ইন্দোনেশিয়ায় সরকারি কর্মচারীদের ইফতার মাহফিলে নিষেধাজ্ঞা

জাকার্তার গ্র্যান্ড ইস্তিকলাল মসজিদে ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন রোজাদাররা। ফাইল ছবি: রয়টার্স
জাকার্তার গ্র্যান্ড ইস্তিকলাল মসজিদে ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন রোজাদাররা। ফাইল ছবি: রয়টার্স

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমান অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো রমজান মাসে সরকারি কর্মচারীদের ইফতার মাহফিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় দেশটিতে তিনি সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

গতকাল শনিবার ইন্দোনেশিয়ার সংবাদমাধ্যম জাকার্তা পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তারা বিতর্কিত এ সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। 

রমজান শুরুর ২ দিন আগে, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট উইদোদো প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারি কর্মচারীদের ইফতার মাহফিল আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দেন। তিনি একে জরুরি উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, দেশ এখনো করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভা সচিব প্রামোনো আগুং এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে জানান, এটি জনসাধারণের জন্য প্রযোজ্য নয়। এটি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সরকারি সংস্থার প্রধানদের জন্য প্রযোজ্য।

প্রামোনো সরকারের এ নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেন, সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে যে, তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবৈধ পন্থায় উপার্জিত সম্পদের প্রদর্শনী করছেন।

তিনি আরও বলেন, 'এ কারণে কর্মকর্তাদের প্রেসিডেন্ট অনুরোধ করেছেন যেন তারা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দাওয়াত না দিয়ে সীমিত আকারে ইফতারের আয়োজন করেন।'

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট উইদোদো। ছবি: রয়টার্স
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট উইদোদো। ছবি: রয়টার্স

গত ফেব্রুয়ারি থেকে কর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান চলছে। একজন মধ্যম পর্যায়ের কর কর্মকর্তার ছেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও বিত্ত প্রদর্শন করলে নতুন করে সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। দেশের শীর্ষ কর কর্মকর্তাদের আয়ের উৎস নিয়ে সর্বস্তরে জনরোষ দেখা দেয়।

অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আয়কর রিটার্ন জমা না দেওয়ার আহ্বান জানান।

ইফতার নিয়ে এই নির্দেশনার সমালোচনা করেছে দেশটির ইসলামি দলগুলো। তারা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দেশের মুসলিমদের স্বার্থবিরোধী কাজের অভিযোগ এনেছে।

দলগুলো উল্লেখ করেছে, মহামারি সংক্রান্ত বিধিনিষেধগুলো ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক বড় বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে, যেগুলোয় অসংখ্য মানুষ এক জায়গায় জমায়েত হয়েছেন।

উদাহরণ হিসেবে প্রেসিডেন্টের সন্তানসহ অনেকের বিয়ের অনুষ্ঠান, কনসার্ট ও প্রদর্শনীর কথা জানায় দলগুলো।

ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে বড় মুসলিম সংস্থা নাহদলাতুল উলামার (এনইউ) সভাপতি ইয়াহিয়া চোলিল স্তাকুফ এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলেন, মুসলমানদের রোজা ভাঙার জন্য বড় উৎসব আয়োজনের প্রয়োজন নেই।'

তিনি বলেন, 'দরিদ্র মানুষ অথবা যারা যানজটে আটকে আছেন, তাদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমন কিছু করার প্রয়োজন নেই যা দেখে মনে হতে পারে আমরা ইফতার নয়, বরং বড় আকারের নৈশভোজে যোগ দিতে যাচ্ছি।'

ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়গুলো প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছে।

ইন্দোনেশিয়ার ধর্মমন্ত্রী ইয়াকুত চোলিল কোমাস প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'প্রেসিডেন্ট উইদোদো ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতিশীল।'

প্রেসিডেন্ট উইদোদোর জন্ম মুসলিম পরিবারে। তিনি নিজেকে ইসলাম ধর্মাবলম্বী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

5h ago