাবান তো থাকেই।

ইরান

ইরানিরা ঐতিহ্যগতভাবে ইফতারে খেজুর সঙ্গে এক কাপ চা অথবা গরম পানি পান করেন। চা, রুটি, পনির, সতেজ শাক-সবজি খান তারা। এছাড়া মিষ্টির তালিকায় থাকে জুলবিয়া ও বামিহ নামের ২টি ঐতিহ্যবাহী পার্সিয়ান মিষ্টি। চিনির শিরাতে ডোবানো থাকে এই মিষ্টিগুলো। ইরানে তৈরি করা এক বিশেষ ধরনের স্যুপও ইফতারের সময় বেশ প্রচলিত। অ্যাশ রেশতেহ নামে এই স্যুপে থাকে চিকন নুডলস, দুগ্ধজাত মাঠার মতো জলীয় দ্রবণ এবং সঙ্গে পার্সলে, পালং, পেঁয়াজের মতো অন্যান্য উপাদান। বুটের ডাল ও মাংস সহযোগে তৈরি শামি কাবাবও ইরানি ইফতারের অন্যতম জনপ্রিয় একটি উপাদান।

মিশর

মিশরে ইফতারের জন্য তৈরি বিশেষ রুটি। ছবি: রয়টার্স

উষ্ণ আবহাওয়ার অঞ্চল হবার কারণে মিশরে ইফতারে শীতল পানীয় ও সতেজ ফলমূলের বিশেষ কদর রয়েছে। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের কুনাফা নামের মিষ্টিজাতীয় খাবারটি মিশরে ইফতার হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই খাবারটি চাইলে খুব সহজে লাচ্ছা সেমাই দিয়ে তৈরি করা যায়। ইফতারের সময় ইসলাম ধর্মাবলম্বী মিশরবাসীরা রং-বেরঙের বাহারি বাতি জ্বালায়। বেশিরভাগ ঘরে রোজা ভাঙা হয় বাদামি রুটির সঙ্গে 'ফুল মেডামেস' বা ফাভা বিনের তৈরি একটি তরকারি দিয়ে। পানীয়র জন্য অ্যাপ্রিকট বা খুবানির খোসা ব্যবহার করা হয়। ইফতারের কিছুক্ষণ আগে শরবত তৈরি করা হয়। শরবতটির বিশেষ নাম হচ্ছে 'কামার আল-দ্বীন', যার অর্থ 'ধর্মের চাঁদ'।

সোমালিয়া

সোমালিয়াতে ইফতারে তালিকার শীর্ষে থাকে উটের মাংস। উটের মাংস ও দুধ অত্যন্ত সমৃদ্ধ বলে বিশ্বাস সোমালিয়াবাসীদের। যাযাবর জীবনযাত্রায় 'ওটকা' নামক একটি খাদ্যদ্রব্য তাদের বেশ পছন্দ। যেটিকে উটের মাংসের শুঁটকি বললে ভুল হবে না। ইফতারেও এই খাদ্যটি এই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে বেশ প্রচলিত।

আফগানিস্তান

আফগানিস্তানে ইফতার তালিকায় থাকে একধরনের বিশেষ স্যুপ বা সুরওয়া, ভেড়ার মাংসের দোপেঁয়াজা, কোরমা-এ-মুরগ বা মুরগির কোর্মা, কোর্মা-এ-গোশফান্দ বা খাসির কোরমা, বিভিন্ন ধরনের পাকোড়া, মিষ্টি হিসেবে শিরনি বা খোরমা ইত্যাদি খাবার। মান্টু নামে আরেকটি বিশেষ পদ থাকে। এটি মূলত ভাপে রান্না করা পেঁয়াজ আর মুরগির পুর ভর্তি ডাম্পলিং। এছাড়াও নামে ও স্বাদে আফগানি আমেজ বজায় রাখতে ইফতারে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে কাবুলি পোলাও থাকে।

তুরস্ক

তুরস্কে ইফতার। ছবি: রয়টার্স

তুরস্কে রমজান মাসের সময়সূচি নিয়ে এতটাই সচেতন থাকা হয় যে নিয়ম করে সেহরি ও ইফতারের সময় ঢোল-দামামা, ড্রামের শব্দ, এমনকি কামানের আওয়াজও করা হয়। রমজানে প্রতিদিন ৩ বার তোপধ্বনি একধরনের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময়ের ভুলে যাতে কারো সেহরি বা ইফতার বাদ না পড়ে, সেজন্যই এত আয়োজন। অন্য প্রায় সব জায়গায় ইফতারের শুরুটা সবসময় খেজুর দিয়ে হলেও তুরস্কে নিয়মটা একটু আলাদা। জলপাই দিয়েও ইফতার করেন অনেক তুর্কী। তবে সঙ্গে অনেকে খেজুরও খান। জলপাই ও জলপাই তেল তুরস্কের খাদ্যতালিকায় গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। ইফতারে থাকে জলপাই ও পনির দিয়ে তৈরি মিষ্টিজাতীয় খাবারও।

পাকিস্তান

পাকিস্তানে ইফতার। ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানিরা ইফতারে বেশ ভারি খাবার খেয়ে থাকেন। এর মধ্যে ভাজাপোড়ার পরিমাণও অনেক। সমুচা, তেলে ভাজা পাকোড়া, নিমকিজাতীয় নামাক পাড়া, ছোলা চাট, বিভিন্ন ধরনের কাবাব, দাহি ভাল্লা ইত্যাদি খাবার পাকিস্তানি ইফতারে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও পানীয় হিসেবে রুহ আফজার কদর এ দেশে সবচেয়ে বেশি। অনেকে অবশ্য স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারও পছন্দ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Thailand sees growing influx of patients from Bangladesh

Bangladeshi patients searching for better healthcare than that available at home are increasingly travelling to Thailand instead of India as the neighbouring country is limiting visa issuances for Bangladeshi nationals.

13h ago