রমজানের খাদ্যাভ্যাস

রমজান, সাহরি, ইফতার,
ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাইদ

মুসলিমদের পবিত্র মাস মাহে রমজান শুরু হয়েছে। প্রতি বছরের এ মাসে সমগ্র বিশ্বের মুসলিমরা রোজা পালন করেন। ১১ মাস পর এ সময়ে রোজাদারদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রায় হঠাৎ বেশ পরিবর্তন আসে। তাই পরিবারের যারা নিয়মিত রোজা রাখেন তাদের খাদ্য গ্রহণ ও স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

রমজান মাসে খাবার গ্রহণের দুটি বিশেষ সময় হলো সেহরি ও ইফতার। সেহরি ও ইফতারের খাবার নির্বাচনে রোজাদারের বয়স ও শারীরিক অবস্থাকে বিবেচনায় রাখতে হবে।

ইফতারে খাদ্যাভ্যাস

সাধারণত লেবুর শরবত আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি। তাই ইফতারে লেবুর শরবত রাখতে পারেন। তবে, শরবতে কৃত্রিম রঙ মেশাবেন না। বাজারে অনেক কৃত্রিম রঙ মেশানো শরবত পাওয়া যায়, সেসব অবশ্যই পরিহার করতে হবে। রঙ মেশানে শরবত আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

ইফতারে ফলের রস রাখতে পারেন বা যেকোনো একটি ফল খেতে পারেন। কারণ ফলে থাকা প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ শরীরকে সতেজ রাখতে সহায়তা রাখতে। এছাড়া ইফতারের আইটেমে ছোলা, মুড়ি, দই, চিঁড়া ও কলা রাখতে পারেন। তবে, ভাজা আইটেম এড়িয়ে চলা ভালো।

খেজুর হতে পারে ইফতারের একটি অন্যতম খাবার। খেজুর হচ্ছে চিনি, তন্তু বা ফাইবার, শর্করা, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়ামের উৎস। ইফতারে খেজুর খেলে শরীরকে দ্রুত চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তবে, এর সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। আবার অনেকের ঝাল খাবারের প্রতি আগ্রহ থাকে। তারা সবজি ও ডিম দিয়ে নুডলস রাখতে পারেন।

সেহরির খাদ্যাভ্যাস

রোজা রাখতে সেহরির খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় অবশ্যই সহজপাচ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। রোজায় দীর্ঘ সময় উপবাস থাকতে হয় বলে সেহরিতে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বা জটিল শর্করা গ্রহণ করা উচিত। এই জটিল শর্করা ধীরে ধীওে  হজম হয়। ফলে, দিনের বেলা ক্ষুধা কম অনুভূত হয়। এসব খাবারের মধ্যে আছে- শস্যদানা বা বীজজাতীয় খাবার, অপরিশোধিত বা ননরিফাইনড আটা, ময়দা এবং ঢেঁকিছাঁটা চাল। সেহরিতে ভাতের সঙ্গে রাখতে হবে উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। যেমন- মাছ, মাংস ও ডিম। ডাল উদ্ভিজ প্রোটিন বলে এতে ক্ষতিকর চর্বি নেই। সেহরির খাবার তালিকায় যেকোনো একটি সবজি থাকা জরুরি।

রোজায় সেহরি এবং ইফতার ছাড়া আরও কিছু বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হেব। সেগুলো হলো-

পরিমিত পানি পান

রোজায় দীর্ঘ সময় উপবাসের কারণে শরীরে পানির চাহিদা বেশি থাকে। সেহরি খাওয়ার পর যেন ৩-৪ গ্লাস পানি খেতে পারবেন এমন সময় হাতে রেখে খাবার গ্রহণ করুন। আবার ইফতারির পর থেকে সেহরি পর্যন্ত  ৭-৮ গ্লাস পানি পান করুন। এতে অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেবে না।

সেহরির পর চা-ক্যাফেইন নয়

সেহরির পর অনেকেই চা পান করেন। চা অনেক উপকারি হলেও চায়ের ক্যাফেইন প্রসাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরে খনিজ লবণ ও পানিস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। তাই সেহরির পর চা বা কফি এড়িয়ে চলা ভালো। বরং সেহরির পর কলা খাওয়া যেতে পারে। কলায় আছে- পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং কার্বোহাইড্রেট। তবে, যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে তারা কলার সঙ্গে আঁশজাতীয় খাবার খেতে পারেন।

তেল-চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করুন

তেলে ভাজা খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। পুরনো তেলে ভাজা খাবার স্বাস্থ্যে জন্য অনেক ক্ষতিকর। তেল বারবার গরম করলে ক্ষতিকর পলিনিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন তৈরি হয়, এতে থাকে বেনজোপাইরিন। তেলে ভাজা খাবারের পরিবর্তে ফল দিয়ে তৈরি সালাদ খেতে পারেন। এতে হজমশক্তিও বৃদ্ধি পাবে।

পরিমিত ঘুম

পরিমতি ঘুম খুবই দরকারি। রোজাদারের জন্যও পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যাক্তির প্রতিদিন ৫-৭ ঘন্টা টানা ঘুম প্রয়োজন। এজন্য চেষ্টা করবেন তারাবিহ্ নামাজের পর দ্রুত ঘুমিয়ে যাওয়ার। অনেকেই রাতে না ঘুমিয়ে একবারে সেহরির পরে ঘুমাতে যান, যা একদমই উচিত নয়। আবার অধিক ঘুম রোজা রেখে খুবই ক্ষতিকর। এতে শরীর অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং বদহজম হতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

7h ago